যুদ্ধে টিকে থাকার লড়াইয়ে কোটচাঁদপুরের তালা কারিগররা
আব্দুল্লাহ বাশার, কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহ চোখ-
আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে পুরাতন ঐতিহ্য । ধনসম্পদ বাড়ি গাড়ি অফিস আদালত নিরাপদ রাখার মাধ্যম হচ্ছে তালা। এ তালা যখন অকেজো কিংবা এর চাবি হারিয়ে যায় তখন মানুষকে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এ অবস্থায় প্রয়োজন পড়ে তালা মেরামত ও চাবি তৈরির কারিগরদের। কিন্ত প্রযুক্তির উন্নয়নে হারিয়ে যাচ্ছে চাবি তৈরি ও তালা মেরামতের কারিগররা। ভালো নেই তালা মেরামত ও চাবি তৈরির কারিগররা।
একসময় ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে এ পেশার কারিগরদের বেশ কদর ছিল। নতুন চাবি তৈরি, অকেজো তালা ও টর্চলাইট মেরামত করে চলতো নিম্ন আয়ের বহু মানুষের জীবন-জীবিকা। বর্তমান রসদ খুঁজে না পাওয়ায় কমেছে এ পেশার মানুষের সংখ্যা।
পৌর শহরের ইসলামি ব্যাংকের সামনের ফুটপাতের তালা মেরামত ও চাবি তৈরি কারিগর মো, কাঠু মিয়া বলেন, বর্তমান প্রযুক্তির যুগে আবিষ্কার হয়েছে ডিজিটালসহ উন্নত ও দীর্ঘস্থায়ী তালা চাবি।
বেড়েছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। এখন পুরাতন তালা-চাবি মেরামত করতে কেউ আসে না বললেই চলে। কারণ একটি তালা মেরামতের চেয়ে নতুন তালা কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। তবুও পৈত্রিক পেশা ধরে রেখেছি।
তালা মেরামত করতে আসা মো, বাবলু বলেন, একসময় এ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে স্থায়ী-অস্থায়ী, ফুটপাত, রাস্তার মোড়ে এ ধরনের মেরামতকারীদের অনেককে দেখা গেলেও বর্তমানে তাদের আর চোখে পড়ে না। হাতে কাজ না থাকায় অনেকে পেশা পরিবর্তন করেছেন।
উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত সালামত মন্ডলের ছেলে ও কোটচাঁদপুর উপজেলা পরিষদের সামনে তালা মেরামতকারী সারুয়ার মন্ডল (৬৫) বলেন, আমি প্রায় ৩৫ বছর যাবত এ পেশার সাথে যুক্ত। একসময় অকেজো টর্চলাইট, কামারি তালা মেরামত ও বাসাবাড়িতে হারিয়ে যাওয়া চাবি তৈরির কাজ করতাম। বর্তমানে কাজ বরতে গেলে একেবারেই নেই।
তিনি আরো বলেন, এখন টর্চ লাইটের স্থান মোবাইল ফোন দখল করে নিয়েছে। ১০/১২ বছর আগে ভালোই কামাই রোজগার হতো। আগে হাতেগোনা কয়েকজন কারিগর ছিলাম। এখন অনেক কারিগর তৈরি হয়েছে। এখন আর আগের মতো হাতে কাজ নেই। কোনদিন ২০০ টাকা আবার কোন দিন ২৫০ টাকা ইনকাম হয়। যা দিয়ে সংসার চলে কোনো রকম। তারপরও পেশার প্রতি মমত্ববোধে আজও এ পেশা ধরে আছি। সংসার জীবনে তিনি তিন কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক বলে জানান।