ইবিতে ‘অঘোষিত ১৪৪ ধারা’ জারি, ২২ শিক্ষার্থী আটক
ঝিনাইদহের চোখঃ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির দাবিতে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদভুক্ত পাঁচ বিভাগের শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন থেকে ২২ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। আন্দোলন ঠেকাতে ক্যাম্পাসে চলছে অঘোষিত ১৪৪ ধারা।
২৪ এপ্রিল, বুধবার ভোররাতে অনশনরত এসব ২২ শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ইবি থানার ওসি রতন শেখ জানান, ২২ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। তাদের কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির দাবিতে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবনের সামনে আমরণ গণ-অনশনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদভুক্ত পাঁচ বিভাগের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা এ অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. রাশিদ আসকারী বলেন, ‘এ ঘটনার পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে। প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে আমরা কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ দুই জেলার প্রশাসন এবং গোয়েন্দাদের সঙ্গে কথা বলছি।’
ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির দাবিতে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদভুক্ত পাঁচ বিভাগের শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন চলছিল। ২৩ এপ্রিল, মঙ্গলবার অনশনরত কয়েক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লেও প্রশাসন ও অনুষদের ডিন তাদের সঙ্গে দেখা করেননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দুপুর ২টায় অনুষদের ডিন অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা। এতে অফিসের ভেতরে আটকা পড়েন অফিস সহকারী আবদুল মমিন ও পিয়ন বাদল।
রাত ৯টায় অবরুদ্ধ দুই কর্মচারীকে উদ্ধার করতে আসেন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মমতাজুল ইসলাম ও ছাত্র-উপদেষ্টা ড. পরেশ চন্দ্র বর্মণ। তারা ভবনের ভেতরে ঢুকলে তাদেরও অবরুদ্ধ করেন আন্দোলনকারীরা। একই সঙ্গে কলাপসিবল গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন।
পরে ডিন ও ছাত্র উপদেষ্টাকে উদ্ধার করতে রাত ১টার দিকে সাবেক প্রক্টর প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আনিসুর রহমান এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর আহসান-উল হক আম্বিয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তারা ভোররাত ৪টা পর্যন্ত দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সমঝোতা করতে ব্যর্থ হন।
এর আগে রাত সাড়ে ১১টা থেকেই পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।
ভেতরে ঢুকে ডিন, ছাত্র উপদেষ্টা ও দুই কর্মচারীকে উদ্ধার করেন তারা। এ সময় শিক্ষার্থীরা করিডোরে অবস্থান নিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে তাদের আটকানোর চেষ্টা করে স্লোগান দিতে থাকেন।
এ সময় পুলিশ ও র্যাবের যৌথবাহিনী আরিফুল ইসলাম, তারিক, রাজ, মাহাদী, রিয়াদ, অভি, দেলাওয়ার, হাফিজ, সাব্বিরসহ ২২ শিক্ষার্থীকে আটক করে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে নিয়ে যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকাল ৯টা থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির দাবিতে পাঁচ বিভাগের শিক্ষার্থীরা এবং ভর্তিতে বর্ধিত ফি কমানোর দাবিতে ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা দুপুর ১২টা থেকে আন্দোলনের ঘোষণা দেন।
তাদের ঠেকাতে ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অঘোষিত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে সব ধরনের সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে মাইকিং করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীদের বের হতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ-র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ থেকে শিক্ষার্থীদের গাড়ি চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। তবে বাধা উপেক্ষা করে ডিগ্রির দাবিতে সকাল ১০টার দিকে মিছিল দিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এরপর দুপুর ১২টার দিকে তারা মুক্তবাংলার সামনে অবস্থান নেন এবং তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।