শৈলকুপা

মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মেলেনি ঝিনাইদহের হতদরিদ্র শুকুর আলীর!

ড. মোঃ আলমগীর, জাতীয় জাদুঘরের সাবেক পরিচালক

 

“এক হতভাগ্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শফি উদ্দিনের কথা ।
দুঃখ যে, এই বিজয়ের মাসে এমন একজনের কথা বলতে হচ্ছে যিনি ১৯৭১ সালে সদ্য বিবাহিত স্ত্রী সন্তানকে কেবল আল্লাহর জিম্মায় রেখে দেশমাতৃকাকে শত্রুমুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন। অথচ আজ তিনি নিঃস্ব, অসহায়। তার আনসারের ট্রেনিং আগেই ছিল। ভারতের রানাঘাটে গিয়ে ট্রেনিং নিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে খান সেনাদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।

এমনকি শৈলকুপা যেদিন মুক্ত হয় সেদিনও সক্রিয়ভাবে যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু হতদরিদ্র ঘরে জন্ম নেয়া ও প্রায় নিরক্ষর হওয়ায় আজ এই মহান মুক্তিযোদ্ধার কোনই মূল্যায়ন হয়নি। তিনি হলেন সাধুহাটি (নাগপাড়া অংশ) গ্রামের মুহাম্মদ শফিউদ্দিন ওরফে শুকুর ভাই। তার পিতার নাম- লালচাঁদ আলী শেখ ,মাতার নাম-ফুলি নেছা এবং স্ত্রীর নাম- মোসাম্মৎ ভানু নেছা।

তার জন্ম পয়লা মে ১৯৪১ সাল। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি ক্লাস নাইনে পড়তাম বিধায় সবই পরিষ্কার মনে পড়ে। দেখতাম আমাদের গ্রামের ইয়াজউদ্দিন, শফিউদ্দিন বা শুকুর ভাই, সাখাওয়াত হোসেন, আজিবর, মোকসেদ আলী, রব্বানী ভাই ,সাহাদত, জালশুখার খলিল ভাই, বারিক, বিডি খান প্রমূখ মুক্তিযুদ্ধে গেল।

ওরা মাঝে মধ্যে আসত দেখা-সাক্ষাৎ হত। এই শফিউদ্দিন বা শুকুর ভাই, ইয়াজউদ্দিন ও সাখাওয়াতকে মাঝে মধ্যে খাকি সোয়েটার ও প্যান্ট পরা, মুক্তিযুদ্ধা টাইপের পোশাক পরে আসতে এবং ঘুরতে দেখেছি। রুহুল আমিন,সান্দিয়াড়ার নূর আলি ওরফে আফজাল হোসেনকে নিয়ে মাঝে মধ্যে আমাদের বাড়িতে রাতে এসে খেয়ে যেতেন । আমার মাকে ওরা খুবই শ্রদ্ধা করতো। সালাম করে দোয়া নিয়ে যেতো ।


এরপর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা ক ভাই বোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় , মেডিকেল ইত্যাদিতে চান্স পেয়ে ঢাকায় পাড়ি জমাই। গ্রামে যাওয়া কমই হয়। আমাদের গ্রামের ঐ সব মুক্তিযোদ্ধারা স্বীকৃতি , সম্মান পাচ্ছে জেনে ভালোই লাগে। বেশ ক’বছর আগে শুনলাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় শফিউদ্দিনের নাম নেই ।

একবার দেখা হলে তিনি বলেন, অনেক রাজাকার মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পায়, কিন্তু আমি বঞ্চিত। তবে চেষ্টা চালাচ্ছি আমাকে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দিতেই হবে । আমি যে মুক্তিযুদ্ধ করেছি তা সবাই দেখেছে ,জানে।

গত ২৬ শে নভেম্বর ২০১৮ তারিখে গ্রামের বাড়ি গিয়ে আমার পিতার কবর জিয়ারতে যাওয়ার পথে তার সাথে দেখা হল। সেই সুদর্শণ ,গৌর বর্ণ, বাবরি ঝুলানো বীর মুক্তিযোদ্ধা আজ দরিদ্র হতাশা -চলবে।”

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button