কালীগঞ্জ

ঝিনাইদহে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে কৃষকদের বাজিমাত

আরিফ মোল্ল্যা

শীতকালীন সবজি টমেটো পাওয়া যাচ্ছে গ্রীষ্মকালে। তাই বাজারে চাহিদার সাথে দামও বেশি। গত কয়েক বছর ধরে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের কুল্লাপাড়া গ্রামের কৃষকেরা এ সবজি চাষে বেশ লাভবান হচ্ছেন। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও তারা কমপক্ষে ২০ বিঘা জমিতে বারি-৪ জাতের টমেটো চাষ করেছেন। কৃষকদের ভাষ্য, অল্প জমিতে এ সবজির চাষ করে অন্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভ পাওয়া যায়। দিন দিন এ চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতোমধ্যে গ্রামটি পরিচিতি লাভ করেছে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর গ্রাম হিসেবে।
সরেজমিনে দেখা যায়,এ গ্রামের মাঠে কমপক্ষে ২০ বিঘা জমিতে বারি -৪ জাতের টমেটোর চাষ করা হয়েছে। চারাগুলো মাটি দিয়ে উঁচু করা বেডে সারিবদ্ধভাবে লাগানো হয়েছে। আর জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচাতে ঠিক এর ওপর দিয়ে মোটা পলিথিনের সাহায্যে ঝুঁপড়ি ঘরের মত ছাউনি করা এবং প্রতিটি বেড ও ক্ষেতের চারপাশ দিয়ে করা হয়েছে পানি নিষ্কাষনের জন্য বিশেষ ধরনের নালা। যা বৃষ্টি শুরু হলে পানি তাড়াতাড়ি নিষ্কাষন হতে সাহায্য করবে। যে কারনে বর্ষা মৌসুম হলেও মাটি দিয়ে উচু বেড করে লাগানো টমেটো গাছের গোড়া ও এর আশপাশ রয়েছে শীত মৌসুমের মত শুকনো। ফলে বর্ষার কারনে টমেটোর গাছগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে না।
একাধিক কৃষক জানান, ১৫ বছর আগে তাদের গ্রামের কৃষক পরিতোষ বিশ্বাস প্রথম শুরু করেন এ অসময়ে টমেটো চাষ। পরবর্তীতে গ্রামের অন্য কৃষকেরাও পর্যায়ক্রমে ঝুঁকে পড়ছেন গ্রীষ্মকালীন টমোটোতে। এ বছর তাদের গ্রামের কৃষক আজাদ রহমান ৮ কাঠা, শাহিন হোসেন ৮ কাঠা, গোবিন্দ বিশ্বাস ১০ কাঠা, উসমান আলী ১০ কাঠা, গৌতম বিশ্বাস ১২ কাঠা, নিখিল বিশ্বাস ১ বিঘা, হরিপদ বিশ্বাস ১০ কাঠা, দিলীপ বিশ্বাস ৫ কাঠা, মশিয়ার রহমান ১২ কাঠা, আবু সিদ্দিক ৫ কাঠা, অনিল বিশ্বাস ১২ কাঠা,আসুতোষ বিশ্বাস ৫ কাঠা, আব্দুল মজিদ ১০ কাঠা, মিজানুর রহমান ১০ কাঠা, নিতাই বিশ্বাস ৭ কাঠা, আব্দুর রহমান ৮ কাঠাসহ প্রায় ২০ বিঘা জমিতে এ জাতের টমেটোর চাষ করা হয়েছে।

পরিতোষ বিশ্বাস জানান, তিনি ২০০৩ সালে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার দাইতপুর গ্রামের নূর মোহম্মদ মোল্লার কাছ থেকে এই বারি-৪ জাতের এ গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চারা সংগ্রহ করেছিলেন। তাদের মুখ থেকে লাভের গল্প শুনে সেখান থেকে চারা এনে ১০ কাঠা জমিতে চাষ শুরু করেন। প্রথম বছর লাভও হয় বেশ। পরবর্তীতে তার গ্রামের অন্য কৃষকেরাও পর্যায়ক্রমে এ চাষ শুরু করেন। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার টাকার মত টমেটো বিক্রি করেছেন। এ বছর ক্ষেতে টমেটোও ধরেছে ভাল। আশা করছেন যাবতীয় খরচ বাদে দেড় লক্ষাধিক টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারবেন।
কৃষক পরিতোষ ছোট ভাই নিখিল জানান, তার বড় ভাইয়ের দেখে-দেখি তিনি এ বছর তার এক বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ করেছেন। চারা লাগানোর ৭০ দিন পর থেকে তুলতে শুরু করেছেন। রমজান মাসের প্রথম থেকে প্রতি কেজি ৮০ টাকা দরে ক্ষেত থেকে বিক্রি করে আসছেন। তার আশা বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এখনও কমপক্ষে ৩ মাস ক্ষেত থেকে টমেটো পাবেন।
কৃষক আমানতউল্লাহ জানান,২০০৯ সালে যশোর কৃষি গবেষণা ইনিষ্টিটিউটে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর ক্ষেত দেখে এ চাষে আগ্রহী হন। তিনি কৃষি গভেষক ডঃ আব্দুল হাকিমের নিকট থেকে সে সময়ে এর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেন। ওই বছরেই বাড়িতে বীজতলায় চারা দিয়ে শুরু করেন টমেটো চাষ। এ বছর মাত্র সাত কাঠা জমিতে রোপন করে যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে প্রায় লক্ষাধিক টাকা লাভ করেন।
কৃষকদের দাবি,কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা যদি এভাবে সহযোগীতা করে যান তাহলে ব্যাপক লাভবান হবেন কৃষকেরা। অন্যদিকে দেশের সবজি চাহিদা অনেকাংশে পুরন হবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান,বারি-৪ জাতের টমেটো সারা বছরই চাষ করা যায়। উপজেলার কুল্লাপাড়া গ্রামের কৃষকেরা বেশ কয়েক বছর ধরে এ সবজির চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। কৃষি বিভাগের উপরি কর্মকর্তারা একাধিকবার মাঠ পরিদর্শনে এসেছেন। এক কথায় কৃষি বিভাগ উপজেলার অন্য গ্রামের কৃষকদেরকেও গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া ছাড়াও এ চাষে নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করে চলেছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button