তৃণমূলে শেখ হাসিনার চিঠি
স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও সমৃদ্ধির প্রতীক ‘নৌকা’র বিজয় সুনিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের চিঠি দিয়েছেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। শুক্রবার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তিনি এ আহ্বান জানিয়েছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের সংগঠনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রাপ্তির প্রত্যাশায় সংগঠনের ‘সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড’-এ আবেদন করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
‘আওয়ামী লীগ এই জনগণের একটি ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীনতম রাজনৈতিক সংগঠন। এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধিকার, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগঠন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সকল সাংগঠনিক কার্যক্রমের মতো যে কোনো নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়াও পরিচালিত হয় একটি সুনির্দিষ্ট গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করে। আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যগণের সুচিন্তিত মতামত, তৃণমূল নেতাদের পরামর্শ এবং আমাদের সংগঠন কর্তৃক পরিচালিত একাধিক নিবিড় জরিপ কার্যক্রমের সুপারিশের ভিত্তিতে দলীয় প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হয়।’
‘আপনি অবগত আছেন, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির জন্য প্রায় ৪ হাজারের অধিক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তাদের প্রায় সকলেরই ত্যাগ ও অবদান রয়েছে। রাজনৈতিক ত্যাগ, দক্ষতা, যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার বিচারে প্রায় প্রত্যেকটি আসনেই ছিল একাধিক যোগ্য প্রার্থী। একাধিক আবেদনকারীর মধ্য থেকে একজনকে প্রার্থী হিসেবে নির্ধারণ করার কাজটি ছিল অত্যন্ত কঠিন ও দুরূহ। আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড অত্যন্ত সতর্কতার সাথে প্রতিটি আবেদনপত্র ও প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত এবং মাঠ পর্যায়ের জরিপের ফলাফল পযালোচনা করে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে দলীয় প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে।’
‘আমাদের সংগঠনের মনোনয়ন প্রদাণের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া ও সংসদীয় বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনাকে মনোনয়ন দিতে না পারায় আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আওয়ামী লীগকে একটি শক্তিশালী ও কল্যাণমুখী রাজনৈতিক দলে পরিণত করার কাজে আপনার ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও দেশের কল্যাণে আপনার নিরবচ্ছিন্ন ভূমিকার জন্য আপনাকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও প্রাণপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতি আপনার ভালোবাসা-আনুগত্য-বিশ্বস্ততা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।’
‘বিএনপি-জামায়াতের হিংস্র থাবা থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করে বাংলাদেশ টেকসই গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে আমরা সমমনা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আপনার কাছে আমার বিশেষ অনুরোধ ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে আপনার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে মহাজোটকে বিজয়ী করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করবেন। আপনার ত্যাগ, শ্রম ও আন্তরিকতা সবকিছুই আমার বিবেচনায় আছে।’
‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয় লাভ করে আবারও বাংলাদেশের জনগণের সেবা করার সুযোগ পাবে। সেই বিজয়ের অংশীদার হবেন আপনিও। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি আওয়ামী লীগ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তাহলে নৌকা মার্কাকে পরাজিত করার সাংগঠনিক শক্তি আর কারো নেই।’
চিঠির শেষে বলা হয়েছে, ‘আগামী নির্বাচনে আপনার নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ ও মহাজোট মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে আপনার সকল সাংগঠনিক দক্ষতা, শক্তি ও সামর্থ আওয়ামী লীগের বিজয়কে সুনিশ্চিত করবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের গত এক দশকের অর্জিত উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে সংগঠনের একজন আদর্শবান, ত্যাগী ও বিশ্বস্ত নেতা হিসেবে সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা ও সার্বিক কর্মকাণ্ডে আপনার স্বতঃস্ফূর্ত ও সক্রিয় অংশগ্রহণ একান্তভাবে প্রত্যাশা করছি।’