টপ লিডশৈলকুপা

ঝিনাইদহে শিক্ষক নেতার তেলেসমাতী কারবার

সুলতান আল একরাম, ঝিনাইদহরে চোখঃ

শৈলকূপা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা সমিতির সাধারন সম্পাদক শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে শিক্ষক সমিতির নেতার প্রভাব খাঁটিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসে বদলি বানিজ্য, পিটিআই প্রশিক্ষণে বিপিএড শিক্ষার্থীদের নির্বাচন ও প্রতিটি স্কুলে প্রাক-প্রাথমিকের বরাদ্দের টাকায় স্কুল সাজসজ্জা করে বানিজ্যে এবং সমিতির প্রভাব খাটিয়ে কর্মস্থানে প্রায় উপস্থিত না থাকার অভিযোগ উঠেছে। সে এতটাই প্রভাবশালী যে তার অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। এই শিক্ষক নেতা শৈলকূপা উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের দামুকদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক। তাকে স্কুলে পাওয়া না গেলেও তাকে পাওয়া যায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে। তার অনুমতি ব্যতিত কোন শিক্ষক বদলি হয়ে পারে না সে ক্ষেত্রে সে শিক্ষকদের নিকট থেকে বদলির জন্য একটি অংকের টাকা তাকে দিতে হয়। তাছাড়া দেখা গেছে অনেক শিক্ষক তাকে ঘুষ না দেওয়ার কারনে পিটিআই প্রশিক্ষণের সময় হয়ে গেলেও তাদের না পাঠিয়ে যারা তার সাথে চুক্তি করে তাদের পাঠিয়ে থাকে। যাহা পিটিআই শিক্ষার্থীদের তালিকা দেখলেই বেরিয়ে আসবে।

জানা গেছে এই বাবদ সে জন প্রতি ৫০০০ টাকা করে নিয়ে থাকে। এই খানেই তার ঘুষ বানিজ্য শেষ নয় সে চুক্তি করেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাজ সজ্জার। সরকার প্রতি অর্থ বছর প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণী সাজ সজ্জার জন্য ৫ হাজার করে টাকা বরাদ্দ করে থাকে। এই প্রকল্পে শৈলকূপা উপজেলায় সকল স্কুল সে সাজ সজ্জার ঠিকাদারের দায়িত্ব নিয়েছে এই শিক্ষক নেতা।

যার সাথে স্কুল সাজ সজ্জার চুক্তি হয় তার টাকা চুক্তি মোতাবেক পরিশোধ না করায় সে ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে অভিযোগ করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে।

নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম ঊপজেলার ধানাইদহ গ্রামের রাহায়ান তালুকদারের ছেলে আরিফুল ইসলাম গত ০৬/০১/ ২০১৯ তারিখে ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ করে জানায় যে শৈলকূপার ১১৩টি বিদ্যালয়ে সাজ সজ্জার জন্য তার সাথে ৮৭ টি স্কুলে ৩৬ শত টাকা করে ৩ লক্ষ ১৩ হাজার ২০০ টাকা ও ২৬ টি স্কুলে ৩৪০০ টাকা করে ৮৮৪০০ টাকা মোট ৪ লক্ষ এক হাজার ৬০০ টাকা চুক্তি হয়।

তারমধ্যে সে ৩ লক্ষ ২৪ হাজার ২ শত টাকা পরিশোধ করে বাকি ৭৭ হাজার ৪ শত টাকা প্রায় ৬ মাস যাবত পরিশোধ না করে হয়রানী করছে বলে অভিযোগ করেছে। তার কাজের বিলের টাকা পাওয়ার জন্য সে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। চুক্তি মোতাবেক এই শিক্ষক ঠিকাদার প্রায় ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৪০০ টাকার বানিজ্য করেছে।

দুধসর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুজ্জামান বলে যে আমার স্কুলের শিশু শ্রেণীর সাজ সজ্জার কাজ করেছে নাটোরের আরিফ নামের একজন কিন্ত আমি ৪৫০০ টাকা দিয়েছি শিক্ষক নেতা শরিফুল ইসলামের নিকট। আমাদের সমিতির থেকে দায়িত্ব নিয়ে সকল শিশু শ্রেণী সাজ সজ্জার কাজ করা হয়েছে।

গত রবিবার শিক্ষক শরিফুল ইসলামের অনিয়ম সরেজমিনে ধরা পড়ে। দুই জন সাংবাদিক তার কর্মস্থান দামুকদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোঁজ করতে গেলে তাকে পাওয়া যায় না। তখন স্কুল থেকে তার মোবাইল নাম্বরে কল করলে সে জানায় যে সে শৈলকূপা আছে। স্কুলের হাজিরা খাতায় দেখা যায় গত শনিবারে ও সে স্কুলে আসেনি।আরও জানা যায় সে প্রায় স্কুলে আসে না। এক দিন গিয়ে ২/৩ দিনের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে।

এই ঠিকাদারি ব্যবসা ও অনিয়ম সম্পর্কে শৈলকূপা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক ও দামুকদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শরিফুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে সে বলে যে সকল অভিযোগ মিথ্যা। অফিসে কাজ থাকার জন্য আমি স্কুলে যেতে পারি নাই। তবে আমি প্রধান শিক্ষক কে ফোন করেছিলাম সে ফোন রিসিপ না করায় তাকে জানাতে পারি নাই।

এই প্রসঙ্গে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ইসরাইল হোসেন বলে যে জেলা শিক্ষা অফিসের একটি অভিযোগ করেছে তার কপি আমি পেয়েছি। তবে যখন এই ঘটনা ঘটে তখন আমি ছিলাম না। আমার এখানে পিটিআই প্রশিক্ষণ কিম্বা বদলীতে কার কোন প্রভাব নেই বলে দাবী করলেও একজন শিক্ষক চাকুরী করে এই ধরনের লাভজনক কাজের সাথে থাকতে পারে কিনা এবং এইটি ঠিকাদারি কাজ কিনা অথবা এইটি কোন দুর্নীতি কিনা? তখন সে বলে যে যদি এইটি করে থাকে তার টাকা পরিশোধ করার ব্যবস্থা করব। যখন জানতে চাওয়া হয় যে সেই যদি এই টা পরিশোধ করে তাহলে প্রমানিত হবে যে সে দুর্নীতি করেছে তখন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা? এই প্রশ্ন করলে সে নীরব থাকে। সে বলে যে আমি প্রাক প্রাথমিকের ৫ হাজার টাকা ভ্যাট বাদে সকল স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের হিসাব নম্বরের পাঠিয়ে দিয়েছি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button