অন্যান্য

মানসিক-স্বাস্থ্য সম্পর্কে সন্তানকে সচেতন করার ৫ উপায়

আধুনিক পৃথিবীতে অভিভাবক হওয়া খুবই কঠিন একটি বিষয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন ধরনের উৎপীড়ন, যৌন নির্যাতন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তৈরি হওয়া সমস্যা শিশু-কিশোরদের আগের চাইতে অনেক বেশি প্রভাবিত করে। দয়াশীল, আত্মনির্ভরশীল, বুদ্ধিমান করে সন্তানকে বড় করে তোলার জন্য অভিভাবকদের তাদের প্রতি আরো বেশি মনোযোগ দেয়া এখন সময়ের প্রয়োজন।

শরীরের কোথাও কেটে ছিঁড়ে গেলে যেমন চিকিৎসা প্রয়োজন, তেমনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হলেও চিকিৎসা বা সেবা প্রয়োজন। শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য কিছু বিষয় জেনে রাখা দরকার।

শিশু-কিশোর সাইকোথেরাপিস্ট কেটি হারলি বলেন, বিশেষ করে কিশোর বয়েসী ছেলে-মেয়েদের মধ্যে উচ্চমাত্রার মানসিক চাপ দেখতে পাওয়া যায়। মানসিক স্বাস্থ্যের উপকারিতা সম্পর্কে শিশু-কিশোরদের ওয়াকিবহাল করে তোলার জন্য সাইকোলজি বিশেষজ্ঞ ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা পাঁচটি পদ্ধতির কথা বলেন। এই পদ্ধতিগুলোর সাহায্যে শিশু-কিশোররা মনের অনুভূতি প্রকাশ, নিজেদের আবেগগুলোকে বুঝতে শেখা এবং শরীরের মতো মনেরও যত্ন নিতে শেখে।

১. ‘আবেগের আগ্নেয়গিরি’ পদ্ধতি:
কেটি হারলি বলেন, সারাদিন আমরা বিভিন্নরকম আবেগের মধ্য দিয়ে যাই। সেসব আবেগকে যখন আমরা ঠিকঠাক মতো প্রকাশ করতে পারি না, তা ভেতরে ভেতরে ফুঁসতে থাকে। আগ্নেয়গিরির ভেতরের বুদবুদের মতো ফুটতে ফুটতে এই আবেগ যখন বিস্ফোরিত হয়ে বের হয়ে আসে, তখনই আমরা কাঁদি, আঘাত করি, চিৎকার করি।

কেটি লক্ষ্য করেছেন, অধিকাংশ অভিভাবক কান্নাকাটি করা, চিৎকার করা এসব আচরণকে আচরণগত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। কিন্তু বস্তুত এগুলো সেইসব আবেগের বিস্ফোরণ যে আবেগগুলোকে আর নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এ কারণে অভিভাবকদের উচিৎ সন্তানদের শেখানো কিভাবে তারা বাবা-মায়ের সাথে তাদের আবেগগুলো নিয়ে কথা বলবে এবং সেসব থেকে বের হয়ে আসবে।

২. উদাহরণের মাধ্যমে শেখানো এবং নিজেদের অভ্যাস সম্পর্কে সচেতন হওয়া:
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, অতিমাত্রায় টেলিভিশন দেখা শিশুদের জন্য এবং অতিমাত্রায় গেমিং ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপস্থিতি কিশোরদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এটি তাদের আচার-আচরণ, মেজাজ, ঘুমের ক্ষেত্রে এমনকি সার্বিক শারীরিক অবস্থার ওপরই প্রভাব ফেলতে পারে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স-এর ড. ক্যাথেরিন উইলিয়ামসন বলেন, অভিভাবকদের উচিৎ বিচক্ষণতার সাথে বিভিন্ন কাজ করার সময় নির্দিষ্ট করা এবং সেটিকে অভ্যাস হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে উদাহরণ তৈরি করা

যেমন ধরুন, খাবার টেবিলে ও বিছানায় মোবাইন ফোন ব্যবহার না করা। অভিভাবকরা সন্তানদের সাথে নিজেদের দুর্বলতা ও সমস্যা শেয়ার করলে সন্তানরাও নিজেদের সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করতে উৎসাহী হয়ে ওঠে।

৩. কী বলছেন, তা খেয়াল রাখুন:
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট এবং চাইল্ড মাইন্ড ইনস্টিটিউটের অ্যাঙজাইটি ডিসঅর্ডার সেন্টারের সিনিয়র ডিরেক্টর র‌্যাচেল বুশম্যান বলেন, অভিভাবকদের উচিৎ সন্তানদের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার সুযোগ দেয়া। তাদের মুখভঙ্গি দেখেই পুরো ঘটনা বুঝে নেয়া উচিৎ নয়। যদি দেখেন সন্তান কোনো বিশেষ মানসিক চাপে আছে, তখন ‘দুশ্চিন্তা করো না’ বলে সান্ত্বনা না দিয়ে বরং কি হয়েছে তা জিজ্ঞেস করুন।  আপনার প্রশ্নের ফলে আপনার সন্তান কথা বলার সুযোগ খুঁজে পাবে। তাদের আবেগ অনুভূতি আপনার সাথে ভাগাভাগি করে নিতে পারবে। হয়তো তাদের সমস্যাটি তেমন বড় কোনো বিষয় নয়, তবু অনুভূতি শেয়ার করতে পেরে তাদের হালকা লাগবে। এছাড়াও সন্তানদের সাথে তাদের সারাদিনের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন র‌্যাচেল বুশম্যান।

৪. সন্তানদের মনোযোগী হয়ে ওঠার কৌশল শেখান:
লেখিকা এবং ওয়েলনেস বিশেষজ্ঞ মল্লিকা চোপরা নয় বছর বয়সে ধ্যান করতে শিখেছিলেন। তার বাচ্চাদেরও তিনি মেডিটেশন বা ধ্যান করতে উৎসাহিত করেন। এ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি লিখেছেন ‘জাস্ট ব্রেথ: মেডিটেশন, মাইন্ডফুলনেস, মুভমেন্ট এন্ড মোর’ নামে একটি বই লেখেন। ধ্যানের পাশাপাশি এই বইতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে উৎসাহিত করা হয়েছে। হাঁটা এবং যোগব্যায়াম করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সন্তান কি ধরনের কথাবার্তা বলছে, অভিভাবকদের প্রতি তা-ও নজর রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন মল্লিকা চোপরা।

৫. শিশুদের গল্প বলতে উৎসাহিত করুন:
ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টার মেডিকেল সেন্টারের মতে, গল্প বলা মানসিক চাপ কমায়, উদ্বেগ এবং বিষন্নতা দূর করতে সাহায্য করে। বাচ্চারা তাদের নিজেদের গল্প বলতে গিয়ে তারা যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তার মধ্যে বাবা-মা বা শিক্ষককে প্রবেশ করতে দেয়ার মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে পারে। গল্প বলার মাধ্যমে বাচ্চারা তাদের সমস্যা সম্পর্কে কথা বলতে শেখে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button