দেখা-অদেখা

‘বাঘেরহাট’ থেকে বাগেরহাট

ঝিনাইদহের চোখঃ

খুলনা বিভাগের একটি জেলা বাগেরহাট। এই জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেষে অবস্থিত। এই জেলার ভূখন্ড খুব পুরনো না হলেও বাগেরহাটের সমৃদ্ধির ইতিহাস উপমহাদেশের বহু প্রাচীন জনপদের সমপর্যায়ের বলা চলে।

বাগেরহাটের নাম কে, কখন, কিভাবে দিয়েছিলেন তা আজ নিরূপন করা দুঃসাধ্য একটি ব্যাপার। অনেকের মতে বাগেরহাটের কাছেই সুন্দরবন থাকায় এলাকাটিতে বাঘের উপদ্রব ছিল। এ জন্যেই এ অঞ্চলটির নাম হয়ত “বাঘেরহাট” থেকে বাগেরহাট-এ রূপান্তরিত হয়েছে। তবে সর্বজনবিদিত মতবাদটি হচ্ছে- শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ভৈরব নদীর উত্তর দিকের হাড়িখালী থেকে বর্তমান নাগের বাজার পর্যন্ত যে লম্বা বাঁক অবস্থিত, অনেক আগে সেই বাঁকের পুরাতন বাজার এলাকায় হাট বসত। আর এই হাটের নামেই স্থানটির নাম হয় বাঁকেরহাট। কালের ক্রমে বাঁকেরহাট পরিবর্তিত হয়ে ‘বাগেরহাট’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে।

১৯৮৪ সালে বাগেরহাট মহকুমা জেলায় রূপান্তরিত হয়। বাগেরহাট জেলা ৯টি উপজেলা ও ৩ টি পৌরসভার সমন্বয়ে গঠিত। এই অঞ্চলের মানুষ প্রধানত কৃষি নির্ভর। এখানে প্রচুর পরিমাণে নারিকেল ও সুপারি উৎপাদিত হয়। ধান চাষ, মাছ ধরা ও বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করেও এ অঞ্চলের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এছাড়াও সুন্দরবন উপকূলের মানুষেরা মধু ও গোলপাতা সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে।

অনার্য শ্রেণীর মানুষ এই অঞ্চলে প্রথম বসতি স্থাপন করেছিল বলে জানা যায়। এদের মধ্যে ভূমধ্য সাগরীয় অঞ্চল হতে আসা অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় এবং মঙ্গোলীয় আলপাইনরাও রয়েছে। এছাড়া বাগেরহাটে এক শ্রেণীর মৎস্য শিকারী বা জেলে বসবাস করে; যাদের আদি পুরুষ নিগ্রোবটু। এই নিগ্রোবটুরা ভারতীয় উপমহাদেশের আদিমতম অধিবাসী।

বাগেরহাট জেলার অতি প্রাচীন স্থান পানিঘাটে প্রাপ্ত কষ্টি পাথরের অষ্টাদশ ভূজা দেবীমূর্তি, চিতলমারী উপজেলাধীন খরমখালি গ্রামে প্রাপ্ত কৃষ্ণ প্রস্তরের বিষ্ণু মূর্তি এসব নিদর্শন এখানে হিন্দু সভ্যতা বিকাশের পরিচয় বহন করে। ১৪৫০ খ্রি: খানজাহান আলী (রঃ) খাঞ্জেলী দীঘি খনন করানোর সময় অনন্য সাধারণ ধ্যাণী বৌদ্ধমূর্তি পাওয়া যায় যা এ অঞ্চলে বৌদ্ধ প্রভাবের পরিচয় বহন করে থাকে।

এই অঞ্চলে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। সেগুলো হলো: ষাট গম্বুজ মসজিদ, সুন্দরবন, হযরত খানজাহান আলী (রঃ) ও তার মাজার, খাঞ্জেলী দীঘি, সিংগাইর মসজিদ, নয়গম্বুজ মসজিদ, সাবেকডাঙ্গা পূরাকীর্তি, জিন্দাপীর মসজিদ, কোদলা মঠ, বাগেরহাট জাদুঘর ইত্যাদি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button