মুসা আঃ. এর জীবনী (পর্ব- ১)
ঝিনাইদহের চোখঃ
উল্লেখ্য যে, বালিকাদ্বয়ের পিতা ছিলেন, মাদিয়ানবাসীদের নিকট প্রেরিত বিখ্যাত নবী হযরত শুআয়েব আঃ। মুসা আঃ ইতোপূর্বে কখনো তার নাম শুনেননি বা তাকে চিনতেন না। তার কাছে মুসা আঃ তার বৃত্তান্ত সবকিছু বর্ণনা করলেন। শুআয়েব আঃ সবকিছু শুনে বললেন, ভয় করোনা, তুমি যালিম সম্প্রদায়য়ের কাছ থেকে মুক্তি পেয়েছ। এমন সময় মেয়ে দুটির একজন বলল, আব্বা! একে বাড়ীতে কর্মচারি হিসেবে রেখে দিন। কেননা আপনার কর্ম সহায়ক হিসেবে সে উত্তম হবে, যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত হবে। (সূরা-কাছাছ )
তখন তিনি মুসা আঃ কে লক্ষ্য করে বললেন, আমি আমার মেয়ে দুটির একজনকে তোমার সাথে বিবাহ দিতে চাই এই শর্তে যে, তুমি আট বছর আমার বাড়ীতে কর্মচারী হিসেবে থাকবে। তবে যদি দশ বছর পূর্ণ কর সেটা তোমার ইচ্ছা। আল্লাহ চাহে তো আমাকে সদাচারী হিসাবে পাবে। মুসা আঃ বললেন, আমার ও আপনার এই চুক্তি স্থির হল, দুটি মিয়াদের মধ্যে থেকে যে কোন একটি পূর্ণ করলে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকবে না। আমরা যা বলছি তার উপরে আল্লাহ তত্ত্বাবয়াক, (সূরা কাছাছ)
মূলত এটাই ছিল তাদের বিয়ের মোহরানা। ইতিপূর্বে ইয়াকুব আঃ তার স্ত্রীর মোহরানা বাবদ সাত বছর শ্বশুরালয়ে মেষ চড়িয়েছেন। ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, তিনি চাকুরীর বাধ্যতামূলক আট বছর এবং ঐচ্ছিক দু’বছর মেয়াদ পূর্ণ করেছিলেন। (সহীহ বুখারী, হা- ২৪৮৭)
মিসর যাত্রা-
মোহরানার চুক্তির মেয়াদ শেষ, দশ বছরে তিনি দু’টি পুত্র সন্তান লাভ করেন এবং শ্বশুরের কাছ থেকে এক পাল দুম্বা ও পরিবার নিয়ে স্বদেশ মিসর অভিমুখে রওয়ানা হলেন। পথিমধ্যে মিসর সীমান্তে সিনাই পর্বত মালার তুর পাহাড়ের কাছে পৌঁছালে হঠাৎ স্ত্রীর প্রসব বেদনা শুরু হলে আগুনের প্রয়োজনে দিশাহারা হয়ে চর্তুদিকে দেখতে লাগলেন। হঠাৎ দূরে আগুনের হলকা নজরে পড়লে স্ত্রীকে ও পরিবারকে বললেন, তোমরা এখানে অবস্থান কর, আমি আগুন দেখেছি, আমি তা থেকে তোমাদের জন্য কিছু আগুন নিয়ে আসি এবং পথের সন্ধান ও পাব। (সুরা ত্বোয়াহা- ১০)
মুসা আঃ তার শ্বশুরের উপদেশ অনুযায়ী পরিচিত রাস্তা ছেড়ে অপরিচিত রাস্তায় চলতে গিয়ে মরুভুমির মধ্যে পথ হারিয়ে তুর পাহাড়ের পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছে গেলেন। মুলতঃ পথ হারোনোটা আল্লাহর মহা পরিকল্পনার অংশ ছিল।
মুসা আঃ আশান্বিত হয়ে যতই আগুনের কাছে যান আগুনের হলকা ততই পেছাতে থাকে। আশ্চর্য হয়ে দেখলেন, সবুজ গাছের উপরে আগুন জ্বলছে অথচ গাছের পাতা পুড়ছে না, বরং তার উজ্জ্বলতা আরও বেড়ে যাচ্ছে। বিষ্ময়ে অভিভুত মুসা আঃ একদৃষ্টিতে আগুনের দিকে তাকিয়ে রইলেন। হঠাৎ এক গুরুগম্ভীর আওয়াজ কানে এলো, মুসা আঃ তখন তুর পাহাড়ের ডান দিকে তুবা উপত্যকায় দাঁড়িয়ে ছিলেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর তিনি যখন আগুনের কাছে পৌঁছলেন, তখন আওয়াজ এলো, হে মুসা! আমিই তোমার পালনকর্তা। অতএব তুমি তোমার জুতা খুলে ফেল। তুমি পবিত্র উপত্যকা তুবায় রয়েছ।’ (সূরা ত্বোয়াহা- ১১/১২)
আল্লাহ তাআলা বলেন, আর আমি তোমাকে মনোনীত করেছি। অতএব তোমাকে যা প্রত্যাদেশ করা হচ্ছে তা মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকো। নিশ্চয়ই আমিই আল্লাহ। আমি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই, অতএব আমার ইবাদত করো এবং আমার স্মরণে সালাত কায়েম কর, ক্বিয়ামত অবশ্যই আসবে, আমি তা গোপন রাখতে চাই, যাতে প্রত্যেকে তার কর্মানুযায়ী ফল লাভ করতে পারে, সুতরাং যে ব্যক্তি ক্বিয়ামতে বিশ্বাস রাখে না এবং নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, সে যেন তোমাকে নিবৃত না করে। তাহলে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে।’ (সূরা ত্বোয়াহা- ১৩/১৬)
এ পর্যন্ত আক্বীদা (বিশ্বাস) ও ইবাদতগত নিদের্শ দান করলেন।
চলবে……
লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, সাবেক ইমাম ও খতীব, দুপ্তারা, কুমারপাড়া, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ।