ঝিনাইদহে রেললাইন চাই! কেন চাই??
নদীমাতৃক বাংলাদেশের নবগঙ্গা,কুমার,চিএা,ভৈরব এর পলিমাটিতে গড়ে ওঠা,১৯৭৭.৮২ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহর ঝিনাইদহ।যার উত্তরে কুষ্টিয়া জেলা,দক্ষিণে যশোর,পূর্বে মাগুরা,উত্তর -পশ্চিমে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য।
ঐতিহাসিক ঝিনাইদহ জেলার মাতৃক্রোড়ে জন্ম নিয়েছেন লালনশাহ্,পাগলা কানাই,কবি গোলাম মোস্তফা,বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান সহ অনেক জ্ঞানী, গুনী, বাউল,সাধক ব্যক্তিবর্গ।
কিন্ত দু:খজনক হলেও সত্য যে,ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকা সত্বেও ঝিনাইদহ জেলাটি অন্যান্য অনেক সুবিধার মতই রেল সড়কের প্রত্যক্ষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।অত্যন্ত কাঙ্খিত কিন্তু উপেক্ষিত এই দাবিটির প্রাসঙ্গিকতা সংক্ষেপে উপস্থাপন করছি।
প্রথমত, বর্তমান সরকারের অন্যতম সাফল্যমন্ডিত মেগা প্রজেক্ট ‘পদ্মা সেতু’ র সাথে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর মাগুরা জেলাকে সরাসরি সংযুক্ত করতে ঝিনাইদহের উপর দিয়ে রেল লাইন নির্মানের কোন বিকল্প নেই।
দ্বিতীয়ত, ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা রেল লাইন স্থাপিত হলে বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী মেহেরপুর(যেখানে বর্তমানে কোন রেলপথ নেই)কে সংযুক্ত করা সহজ হবে।যার ফলে এই যোগাযোগ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে মুজিবনগরকে (মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান)হিসেবে সারা দেশের মানুষের কাছে আর ও তাৎপর্যপূর্ণ স্থান হিসেবে উপস্থাপন করা সম্ভব হবে।
তৃতীয়ত, ঝিনাইদহ সহ এর পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহের ট্রেনে ঢাকা যেতে হলে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যেতে হয়।যে ক্ষেত্রে প্রায় ১০০ কি:মি.এর বেশি পথ অতিরিক্ত অতিক্রম করতে হয়।এই রেল লাইন স্থাপিত হলে দূরত্ব ও সময় দুটির অপচয়ই রোধ হবে।
চতুর্থত, এই অঞ্চলে রেল লাইন হলে বাস,ট্রাক,কাভার্ড ভ্যান এর উপর মানুষের অতি নির্ভরশীলতা কমবে।ফলে হাইওয়ের উপর যে মাত্রাতিরিক্ত চাপ তা হ্রাস পাবে।ফলে প্রতি বছর রাস্তাঘাট সংস্কার, পূণর্গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ সরকারের যে বিপুল পরিমান অপচয় তা হ্রাস পাবে।এবং সড়ক দুর্ঘটনাও কমবে।
পঞ্চমত, এই অঞ্চলে রেলপথ নির্মিত হলে ঢাকার সাথে যোগাযোগব্যবস্থা সহজতর হবে,যার প্রেক্ষিতে এই অঞ্চলের মানুষের ঢাকাতে স্থায়ী ভাবে বসবাসের প্রবনতা কমবে এবং এই অঞ্চলের উৎপাদিত দ্রব্যাদি সহজে ঢাকাসহ বড় বড় শহরে সরবরাহ করতে পারবে।যা ঢাকার উপর অযাচিত জনসংখ্যার চাপ কমিয়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক বিপ্লবের সৃষ্টি করবে।
ষষ্ঠত, এই অঞ্চলের কয়েক লক্ষ যাত্রী রেলসেবা গ্রহণ করতে পারবে এবং যাত্রীদের নিকট থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে রেলের ব্যাপক উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।
সপ্তমত, বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে এশিয়ান হাইওয়ে ও ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়েতে যোগ দিয়েছে(যেটি ALTID প্রকল্পভূক্ত) যা সর্বমোট ৩২ টি দেশকে একত্রিত করবে,এবং এটি ঝিনাইদহ দিয়ে প্রবেশ করে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত হবে(বাংলাদেশ অংশে)।কাজেই এই রেলপথ নির্মিত হলে ভবিষ্যতে তা আন্তর্জাতিক রেল রুট হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।যা Global connectivity র ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
*সবশেষে সচেতন নাগরিকদের উদাত্ত আহবান জানাই “ঝিনাইদহে রেললাইন চাই” শীর্ষক দাবির প্রতি একাত্বতা ও নিরঙ্কুশ সমর্থন প্রদান করে দাবি আদায়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করুন।
★অামাদের দাবি বিফলে যাবে না, ঝিনাইদহ সদরে রেললাইন হবেই হবে।!!!!!
অমিয় মুজুমদার অপু
আহ্বায়ক ছাত্র ইউনিট
রেলপথ বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি, ঝিনাইদহ।