ধর্ম ও জীবন

অশুভ ও কুলক্ষণ সম্পর্কে ইসলাম যা বলে

ঝিনাইদহের চোখঃ

অশুভ ও কুলক্ষণ এবং কোনো বিষয়ে ধারণা পোষণ করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। তবে এটি ছোট শিরক। এর উদাহরণ এরূপ যে পাখি উড়িয়ে ভাগ্যের ভালমন্দ নির্ণয় করা অথবা কোন ঘটনা থেকে অশুভ লক্ষণ নির্ণয় করা।

মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, “মনে রেখো, আল্লাহর কাছেই রয়েছে তাদের অশুভ লক্ষণসমূহের চাবিকাঠি। কিন্তু অধিকাংশ লোকই তা বুঝে না।” (সূরা আরাফ- ১৩১)

অর্থাৎ তাদের কাছে কল্যাণকর এবং ক্ষতিকর ভালমন্দ যা কিছু জোটে তা ভাগ্যের কারণে। কুলক্ষণের ধারণা নবীদের শত্রু পৌত্তলিকদের অন্যতম গুণাবলী, ফলে এটি অবশ্যই নিন্দনীয়। পক্ষান্তরে, নবীদের অনুসারীগণ তাদের সবকিছুতেই ভাগ্যের ওপর বিশ্বাস রাখে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, “তারা বলল, তোমাদের অকল্যাণ তোমাদের সাথেই রয়েছে।” (সূরা-ইয়াসীন-১৯)

অর্থাৎ ইসলামে সংক্রামক ব্যাধি, অশুভ লক্ষণ বা অশুভ আলামত বলতে কিছুই নেই। কোন ব্যাধিতে সংক্রামিত হওয়ার নিজস্ব ক্ষমতা নেই বরং আল্লাহর ইচ্ছায় কখনও কখনও সংক্রমিত হয়ে থাকে। জাহেলিয়াত যুগে মানুষ ধারণা রাখত যে, ব্যাধি নিজে নিজেই সংক্রামিত হয়ে থাকে। ফলে আল্লাহ তাআলা তাদের এই বিশ্বাসকে বাতিল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

আবু হুরায়রা রাঃ বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, সংক্রামক ব্যাধি, ক্ষুধায় পেট কামড়ানো পোকা, সফর মাসের অগ্রপশ্চাৎকরণ ও মৃত মানুষের আত্মা হতে প্যাঁচার জন্ম বলতে কিছু নেই। সে সময় জনৈক বেদুইন বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! তাহলে সে উট পালের কী অবস্থা? যা কোনো বালুকাময় ভূমিতে থাকে যা ব্যাধিমুক্ত ও বলবান। অতপর সেখানে খোস পাঁচড়া আক্রান্ত কোনো উট আসে এবং সেই পালে প্রবেশ করে, সবগুলো উটকে খোস পাঁচড়ায় আক্রান্ত করে দেয়। তিনি বললেন, তাহলে প্রথম উটটিকে কে সংক্রমিত করেছিল? (সহীহ মুসলিম, হাঃ- ৫৬৮১)

আহমদ আল কুরাইশী রঃ বলেন, নবী (সা.) এর নিকট শুভ অশুভ লক্ষণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলে তিনি বললেন, হ্যাঁ, শুভ লক্ষণ হচ্ছে “ফাল”। এমন অশুভ কিছুই নেই যা মুসলিমকে কোন কাজে বা কোথাও যাত্রা থেকে বিরত রাখতে পারে। তবে তোমাদের মাঝে কেউ যদি কোন অসুবিধাজনক কিছু দেখতে পায় সে যেন বলে, হে আল্লাহ! আপনিতো কল্যাণদাতা এবং আপনি অকল্যাণ দূরকারী। আপনি ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই, শক্তিও নেই। (সুনানে আবু দাউদ, হাঃ- ৩৯১৯)

“ফাল” হল উত্তম কথা যা আল্লাহর সাথে ভালো ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তা প্রশংসিত ও উত্তম। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, কুলক্ষণে বিশ্বাস করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার মনে কুলক্ষণের ধারণা আসে না। তবে আল্লাহ তাআলার ওপর ভরসার কারণে তা মন থেকে দূর করে দেন। (সুনানে, তিরমিযী, হাঃ- ১৬১৪)

লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, সাবেক ইমাম ও খতীব, দুপ্তারা কুমারপাড়া জামে মসজিদ, আড়াইহাজার নারায়ণগঞ্জ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button