টপ লিডদেখা-অদেখাশৈলকুপা

সারাদেশে ঝিনাইদহের সুস্বাদু ‘কুমড়ো বড়ি’র চাহিদা বাড়ছে

রামিম হাসান–

কুমড়োর বড়ি দেখলেই মনে পড়ে কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর “মাগো ওরা বলে” কবিতার কয়েকটি চরণ “ আমি ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি। খোকা তুই কবে আসবি? কবে ছুটি?” কিন্তু আধুনিকতার ছোয়া আর কর্মব্যস্ততার কারণে মায়েরা আর আগের মত নিজের প্রয়োজনে বা আত্মীয়-স্বজনের দেয়ার জন্য নিজ হাতে বড়ি তৈরি করেন না। তাই বড়ি এখন হাটে বাজারে আর সবজির দোকানে বিক্রি হয়। আর সেখান থেকেই শীতের এই আকর্ষণীয় মুখোরোচক সবজিটি কিনে রান্নায় ব্যবহার করা হয়।

এ কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার কিছু মানুষ স্বল্প পুঁজি ব্যবহার করে বছরের প্রায় ৫/৬ মাস ধরে বড়ি বিক্রি করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে।

এমনি ভাবে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বান্যিজিক ভাবে গড়ে উঠেছে বড়ি তৈরির চাতাল। এই বছর হেমন্তে মেঘ মুক্ত আকাশ থাকায় বড়ি তৈরির কারিগররা শিউলি ঝরা সকালে রোদে পিঠ দিয়ে বড়ির চাতালে বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত থাকে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শৈলকুপা উপজেলার সাতগাছি ,হাজামপাড়া, ও আওশিয়া গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার বান্যিজিক ভাবে বড়ি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। তাদের তৈরি এই বড়ি স্থানীয় বাজার সহ ঢাকা এবং খুলনা চাহিদার সাথে বিক্রি হয়।

শৈলকুপা উপজেলা সাতগাছি গ্রামের বড়ি তৈরির কারিগর রমজান শাহ্ কথা বলে জানা যায়, তাদের পূর্ব পুরুষের পেশা ছিল ঘানি ঘুরিয়ে তেল তৈরি করা(কুলু)। কিন্তু যান্ত্রিক তেল তৈরির মেশিন সবখানে হয়ে যাওয়াতের তারা বেকার হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় খুবই দুঃখ-কষ্টের মাঝে দিন কাটাতে থাকে। কেউ কেউ পেশা বদল করে দিন মুজুর হিসাবে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে থাকে। এরই মাঝে কোন এক শীত কালে বাড়ির জন্য তৈরি করা কিছু কুমড়োর বড়ি অভাবের কারনে বাজারে নিয়ে যান তিনি এবং তা খুব চাহিদার সাথে বিক্রি হয়। তখনই যেন সে অন্ধকারে আলোর দিশা পাই। সেই দিনই বাজার থেকে ডাল ও কুমড়ো কিনে এনে তিনি ব্যবসা শুরু করেন। তারপর থেকে আর কোন দিন পিছনে ফিরতে হয় নি রমজান শাহ্’র। এই বড়িতেই তার ৮সদস্যর অভাবের পরিবারের সংসারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা। এছাড়াও তার এই বড়ি চাতালে কাজ এলাকার অনেক সংসারের অভাব দূর হয়েছে। তার ব্যবসার এই সফলতা দেখে গ্রামের অনেকেই এই ব্যবসার সাথে যুক্ত হয়েছে।

তিনি জানান, ব্যবসার প্রথম দিকে বড়ি তৈরির প্রধান উপকরণ ডাল ও কুমড়া এক সাথে মিশিয়ে শিল পাটায় বেটে অথবা ঢেঁকিতে কুটে মন্ড তৈরি করা হতো। কিন্তু বর্তমানে ডাল কুটার মেশিনে ডাল ও কুমড়ার মিশ্রন তৈরি করা হয়। পরে তা ভাল ভাবে ফেনানো (পানি দিয়ে দু’হাতে চেটকানো) হয়। এই মিশ্রণটি বড়ি আকৃতিতে মশারির চাতালে বসিয়ে রোদে শুকানো হয়। শুকানো এই বড়ি পরে স্থানীয় বাজারে বিক্রয় করা হয়। এছাড়াও ঢাকা ও খুলনার ব্যপারিরা পাইকারি দামে বাড়ি থেকে কিনে নিয়ে যায়। বর্তমানে তার চাতালে প্রতিদিন ১৮০ থেকে ২০০ কেজি বড়ি তৈরি হয়। যা সে প্রতি কেজি ১৮০ দরে বিক্রয় করে থাকেন। উৎপাদন খরচ বাদে প্রতি কেজি তার লাভ হয় ১৫-২০ টাকা।

বড়ি ব্যবসা লাভজনক হলেও মেঘলা বা ঘন কুয়াশার কারণে বড়ি নষ্ট হয়ে যায়। যে কারণে এর কারিগররা অনেক সময় ক্ষতির সম্মুক্ষিন হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button