অন্যান্য

দেশে বড় হচ্ছে উচ্ছিষ্ট শুটকির বাজার, এখন ৩০০ কোটি টাকার

ঝিনাইদহের চোখ ডেস্ক: দেশে সামুদ্রিক মাছের শুঁটকির অভ্যন্তরীণ বাজার বাদ দিলেও শুধু রফতানি বাজারই আছে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উচ্ছিষ্ট মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণীর শুঁটকির বাণিজ্য। জেলেরা জানান, প্রতি বছর শুঁটকির মৌসুমে অবাঞ্ছিত মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণীর শুঁটকি বিক্রি হয় প্রায় ৩০০ কোটি টাকার। কক্সবাজারের জেলেরা এটিকে বলেন ‘শুঁটকি গুঁড়া’ আর বাগেরহাটের জেলেরা বলেন ‘রাবিশ’। এ শুঁটকি গুঁড়ার মূল ক্রেতা মাছ ও গবাদি পশুর খাদ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানি।

কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক শুঁটকি মহালের পাশেই গড়ে উঠেছে বিশাল শুঁটকি গুঁড়ার মহাল। শুঁটকি গুঁড়া ব্যবসায়ী ও সাপ্লায়ার্স সমবায় সমিতি নামে একটি সংগঠনও রয়েছে নাজিরারটেকে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এজাবত উল্লাহ কুতুবী জানান, নাজিরাটেকে ২০০ ব্যবসায়ী প্রতি বছর ৪৫ হাজার টন শুঁটকি গুঁড়া বিক্রি করেন, যার মূল্য প্রায় ২৫০ কোটি টাকা।

অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে জেগে ওঠা সুন্দরবনের দুবলার চরের শুঁটকিপল্লীতে প্রতি মৌসুমে ২০ হাজার মণ গুঁড়া শুঁটকি উৎপাদিত হয় বলে জানান জেলেরা।

কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়াপাড়া এলাকার ফিশিং ট্রলার মালিক ফরিদুল আলম জানান, খাবার অনুপযোগী যেসব মাছ ধরা পড়ে এবং কূলে ফিরতে ফিরতে যেসব ছোট মাছ পচে নষ্ট হয়ে যায়, সেগুলো শুঁটকির গুঁড়া ব্যবসায়ীরা কিনে নেন। কেজিপ্রতি ১৫-২০ টাকা বিক্রি হয়। পরে সেগুলো শুকানো হয়। এর ফলে ট্রলার মালিকদের বাড়তি আয়েরও সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তবে দুবলার চরে জেলেরাই এ গুঁড়া শুঁটকি (তাদের ভাষায় রাবিশ) তৈরি করে পাইকারি দরে বিক্রি করেন। জেলেরা জানান, সাগর থেকে ধরা ছোট কাঁকড়া, কামট, অক্টোপাস, পটকা, দোয়াত কলম, টেপা মূল্যে মাছ ও চিংড়ির মাথা শুঁটকি হিসেবে বিক্রি করা যায় না। এগুলোকে তারা রাবিশ বলেন। এগুলো শুকিয়ে ঘরের মধ্যে স্তূপ করে রাখি। দু-তিন সপ্তাহ পর দু-তিন মণ জমে যায়। মণপ্রতি ১৪শ-১৬শ টাকা দরে বিক্রি করা হয়।

রাবিশ ব্যবসায়ী আনছার ফকির বলেন, দুবলার চর থেকে রাবিশ কিনে খুলনার লবণচোরা, পাথরঘাটাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। তারা আবার ভালুকা, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের বড় বড় ফিশ ফিড কোম্পানির কাছে বিক্রি করেন।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান জানান, শুঁটকির পাশাপাশি দুবলার চরে রাবিশে প্রতি কুইন্টালে ২০ টাকা করে রাজস্ব আদায় হয়। চলতি অর্থবছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত রাবিশ থেকে ২৩ হাজার ৭৭৫ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।

অন্যদিকে কক্সবাজারের নাজিরারটেক থেকে প্রতি সপ্তাহে ১৫-২০ ট্রাক শুঁটকির গুঁড়া বিক্রি হয়। প্রতি ট্রাকে ২০-২৫ টন করে গুঁড়া পরিবহন করা যায়। নভেম্বর থেকে মৌসুম শুরু হয়ে টানা নয় মাস চলে এ ব্যবসা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button