অন্যান্য

গরুর ভুড়ি কিনতে ১৪ বছর ধরে বাইক চালিয়ে ঝিনাইদহে আসেন রত্না

ঝিনাইদহের চোখ-
স্বামী অনেক আগেই ছেড়ে চলে গেছেন। মা ও এক সন্তান নিয়ে ভাড়াবাড়িতে বসবাস। ছেলের পড়ালেখার খরচসহ সংসারের খরচ চালান তিনি। এ জন্য প্রতিদিন ভোরে মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হয়। প্রায় ৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে যশোর থেকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরে আসেন তিনি। সেখান থেকে পণ্য মোটরসাইকেলে বয়ে নিয়ে গিয়ে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেন। বলছিলাম ৪০ বছর বয়সী এমনই এক সংগ্রামী নারী রত্না বেগমের কথা। রত্না বেগম যশোরের টালিখোলা এলাকার মৃত সিদ্দিক সরদারের মেয়ে।

রত্না বেগম জানান, ছয় বোনের সবার বড় তিনি। যশোর শহরের টালিখোলায় একটি ভাড়া বাড়িতে এক সন্তান আর মাকে নিয়ে থাকেন। ১৭ বছর বয়সে বিয়ে হয় যশোর সদর উপজেলার অ্যাড়েন্দা গ্রামে। ছেলের বয়স যখন আট বছর তখন স্বামী ছেড়ে চলে যায়। জমি বলতে কিছু নেই। এরপর উপায় না পেয়ে বাড়ির পাশে গড়ে তুলেছেন তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সেখানে তিনি গরুর মাথা ও ভুড়ি বিক্রি করেন। এ ছাড়া যদি কেউ গরুর মাংসের অর্ডার করেন, তা হলে সেদিন গরু কিনে জবাই দেন।

তিনি আরও জানান, গরুর মাথা ও ভুড়ি সংগ্রহ করতে তিনি নিজে মোটরসাইকেল চালিয়ে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে আসেন। এর পর সেখান থেকে গরুর মাথা ও ভুড়ি কিনে আবার ফিরে যান তার নিজ শহরের প্রতিষ্ঠানে। সেখানে নিয়ে সেগুলো বিক্রি করেন। এখান থেকে লাভের টাকা দিয়েই চলে মা আর একমাত্র ছেলেকে নিয়ে সংসার। এভাবেই চলছে ১৪ বছর ধরে রত্নার ব্যবসা। তার ছেলের বয়স এখন ১৯ বছর। তিনি যশোরের একটি পলিটেকনিক কলেজে ডিপ্লোমা করছেন।

গত সাত বছর এভাবেই তিনি প্রতিদিন যশোর থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে কালীগঞ্জ এসে গরুর মাথা ও ভুড়ি ক্রয় করেন। এক বছর আগে ড্রাইভিং লাইসেন্সও করে নেন।

কালীগঞ্জ নতুন বাজারের মাংস ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান জানান, রত্না দীর্ঘদিন ধরেই ভুড়ি ও গরুর মাথা কিনে নিয়ে যান। আগে বাসে করে আসতেন। এখন মোটরসাইকেল চালিয়ে আসেন। গরুর ভুড়ি ও মাথা কিনে বাসে উঠিয়ে দিয়ে রত্না তার নিজের মোটর বাইকে চড়ে যশোর ফিরে যান। রতনা আপা খুব ভালো মানুষ। তার কাজে যথাসম্ভব সহযোগিতা করা হয় বলেও জানান তিনি।

আক্ষেপ করে রত্না বেগম বলেন, কালীগঞ্জে যাওয়া-আসার সুবাদে এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয়। ওই যুবক তার কোনো স্ত্রী ও সন্তান নেই জানিয়ে আমাকে বিয়ে করেন। পরে জানতে পারি তার স্ত্রী ও সন্তান সবই আছে। এর পর তার আগের স্ত্রী ব্র্যাকের সালিশকেন্দ্রে অভিযোগ করেন। সেখানে বিচার হয়। বিচারে আমার স্বামীকে প্রথম স্ত্রীর ভোরণপোষণ বাবদ মাসে ৮ হাজার টাকা দেওয়ার রায় দেন। এ টাকা আমিই পরিশোধ করতাম। বর্তমানে আমার এই সামান্য ব্যবসা থেকে এত টাকার জোগান আর দিতে পারছি না। এখন তার সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button