ধর্ম ও জীবন

মুসা আঃ. এর জীবনী ও ১০ মুহাররমের রোজা (শেষ পর্ব)

ঝিনাইদহের চোখঃ

১০ মুহাররম ও আশুরা-

নির্যাতিত ও নিপীড়িত বনি ইসরাঈলদের কাতর প্রার্থনা এবং মুসা ও হারুন আঃ. এর দু‘আ আল্লাহ কবুল করেছিলেন। সে মতে সর্ব প্রথম ফেরাউন কওমের দুনিয়াবী জৌলুস ও সম্পদরাজি ধ্বংসের জন্য গজব নেমে আসে তার অন্যন্য গজব বা নিদর্শন সমূহ। যা জেনে এ যুগের মানুষ তা থেকে উপদেশ গ্রহন করবে।

সাগরডুবি ও নাযাত লাভ-

ক্রমাগত পরীক্ষা ও অবকাশ দানের পরও যখন ফেরাউন ও তার পরিষদগণ বলল, আমাদের ওপর জাদু করার জন্য তুমি যে নিদর্শনই নিয়ে আস না কেন, আমরা তোমার ওপর কোনো মতেই ঈমান আনবো না। (সূরা আরাফ- ৭/১৩২)

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি মুসার প্রতি এই মর্মে ওহী করলাম যে, আমার বান্দাদের নিয়ে রাত্রিযোগে বের হয়ে যাও এবং তাদের জন্য সমুদ্রে শুষ্ক পথ নির্ধারন কর। পেছন থেকে এসে ধরে ফেলার আশঙ্কা করো না এবং পানিতে ডুবে যাবার ভয় কর না।’ (সূরা ত্বোয়াহা- ২০/৭৭)

ফেরাউন জানতে পেরে তার সেনাবাহীনেকে নির্দেশ দিল, বনি ইসরাঈলদের পিছু নেওয়ার। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সূর্যদোয়ের সময় তারা তাদের পিছু পৌঁছালো। অতপর যখন উভয় দল পরস্পরকে দেখল, তখন মুসার সঙ্গীরা ভীত হয়ে বলল, আমার তো ধরা পড়ে গেলাম, তখন মুসা বলল, কখনই না, আমার সাথে আমার পালনকর্তা আছেন। তিনি সত্বর আমাকে পথ দেখাবেন। অতপর আমি মুসাকে আদেশ করলাম, তোমার লাঠি দ্বারা সমুদ্রকে আঘাত কর। ফলে তা বিদীর্ন হয়ে গেল এবং প্রত্যেক ভাগ বিশাল পাহাড় সদৃশ হয়ে গেল। ইতোমধ্যে আমি সেখানে অপরদলকে (ফেরাউন ও তার সেনাবাহীনিকে) পৌঁছে দিলাম এবং মুসা ও সঙ্গীদের বাঁচিয়ে দিলাম। অতপর অপর দলটিকে ডুবিয়ে দিলাম। (সূরা শুআরা : ৬০-৬৬)

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর সে (ফেরাউন) যখন ডুবতে লাগলো, তখন বলে উঠল, আমি ঈমান আনছি এ বিষয়ে যে, সেই সত্তা ব্যতিত কোন উপাস্য নেই যার উপর বনি ইসরাঈলগণ ঈমান এনেছে এবং আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলাম।’ (সূরা ইউনূস- ১০/৯০)

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এখন একথা বলছো? অথচ তুমি ইতোপূর্বে নাফরমানী করেছিলে এবং ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে। অতএব আজ আমি তোমার দেহকে বিনষ্ট হওয়া থেকে বাঁচিয়ে দিচ্ছি, যাতে তোমার পশ্চাতবর্তীদের জন্য তুমি নিদর্শন হতে পার। বস্তুতঃ বহু লোক এমন রয়েছে, যারা আমার নিদর্শনাবলীর বিষয়ে বে-খবর।’ (সূরা ইউনুস : ৯১-৯২)

সাগর ডুবির দৃশ্য স্বচক্ষে দেখার পরও ভীত-সন্ত্রস্ত বনি ইসরাঈলগণ ফেরাউন মরেছে কিনা বিশ্বাস করতে পারছিল না, তখন আল্লাহ ফেরাউনের প্রাণহীন দেহ সমুদ্রের ভেতর থেকে বের করে দিলেন। (তাফসীর ইবনে কাসীর, সূরা তোহা- ৩৯)

আশুরার রোজা-

ফেরাউনের সাগর ডুবি ও মুসা আঃ এর মুক্তি লাভের এ অলৌকিক ঘটনাটি ঘটেছিল ১০ মুহাররাম আশুরার দিন। এ দিনের স্মরণে আল্লাহর শুকরিয়া স্বরূপ মূসা আঃ. ও বনি ইসরাঈলগণ প্রতি বছর এ দিনে একটি নফল রোজা পালন করেন। এই রোজা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। জাহেলী আরবেও এ রোজা চালু ছিল।

ইবনে আব্বাস রাঃ. বলেন, মহানবী (সা.) যখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় এলেন, তখন দেখলেন, ইহুদীরা আশুরার দিনে রোজা পালন করছে। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কী এমন দিন যে তোমরা এদিনে রোজা রাখছ? ইহুদীলা বলল, এ এক উত্তম দিন। এ দিনে আল্লাহ বানী ইসরাঈলকে তাদের শত্রু থেকে পরিত্রাণ দিয়েছিলেন। তাই মুসা আঃ. এরই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে এই দিনে রোজা পালন করেছিলেন। আর সে জন্যই আমরাও এই দিনে রোজা রেখে থাকি।

এ কথা শুনে মহানবী (সা.) বলেন, মূসার স্মৃতি পালন করার ব্যাপারে তোমাদের চাইতে আমি অধিক হকদার। সুতরাং তিনি ঐ দিনে রোজা রাখলেন এবং সকলকে রোজা রাখতে আদেশ করলেন। (সহীহ মুসলিম, হা– ১১৩০)

আবু কাতাদা রাঃ. হতে বর্ণিত তিনি বলেন,আল্লাহর রাসূল (সা.) আশুরার দিন রোজা রাখা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসিত হলে তিনি বললেন, আমি আশা করি যে, (উক্ত রোজা) বিগত বছরের পাপরাশি মোচন করে দেবে। ( সহীহ মুসলিম, হা- ১১৬২)

উল্লেখ্য যে, ১০ মুহাররাম তারিখে পৃথিবীতে আরও বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ন্যায় ৬১ হিজরী সনে হযরত হোসায়েন রাঃ. এর মর্মান্তিক শাহাদাতের ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু সে জন্য নফল ছিয়াম পালনের বা কোন অনুষ্ঠান বা দিবস পালনের বিধান ইসলামে নেই। অতএব আশুরার রোজা পালনের নিয়ত হবে ‘নাজাতে মুসার শুকরিয়’ হিসাবে, ‘শাহাদাতে হোসায়েন- এর শোক’ হিসাবে নয়। এরূপ নিয়ত করলে নেকীর বদলে গুনাহ হবে। (মিশকাত, হা- ২০৪৪)

লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, সাবেক ইমাম ও খতীব, দুপ্তারা, কুমারপাড়া, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button