কালীগঞ্জটপ লিড

নিরাপদ সবজি চাষে সফল ঝিনাইদহের শাহজালাল

ঝিনাইদহের চোখঃ

উত্তম কৃষিচর্চার বৈশ্বিক মানদণ্ড নির্ধারণ করে গ্লোবাল গ্যাপ (গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিসেস)। ইউএসএআইডি ও গ্লোবাল গ্যাপের সহযোগিতায় দেশের চার শতাধিক চাষীকে উত্তম কৃষিচর্চার প্রশিক্ষণ দিয়েছে স্বপ্ন। গ্লোবাল গ্যাপের মানদণ্ড মেনে সবজি উৎপাদন করছেন এসব চাষী। তাদের একজন ঝিনাইদহের শাহজালাল

ক্ষেতের পটোল বিক্রি করে ভালো দাম পেয়েছেন। এবার আবাদ করেছেন পালংশাক। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমির পাশাপাশি বর্গা নেয়া জমিতেও লকলক করে বেড়ে উঠছে পালংয়ের ডাঁটা। কিছুদিন পর সেগুলো বিক্রি করে জমিতে বুনবেন নতুন বীজ। এভাবে বছরজুড়ে নানা সবজি চাষ করেই ভাগ্য বদলেছেন শাহজালাল। একই সঙ্গে তিনি বদলে দিচ্ছেন নিজের চারপাশটাও। তার দেখাদেখি নিরাপদ ও বিষমুক্ত সবজি চাষে ব্রতী হয়েছেন সুশীল, স্বপন, শহিদসহ কুল্লাপাড়ার অনেকে।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার গ্রাম কুল্লাপাড়া। এ গ্রামেরই কৃষক শাহজালাল। কৃষিতে তার বরাত যে বরাবরই ভালো ছিল, তা নয়। এমন অনেক মৌসুম গেছে, যখন ফসলের বাজারমূল্যের চেয়ে উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। জমি আবাদ থেকে শুরু করে ফসল কাটা পর্যন্ত খরচের ফিরিস্তি তো কম নয়। সার, বীজ, সেচ, কীটনাশক, আগাছা নিড়ানো—পদে পদে পরিশ্রম আর খরচ। এর মধ্যে উপর্যুপরি সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে গিয়েই ব্যয় বেড়ে যেত সবচেয়ে বেশি। ফসলের পেছনে বিনিয়োগ আর ফসল বিক্রিতে পাওয়া টাকা—দুয়ের মধ্যে ভারসাম্যটি শাহজালালের অনুকূলে আসতে থাকে একটি বিশেষ ঘটনার পর।

শাহজালাল জানান, একসময় মাঠে যে পরিমাণ কীটনাশক ও সার প্রয়োগ করতে হতো, তার সঙ্গে অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ফসলের উৎপাদন ব্যয় বেশি হতো। এ কারণে লাভের মুখ কমই দেখতেন তিনি।

এক বছর আগে স্বপ্ন রিটেইল চেইনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমানোর পরামর্শ দেন তারা। সে অনুযায়ী পরিমিত সার ও কীটনাশক প্রয়োগের কারণে কমে যায় ফসল উৎপাদনের খরচ। বারো মাসে নানা রকম সবজি-শাক উৎপাদন করেন তিনি। ক্ষেত থেকে ফসল ওঠানোর নির্দিষ্ট সময় আগে থেকে কীটনাশক দেয়া বন্ধ করায় সবজি থাকছে নিরাপদ ও বিষমুক্ত। স্বপ্ন চেইনের সুবাদে শাহজালালের উৎপাদিত সবজি ঝিনাইদহ থেকে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। ফসলের বাজার বিস্তৃতি এ কৃষকের পরিবারে এসেছে সচ্ছলতা। তার উৎপাদিত সবজি এখন এলাকায় ‘স্বাস্থ্যসম্মত সবজি’ বলে পরিচিত।

নিজের সাফল্য ও সুনামে ভর করে শাহজালাল অন্য বেকার যুবক ও কৃষকদের বিষমুক্ত সবজি চাষে উৎসাহিত করে এলাকায় রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছেন। তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে উত্তম কৃষিচর্চার পথে এসেছেন অনেকে। গ্রামের বহু নারী এখন বিষমুক্ত সবজি চাষ করছেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নানা সবজি আবাদ হয়েছে। সবজি বেড়ে ওঠায় চাষীরা এখন ব্যস্ত পরিচর্যায়। কেউ জমিতে নিড়ানি দিচ্ছেন, কেউ দিচ্ছেন বাঁশের ঝাংলা।

শাহজালাল বলেন, বারো মাসই আমি জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করি। সবজি বিক্রির টাকায় সংসার চলে। এ টাকায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে বিয়ে দিয়েছি। পরিবার এখন ভালোভাবেই চলছে। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করে আমি আত্মতুষ্টি ভোগ করছি। সবজি বাজারে নিয়ে গেলে সবার আগে আমারটা বিক্রি হয়।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম বলেন, স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সবজি উৎপাদন করছেন শাহজালালসহ কয়েকজন কৃষক। উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। উপজেলার অন্যান্য এলাকায়ও একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে কৃষকদের উৎসাহিত করা হবে।

বণিক বার্তা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button