টপ লিডদেখা-অদেখামহেশপুর

ঝিনাইদহে যে স্কুলটির রয়েছে ১৬০ বছরের বর্ণাঢ্য ইতিহাস

১৬০ বছর যাবৎ শিক্ষা ও জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে ঝিনাইদহ জেলার প্রথম মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয় মহেশপুরের ঐতিহ্যবাহী হাই স্কুল বর্তমানে মডেল হাই স্কুলে পরিণত হয়েছে।

১৮৫৬ সালে মহেশপুর উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয় নামে বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু করেন স্থানীয় জমিদাররা। পরে ১৮৬৩ সালে শিব মন্দিরের পাশে একটি ছোট পাকা বাড়িতে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম চালু করে। সেই বাড়িটিসহ ৪.৩৫ শতক জমি স্কুলের অনুকূলে প্রদান করেন স্থানীয় জমিদারগণ স্কুলটি প্রতিষ্ঠানের জন্য যে সকল জমিদারগণ উদ্যোগ গ্রহন করেন ও সার্বিক সহযোগিতা করেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-রতিকান্ত রায় চৌধুরী, নীল মাধব রায় চৌধুরী, বাবু বিপীন বিশ্বাস (পরে মহেশপুর পৌর সভার চেয়ারম্যান ছিলেন)- স্বরজিৎ চন্দ্র রায় চৌধুরী, অবনিশ চন্দ্র রায় চৌধুরী, প্রফুল্ল রায় চৌধুরী, এছাড়া আরো অনেকে। স্কুলটি প্রতিষ্ঠাকালীন হেড মাস্টার কে ছিলেন, তার কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।

১৮৫৬ সালে জমিদাররা মাইনার স্কুল চালু করেন তাদের কাচারী বা টোল ঘরে। প্রথম দিকে জমিদাররা নিজেরা শিক্ষাগত দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৮৭৬ সালে কুষ্টিয়া জেলার উমেষ চন্দ্র চৌধুরী (এম.এ.বিএ.এল) হেড মাস্টার হিসাবে দায়িত্ব গ্রহন করেন। ৬/৭ বছর শিক্ষকতা করার পর তিনি চলে গেলে ১৮৮৩ সালে কুষ্টিয়া জেলা থেকে আগত শ্রী স্বরৎ চন্দ্র ভট্রচার্য দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মহেশপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। ১৯০৬ সালে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেন বাবু প্রফুল্ল চন্দ্র মজুমদার ১৯৪১ সালে বাবু ক্ষীবোদ গোপাল রায় চৌধুরী, ১৯৪৩ সালে বাবু ফনি ভুষণ মুখার্জী, ১৯৪৬ বাবু সুধির রঞ্জন মুখার্জী (এম.এ.বিটি), ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর ১৯৫৭-৫৮ সালের দিকে স্কুলটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এ সময় স্কুল পরিচালনা পরিষদের সেক্রেটারী ছিলেন ইউসুফ আলী মাস্টার তার ছেলে মোঃ ওয়ালিউল ইসলাম ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম এ পাশ করে ঐ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। তিনি ২০০২ সাল পর্যন্ত ৪৪ বছর কঠোর তত্ত্বাবধানে শিক্ষার আলো বিস্তারে এক অনন্য ভূমিকা পালন করেন। এই বিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েরর প্রথম এম.এ নীলাম্বর মুখোপাধ্যায়, যিনি কাশ্মীর মহারাজের মন্ত্রী পরে কলকাতা মিউনিসিপালিটির ভাইস চেয়ারম্যান হন।

শিক্ষাবিদ ভিপি মুখ্যার্জি (ফনি ভুষণ মুখোপাধ্যায়) বিলেতের ক্যামব্রীজ বিশ্ব বিদ্যালয় হইতে অতীব সম্মানের সাথে বি.এস.সি পাশ করেন। পরে বঙ্গদেশের শিক্ষা বিভাগের উচ্চ পদে আসীন হন। বিখ্যাত শিক্ষাবিদ রসায়ন গ্রন্থ প্রনেতা ইশ্বর রাজকৃঞ্জ রায় চৌধুরী, শ্রীমন্ত কুমার বিদ্যাভুষণ (রাম বনবাস গ্রন্থের প্রনেতা), পন্ডীত লাল মোহন বিদ্যানিধি, যিনি (সম্বন্ধ নির্ণয় বিখ্যাত গ্রন্থের প্রণেতা) বর্তমান বাংলাদেশের এই বিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্র হলেন সুব্রত কুমার, প্রধানমন্ত্রীর পি.এস-১, মোঃ আবুল বাশার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সিভিল সার্জন ডাঃ তাহাজ্জেল হোসেন, মোঃ জসিম উদ্দিন শিক্ষক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিঃ ইসতিয়াক (আমেরিকা), ইঞ্জিঃ শহিদুল ইসলাম (বিটিসিএল), হাসান তৌহিদ (উপজেলা নির্বাহী অফিসার), সাবেক এমপি শামছুল হুদা খান, শহিদুল ইসলাম মাস্টার ও শফিকুল আজম খান চঞ্চল এই স্কুলের ছাত্র ছিলেন।

পণ্ডিত ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর স্কুল ইনস্পেক্টর পদে থাকাকালে মহেশপুর হাইস্কুল পরিদর্শন করেন।

এ সময় তিনি বজরাপুর গ্রামে গিয়ে তার শিক্ষা গুরু সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক ঈশ্বর জয়গোপাল তর্ক লস্করের বাস্তুভিটা পরিদর্শন করেন। ২০০১ সালে স্কাউটের বিশেষ সাফলের জন্য বিদ্যালয়ের একজন স্কাউট রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে ভূষিত হন।

বিদ্যালয়ের এস.এস.সি ফলাফল প্রসংশনীয়। ২০১৬ সালে এস.এস.সি ১০০% পাশ এবং ২৭ জন এ+, ২০১৫ সালে ৮৮.১৩% এবং ৩৫ জন এ+, ২০১৪ সালে ৯৯.০৮% এবং ৪৪ জন এ+, ২০১৩ সালে ১০০% এবং ২৮ জন এ+ পায়।

স্কুলে তিন তলা ও দ্বিতলা পৃথক ২টি ভবনে ৩৬টি শ্রেণী কক্ষ আছে। বড় একটি লাইব্রেরী আছে। ২২জন শিক্ষক ও ৫ জন কর্মচারী মিলে মোট ২৭জন সকলেই এমপিওভুক্ত। ১৯৭৯ সালে বিদ্যালয়টি পাইলট পরে মডেল প্রকল্পের অন্তর্ভক্ত হয়। এলাকাবাসীর দাবী রয়েছে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের।

বর্তমান স্কুলের প্রধান শিক্ষক জহুরুল ইসলাম জানান, সাম্প্রতিক জাতীয়করণের জন্য সকল কাগজপত্র শিক্ষা মন্ত্রণায়লয় বরাবর পাঠানো হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button