টপ লিডশৈলকুপা

ঝিনাইদহের লাঙ্গলবাঁধে ডাকাতির ভয়ে পাহারা দিচ্ছে গ্রামবাসী

ঝিনাইদহের চোখঃ

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার লাঙ্গলবাঁধে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ফলে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে এলাকাবাসী।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহের শৈলকুপা ও মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার সীমান্তে এই লাঙ্গলবাঁধ এলাকায় বর্তমানে প্রতিনিয়ত চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, সন্ত্রাসী ও নানা অসামাজিক কার্যকালাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় এখানকার বসবাসকারী বাসিন্দারা চরম আতঙ্কে দিন যাপন করছে।
ডাকাতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য গ্রামবাসী রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে।

গত ৩ মার্চ লাঙ্গলবাঁধের শ্মশান ঘাটের পাশে হোমিও চিকিৎসক বিল্লাল হোসেনের বাড়িতে রাত ৩টার দিকে ১২-১৫ জনের একটি সন্ত্রাসী দল অস্ত্র নিয়ে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাদের মারধর করে ৮০ হাজার টাকা ৫ ভরি স্বর্ণ ও দুটি মোবাইল সেটসহ প্রায় ৪ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। ডাকাতেরা ডাকাতি শেষে চলে যাওয়ার সময় বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য জীবননাশের হুমকি দেয়।

৪ ফেব্রুয়ারি লাঙ্গলবাঁধের বাজারসংলগ্ন শৈলকুপা উপজেলার নতুন ভুক্ত মালিথিয়া গ্রামের বাসিন্দা সার ব্যবসায়ী আব্দুল করিমের বাড়িতে ঢুকে প্রায় দুই লাখ টাকা নিয়ে যায় ডাকাতেরা। ডাকাতের অস্ত্রের আঘাতে করিম গুরুতর আহত হন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে নতুন ভুক্ত মালিথিয়া বেবিট্যাক্সিস্ট্যান্ডে রায়হান নামের এক ব্যবসায়ীর দোকান থেকে ২ লাখ টাকা ক্যাশবাক্স থেকে চুরি করে নিয়ে যায় চোরেরা।

২ ফেব্রুয়ারি রাতে পুলিশ ক্যাম্পের প্রায় ৫০০ গজ দূরে স্কুলশিক্ষক পিকুল নামের এক ব্যক্তির বাড়ির গেটের দরজা ভেঙে তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল ডাকাতি করে নিয়ে যায় ডাকাত দল বলে তিনি জানান। থানায় কোনো অভিযোগ দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ মালামাল উদ্ধার করার আশ্বস্ত করায় মামলা করিনি।

গত ১৫ মার্চ গভীর রাতে উলুবাড়িয়া গ্রামের কলেজশিক্ষক বসির উদ্দিনের বাড়িতে বসবাসকারী এনজিও কর্মী রবিউল ইসলামের স্ত্রীর গলার চেইন জানালা ভেঙে চুরি করে নিয়ে যায় বলে তিনি জানান।

এ ছাড়াও গত ফেব্রুয়ারি মাসে লাঙ্গলবাঁধ বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামের দোকান থেকে ৩ লাখ টাকা ও সিন্ধুকের তালা ভেঙে প্রায় ৮ ভরি স্বর্ণ চোরেরা চুরি করে নিয়ে যায়।

গত ২ ফেব্রুয়ারি শৈলকুপায় বাজারসংলগ্ন নতুন ভুক্ত মালিথিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী জাহিদ হোসেনের বাড়িতে ডাকাতরা হানা দেয়ার চেষ্টা করলে গ্রামবাসীর চিৎকারে ডাকাতরা পালিয়ে যায়। অথচ এই বাড়িতে বাসা ভাড়া নিয়ে মালিথিয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই সমিরন কুমার বৈদ্য প্রায় ৩ বছর ধরে বসবাস করে আসছে।

এদিকে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও নানা অসামাজিক কার্যকলাপ ঠেকাতে গ্রামবাসী রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে বলে গ্রামের বাসিন্দা মনজু হোসেন জানান।

এ ব্যাপারে স্থানীয় গয়েশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম মোল্যা বলেন, আমি গ্রামবাসীকে রাত জেগে পাহারা দিতে বলেছি। তবে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেশি ইদানীং লক্ষ করা যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে মালিথিয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই সমিরন কুমার বৈদ্য বলেন, ক্যাম্পের পাশে হলেও এলাকাটি শ্রীপুরের মধ্যে হওয়ায় কিছু করতে পারছি না।

শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী আয়ুবুর রহমান আমার এলাকার মধ্যে কোনো ডাকাতি হচ্ছে না বলে দাবি করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য আমি পুলিশ ও গ্রামবাসীর সমন্বয় করে এলাকা পাহারা দেয়ার ব্যবস্থা করেছি।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহাবুব রহমান জানান পাশের এলাকা পাংশা, বালিয়কান্দি থেকে ডাকাত দলের সদস্যরা এখানে এসে বিভিন্ন অপকর্ম করে বলে জেনেছি। তবে এলাকাটি আমার উপজেলার মধ্যে হলেও মালিথিয়া পুলিশ ক্যাম্পের পাশে। আমি দুজন অফিসার ও ৬ জন পুলিশ সদস্য এবং গ্রামবাসী দিয়ে ওখানে রাত জেগে পাহারা দেয়ার ব্যবস্থা করেছি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button