জানা-অজানাদেখা-অদেখাশৈলকুপা

ঝিনাইদহে গ্রামগুলোকে এখন বেল গ্রাম, কুল গ্রাম, নারকেল গ্রাম নামে ডাকে

রামিম হাসান, শৈলকুপা, ঝিনাইদহের চোখ-

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার সারুটিয়া ইউপির গোসাইডাঙ্গা গ্রামের রাস্তার ধারে, বাড়ির আঙিনায়, পরিত্যক্ত জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য তেঁতুলগাছ। সাত বছর আগে লাগানো গাছগুলোয় তেঁতুল আসতে শুরু করেছে। এক গ্রামে এত তেঁতুলগাছ দেখে অনেকে একে তেঁতুলগ্রাম নামেও ডাকে। দেশি ফলের গাছে ছাওয়া গ্রাম আরো আছে।

পুরাতন বাখরবা গ্রামটিতে আছে কুলগাছ। শাহবাড়িয়ায় আছে প্রচুর বেলগাছ। আর ভাটবাড়িয়া গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই লাগানো হয়েছে নারকেলগাছ। স্থানীয় লোকজন গ্রামগুলোকে এখন বেল গ্রাম, কুল গ্রাম, নারকেল গ্রাম নামেও ডাকে।

গ্রামের পর গ্রাম দেশি ফলের গাছের এই সমারোহ কোত্থেকে এল—সেই তথ্য তালাশ করতে গিয়ে সরকারি একটি প্রকল্প ও এক কৃষি কর্মকর্তার খোঁজ পাওয়া গেল। বছর সাতেক আগে সারুটিয়া কৃষি ব্লকের সাবেক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মসলেহ উদ্দীন ওরফে তুহিন গাছগুলো রোপণ করেছিলেন।

প্রতিটি গ্রামের মাটি, পানি ও বায়ু যে ফলের উপযোগী তা পরখ করে; আর যে গ্রামে যে ফলের ঘাটতি আছে, তা বিবেচনায় নিয়ে চার গ্রামে চার ধরনের দেশি ফলের গাছ লাগিয়েছিলেন।

বৃহত্তর যশোর ও কুষ্টিয়া কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে গ্রামে গ্রামে দেশি ফলের গাছ লাগিয়েছিলেন মসলেহ উদ্দীন। ওই প্রকল্পের আওতায় চারটি গ্রাম ছাড়াও বিগত চার বছরে যশোর অঞ্চলের ৬ জেলার ৩১টি উপজেলায় ১৮৬টি শজনে গ্রাম, ২১৭টি কাঁচকলা গ্রাম এবং ১৮৬টি কুল গ্রাম বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

মসলেহ উদ্দীনের বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বারইপাড়া গ্রামে। এখন তিনি ঝিনাইদহের কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের উপসহকারী প্রশিক্ষক পদে কর্মরত। সম্প্রতি কথা হয় তার সঙ্গে।

তিনি জানান, ২০০৮ সালে কৃষি বিভাগে চাকরি নিয়েছেন। ২০১৫ সালে গ্রামের মানুষের মধ্যে চারা বিতরণের একটি প্রকল্প পেয়ে যান তিনি। বৃহত্তর যশোর–কুষ্টিয়া কৃষি উন্নয়ন নামে ওই প্রকল্পে ফলের গ্রাম গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন।

তিনি সেটাকে কাজে লাগিয়ে গ্রাম যাচাই করে ফলের গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন এবং গ্রামভিত্তিক ফলদ ও বনজ গাছ লাগানো শুরু করেন। এলাকার মাটি, পানি, আবহাওয়া ও কোনো গ্রামে কোন ফলের গাছ কম, তা বিবেচনা করে গ্রামে গ্রামে গাছের চারা বিতরণ শুরু করেন। পরের তিন বছর চারটি গ্রামে গাছ লাগাতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেন। তাদের মধ্যে চারা বিতরণ করেন। যার ফল খাচ্ছেন প্রতিটি পরিবারের উপকারভোগীরা।

মসলেহ উদ্দীন সারুটিয়া ব্লকের পুরাতন বাখরবা গ্রামে ৩০০ কুলগাছ , গোসাইডাঙ্গা গ্রামে ৩০০ তেঁতুলগাছ, শাহবাড়িয়ায় ২৫০ বেলগাছ ও ভাটবাড়িয়ায় ২০০ নারকেলগাছ দেওয়া হয়। গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব গ্রামে লাগানো ৫০ শতাংশ ফলের গাছ এখনো টিকে আছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে গোসাইডাঙ্গা গ্রামে দেখা যায়, রাস্তার ধারে আর বাড়ির আঙিনায় বড় হচ্ছে তেঁতুলগাছ। অনেক গাছে তেঁতুল আসতে শুরু করেছে।

আলমগীর জলিল জানান, ২০১৫ সালে কৃষি বিভাগের ওই কর্মকর্তা গ্রাম ঘুরে দেখেন। এরপর তাদের তেঁতুলগাছের চারা দেন। তারা ওই কর্মকর্তার অনুরোধে তেঁতুলের চারা লাগান। তার বাড়িতে এখনো গাছ রয়েছে। যে গাছে তেঁতুল ধরেছে।

একই ব্লকের চর বাখরবা গ্রামের আমিরুল ইসলাম জানান, কৃষি কর্মকর্তা মসলেহ উদ্দীনের মাধ্যমে চারা পেয়ে গ্রামের সব পরিবারই কুলের গাছ লাগিয়েছিল। অনেক গাছে কুল এসেছে, গাছগুলোও বড় হয়েছে। তবে অনেক গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন তাদের গ্রামের লোকজন দেশি কুল (বরই) পাচ্ছেন।

একই গ্রামের মিল্টন হোসেন জানান, সব বাড়িতে কুলগাছ লাগানোর কারণে অনেকে গ্রামটিকে কুল গ্রাম হিসেবেও ডাকে।

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আজগার আলী বলেন, গ্রামের প্রতিটি পরিবারে এক জাতের ফল থাকবে, সবাই সেটা খেতে পারবে। এটা খুব ভালো কাজ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button