ঝিনাইদহ সদরটপ লিড

খনন না করলে ঝিনাইদহের নদনদীগুলো বাঁচবে না

ঝিনাইদহের চোখ-

পশ্চিমের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদনদীগুলো আজ মৃতপ্রায়। মানুষ সৃষ্ঠ কারণে পশ্চিমাঞ্চলের কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও যশোর জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদনদীগুলো মরে যাচ্ছে। বন্ধ হয়ে গেছে এসব নদীর পানির উত্সগুলো। নদনদীগুলো যেটুকু টিকে আছে, তাও বৃষ্টির পানির কল্যাণে। তবে, এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় নদনদীগুলো প্রাণহীন হয়ে পড়েছে। এতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, পশ্চিমের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদনদীগুলোর পানির উত্স ছিল পদ্মা, গড়াই ও মাথাভাঙ্গা নদী। জি কে প্রকল্প বাস্তবায়নকালে কুমার নদের এবং কালী ও ডাকুয়া নদীর উত্সমুখে বাঁধ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের কুমার নদের পানির প্রধান উত্স ছিল মাথাভাঙ্গা। চুয়াডাঙ্গা জেলার হাটবোয়ালিয়াতে কুমারের উত্সমুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পরও কুমার নদ কালী, ডাকুয়া ও সাগরখালী নদীর মাধ্যমে প্রবাহ পেত। কালী ও ডাকুয়া পানি পেত গড়াই থেকে । কিন্তু জি কে প্রকল্প বাস্তবায়নকালে এ দুটি নদীর উত্সমুখও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে মরে গেছে এ চারটি নদনদী। নবগঙ্গা নদীর পানির উত্সও ছিল মাথাভাঙ্গা। উত্সমুখে বাঁধ দেওয়ায় এ নদীর পানিপ্রবাহও বন্ধ হয়ে গেছে।

সূত্র আরো জানায়, মৃত নদীর তালিকায় এখন নতুন নাম নবগঙ্গার। চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত মাগুরার ভাটিতে নবগঙ্গা মধুমতীতে মিশেছে। চিত্রার উত্পত্তি আবার মাথাভাঙ্গা থেকে। এ নদীটির উত্সমুখেও বাঁধ দেওয়া হয়েছে। নদীটি চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও নড়াইল জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভাটিতে ভৈরবের সঙ্গে মিশেছে। তবে এ নদী ভাটিতে নাব্য সংকট রয়েছে। ভৈরব নদীর উত্সমুখ মেহেরপুর জেলার কাথুলী সীমান্তের ওপারে ভারতীয় এলাকায় বাঁধ দেওয়ায় এর প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে অপার ভৈরব আজ মৃত। কপোতাক্ষের অবস্থাও একই রকম। এ সমস্ত নদনদীগুলো শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে যায়। নদীর বুকে চাষাবাদ হয়। এতে নদীগুলোর মৃত্যু প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে। তবে বর্ষাকালে বৃষ্টির পানিতে নদীগুলো ভরে নতুন প্রাণ পায়। পদ্মার অন্য শাখা মাথাভাঙ্গা। এটি জীবিত নদী হলেও এবার বর্ষায় পানি নেই। মাথাভাঙ্গায় পানি তলানিতে ঠেকেছে। এ অঞ্চলের অন্য নদী ইছামতি। এটি একটি সীমান্ত নদী। ভারতের নদীয়া জেলা থেকে উত্পত্তি হয়ে সীমান্ত বরাবর চলে বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকেছে। এবার ইছামতিতেও পানি নেই। কয়েক বছর ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে ভৈরব খনন করছে। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিতে খননকৃত অংশে পানি থাকে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে যায়।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আব্দুল হামিদ জানান, এককালে এসব নদনদী জীবিত ছিল। তারপর পানির উত্সমুখ বন্ধ হয়ে নদনদীগুলো এখন মৃতপ্রায়। বর্তমানে নদীগুলোর পানির একমাত্র উত্স বৃষ্টির পানি। তিনি জানান, ভৈরবের উত্সমুখে ভারতীয় অংশে বাঁধ দেওয়ায় পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ভৈরবের বিভিন্ন পয়েন্টে খনন করা হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে অন্যান্য নদনদীগুলো খননের পরিকল্পনা আছে। সীমান্ত নদী মাথাভাঙ্গা খননেরও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button