ঝিনাইদহের কৃষকের নীল বেদনা
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় এ বছর প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর আমন ধান আবাদ হয়েছে। দিগন্ত মাঠজোড়া সবুজের সমারোহ সোনা রঙে দুলছে তবুও হাসি নেই কৃষকের মুখে। কৃষাণীর উঠোনে আগাম প্রস্তুুতির ব্যস্ততা নেই, ক্রমেই ফিকে হয়ে উঠছে ঋণগ্রস্থ কৃষি পরিবারগুলো। চিন্তারেখায় হিসেবের খাতা নীল বেদনায় কাতরাচ্ছে ধানের বাজার দেখে। একমণ ভাল ধানের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৬’শ টাকা, যার বিপরীতে খরচ হাজার টাকার উপর। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সঞ্জয় কুমার কুন্ডু জানান, এ বছর আমন ধানে পোকা মাকড়ের উপদ্রব কম থাকায় ভাল ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা। আর ধান কাটা শুরু হলে ভরা মৌসুমে হয়তো ধানের বাজার একটু বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সরেজমিণ ঘুরে জানা গেছে, উপজেলার হাটফাজিলপুর, আবাইপুর, মীনগ্রাম, বগুরা, কামান্না, শিতালী, ধলহরাচন্দ্র, ধাওড়া, বিজুলিয়া, মনোহরপুর, ব্রহ্মপুর, মৌকুড়ি পুরাতন বাখরবা, ভাটবাড়িয়া, বারইপাড়া, ব্রাহিমপুর আউশিয়া, খালকুলাসহ বিভিন্ন গ্রামের মাঠে আমন ধানের মাঠ ভরে উঠেছে। ইতমধ্যে অনেক এলাকায় দুধভার থেকে ধান সোনালী রঙে পাকতে শুরু করেছে। তুলনামূলক প্রতিবছরের চেয়ে এ বছর রোগ বালাই কম হলেও প্রথম থেকে প্রকৃতি বৃষ্টি বিমুখ হওয়ায় চিন্তিত ছিল কৃষকেরা, সম্প্রতি আশানুরুপ বৃষ্টি পেয়ে ভরে উঠেছে আমনের মাঠ। ফাজিলপুর গ্রামের কৃষক আবু সাইদ জানান, বিল ও নিচু মাঠ এলাকার ধান বেশি ভাল হয়েছে রোগের প্রাদুর্ভাবও কম তবে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে তার বিপরিতে প্রতিটি কৃষকই ঋনের ভারে জর্জরিত থাকবে। তিনি বলেন বর্তমান বাজারে এক মণ ধানের দাম ৬শ টাকা নতুন আমন বাজারও যদি এরকম থাকে তাহলে ঝুঁকিতে পড়বে কৃষিজীবি পরিবার। ব্রাহিমপুর গ্রামের চাষী মিলন হোসেন বলেন, এ বছর বীজতলা থেকে শুরু করে সমস্ত চাষাবাদ, সার-সেচ, কীটনাশক থেকে শুরু করে ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত সাধারনত খরচ হবে ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা সে তুলনা বর্তমান ধানের বাজার প্রায় অর্ধেক। সরকার ধানের বাজার মূল্য না বাড়ালে কৃষকদের মাথায় হাত উঠবে বিশেষ করে মধ্যবিত্ত কৃষি পরিবারগুলো চরম অর্থসঙ্কটে পড়ার সম্ভাবনা থাকবে। অনেকই এখনো সার কীটনাশকের দোকানে বকেয়া রেখেছে যারা ধান বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করবে তাদের মূলধনই টিকবে না বরং নানাভাবে ঋণের জালে জড়িয়ে যাবে। শৈলকুপা বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম জানান, কোন কোন ফসলের ভরা মৌসুমে বাজার ওঠানামা করে তবে এ বছর ধানের বাজার প্রায় একই রকম। কৃষি ও কৃষকের বাজার ব্যবস্থাপনায় কৃষিবান্ধব হিসেবে সরকার নজর দিলে প্রতিমণ ধানের বাজার কমপক্ষে ১ হাজার টাকা হওয়া প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন।
শৈলকুপা বাজারের একাধিক সার ব্যবসায়ী জানান, বহু কৃষকের নিকট তাদের বকেয়া টাকা পড়ে রয়েছে যা ধান বিক্রি করে পরিশোধের কথা রয়েছে কিন্তু ধানের বর্তমান যে বাজার সে হিসেবে কৃষকেরা ঋণগ্রস্থই থেকে যাবেন বলে মন্তব্য করেছেন। শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার কুন্ডু বলেন, ধান কাটা শুরু হলে ভরা মৌসুমে ধানের বাজার সরকারের সুদৃষ্টিতে একটু পরিবর্তন হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে বর্তমান পর্যায়ে ধান চাষীরা লোকসানের ভাগেই অবস্থান করছেন বলে জানান।