ইউপি চেয়ারম্যান থেকে খাদ্যমন্ত্রী
ঝিনাইদহের চোখঃ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তৃতীয়বারের মতো মন্ত্রী পরিষদ গঠন করতে চলেছে আওয়ামী লীগ। আর মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে রোববার বিকেল সাড়ে ৩টায় খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেতে ডাক পেয়েছেন নওগাঁর কৃতি সন্তান সাধন চন্দ্র মজুমদার। এ খবরে উচ্ছ্বসিত তার নির্বাচনী এলাকাসহ জেলাবাসী। জেলার বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামকে সরিয়ে প্রথমবারের মতো সদ্য নির্বাচিত খাদ্যমন্ত্রী হয়েছেন সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান থেকে তিনি সর্বচ্চ পদমর্যাদা মন্ত্রীত্ব অর্জন করায় খুশি এলাকাবাসী।
সাধন চন্দ্রের পৈত্রিক বাড়ি জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার হাজীনগর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে। তবে নওগাঁ শহরের পোস্ট অফিস পাড়ায় সপরিবারে বসবাস করেন তিনি। বাবা মৃত কামিনী কুমার মজুমদার ও মা মৃত সাবিত্রী বালা মজুমদার।
চার কন্যা সন্তানের জনক সাধন চন্দ্র। বড় মেয়ে সোমা মজুমদার ও সেজ মেয়ে কাদেরী মজুমদার ব্যাংকার, মেজ মেয়ে কৃষ্ণা মজুমদার পেশায় চিকিৎসক এবং ছোট মেয়ে তৃণা মজমুদার প্রকৌশলী।
অত্যন্ত সৎ ও নিষ্ঠাবান হিসেবে সাধন চন্দ্রের সুখ্যাতি রয়েছে সর্বত্রই। আপামর সাধারণ মানুষের মাঝেও তিনি পরম শ্রদ্ধার পাত্র। মধ্যবিত্ত পরিবারের পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি চতুর্থ। বাবা ধানের ব্যবসা করতেন। ছাত্রজীবন থেকেই সাধন রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
১৯৮৪ (৮৪-৮৮) সালে নিজ জন্মভূমি হাজীনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। এরপর ১৯৮৯ সালে দ্বিতীয় পর্যায়ে নিয়ামতপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ডা. ছালেক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন আওয়ামী লীগের সাধন চন্দ্র মজুমদার। তবে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেই ডা. ছালেক চৌধুরীকেই পরাজিত করে বিজয়ী হন সাধন।
এরপর ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ঐক্যফ্রন্টের মোস্তাফিজুর রহমানকে পরাজিত করে তৃতীয়বারের মতো বিজয়ী হন তিনি। এ নির্বাচনে তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫৯২ ভোট এবং বিএনপির মোস্তাফিজুর রহমান পেয়েছেন ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৬৪ ভোট। অর্থ্যাৎ ৫৬ হাজার ২২৮ ভোট বেশি পেয়ে তিনি বিজয়ী হয়েছেন।
জেলার ঠাঠা বরেন্দ্র ভূমির এলাকা হিসেবে পরিচিত নিয়ামতপুর-পোরশা ও সাপাহার উপজেলা। এ তিন উপজেলা ২০টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে গঠিত। বছরে একটি মাত্র ফসল বৃষ্টিনির্ভর আমন। তবে খাদ্য সঙ্কটের চেয়ে পানির সঙ্কট ছিল প্রকট। ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা পোরশা ও সাপাহার উপজেলা। এই দুই উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে পূণর্ভবা নদী। এছাড়াও সাপাহারে রয়েছে ঐহিত্যবাহী প্রায় এক হাজার আয়তনের জবই বিল। পূণর্ভবা নদী ও জবই বিল থেকে প্রচুর মাছ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়ে দীর্ঘ ১০ বছর সাংসদ থাকায় নির্বাচনী এলাকায় তৃণমূল থেকে নেতাকর্মী সু-সংগঠিত ও এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন সাধন। এখন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে গভীর নলকূপের মাধ্যমে জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদন হচ্ছে।
এ তিন উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা, পানির সু-ব্যবস্থা, বনায়ন ও শিক্ষা ব্যবস্থায় দৃষ্টান্তমূলক অবদান রেখেছেন তিনি। সাপাহার উপজেলা ৮৫ শতাংশ এবং পোরশা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন উদ্বোধন করেছেন। সব মিলিয়ে তিন উপজেলায় তিনি নিজের ও আওয়ামী লীগের গ্রহণযোগ্য ভাবমূর্তি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। দলমত নির্বিশেষে তিনি সকলের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার পাত্র।
সাধন চন্দ্র নওগাঁয় থাকলেও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উপজেলাগুলোতেই সময় দেন। আর তার কাছ থেকে কাউকে খালি হাতে ফিরতে হয় না বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা এমপি হয়ে বিগত দিনে তিনি যে উন্নয়ন করেছেন মন্ত্রী হিসেবে আরও বেশি করবেন।