রাজা টংকনাথের রাজবাড়ি
ঝিনাইদহের চোখঃ
বাংলার প্রতিটি অঞ্চলেরই রয়েছে সমৃদ্ধ অতীত ইতিহাস। সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই এসব অঞ্চল শাসন করেছেন বিভিন্ন রাজা। আর এই রাজা ও জমিদারগণ তাদের বসবাসের জন্য তৈরি করতেন অপূর্ব সব ইমারাত। এই বাড়িগুলো অবশ্য সাধারণ মানুষদের মুখে জমিদার বাড়ি অথবা রাজবাড়ি নামেই পরিচিত। কালের পরিক্রমায় আজ না আছে রাজা-জমিদার, না আছে তাদের বাড়ির দাপট। তবে টিকে আছে রাজা ও জমিদারদের রেখে যাওয়া বাড়ি।
এর মধ্যেকোনো কোনো জমিদার বাড়ি ৪০০ বছর আগের, আবার কোনোটি তার চেয়েও বেশি। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো যেসব জমিদার বাড়িগুলো টিকে রয়েছে তার মধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশৈংকল উপজেলায় অবস্থিত রাজা টংকনাথের রাজবাড়ি একটি।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে রাণীশৈংকল উপজেলায় রাজা টংকনাথ চৌধুরীর বাড়িটির অবস্থান। এটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে কুলিক নদীর তীরে। এই বাড়িটি পূর্বে মালদুয়া পরগণার অন্তর্ভুক্ত হলেও পরে রাণীশৈংকল উপজেলার অন্তর্ভুক্ত হয়।
এই জমিদার বাড়িটির কাজ শুরু করেছিল বুদ্ধিনাথ অর্থাৎ রাজা টংকনাথ এর বাবা। তবে শুরু করলেও তিনি শেষ করতে পারেননি। বাকি অসমাপ্ত কাজটুকু শেষে করেন রাজা টংকনাথ। এই রাজবাড়িটির পশ্চিমদিকে রয়েছে সিংহদরজা। দরজার একদম চূড়ায় দিক নির্দেশক হিসেবে রয়েছে S.N.E.W চিহ্ন। রাজবাড়ির সাথ ঘেঁষে উত্তর-পূর্ব কোণে রয়েছে কাছারিবাড়ি, পূর্বদিকে রয়েছে দু’টি পুকুর। রাজবাড়ির দক্ষিণে কুলিক নদীর তীরে রাস্তার পূর্বপ্রান্তে রয়েছে রামচন্দ্র মন্দির। এই মন্দিরটি অবশ্য রাজবাড়ির চেয়েও বহু প্রাচীন।
রাজা টংকনাথ উচু মাপের রাজা না হলেও তার জীবনে আভিজাত্যের কমতি ছিল না। ১৯২৫ সালে তৎকালীন বৃটিশ সরকার রাজা টংকনাথকে ‘চৌধুরী’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
এই রাজার ইতিহাস সম্পর্কে যেটুকু জানা যায় তা হলো, রাজা টংকনাথের পিতা বুদ্ধিনাথ চৌধুরী ছিলেন মৈথিলি ব্রাহ্মণ। তিনি কাতিহারে গোয়ালা বংশীয় জমিদারের শ্যামরাই মন্দিরের সেবায়েত। সেই গোয়ালা জমিদার ছিলেন বৃদ্ধ এবং নিঃসন্তান। তিনি কাশী যাওয়ার সময় তার সমস্ত জমিদারি সেবায়েতের নিয়ন্ত্রণে রেখে যান। সেই সাথে একটি তাম্রপাতে দলিল করে যান। দলিল অনুযায়ি, তিনি যদি কাশী থেকে ফিরে না আসেন তবে শ্যামরাই মন্দিরের সেবায়েত এই পুরো জমিদারির মালিক হবেন। পরে সেই বৃদ্ধ জমিদার আর ফিরে আসেননি যার ফলে বুদ্ধিনাথ জমিদারি পেয়ে যান। তবে অনেকের ধারণা এই ঘটনা বুদ্ধিনাথের দু এক পুরুষ আগেরও হতে পারে।
যেভাবে যাবেন:
ঠাকুরগাঁও জেলা শহরে পৌঁছে অথবা রাণীশৈংকল উপজেলা শহরে নেমে সেখান থেকে যেকোনো লোকাল বাসে করে যেতে পারবেন রাজা টংকনাথের রাজবাড়িতে।