টপ লিডমহেশপুর

ঝিনাইদহের ফতেপুর বাওড়টি মাছ চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে

#জাহিদুল ইসলাম, ঝিনাইদহের চোখঃ

মহেশপুরের ফতেপুর সরকারী বাওড়টি এখন গো-চরন ভূমি, মাছ চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দেখার কেউ নেই।

ঝিনাইদহ জেলার উল্লেখযোগ্য একটি বাওড় ফতেপুর সরকারী বাওড়। কপোতাক্ষ নদের অংশ বিশেষ এই বাওড়টি পাকিস্থান আমল থেকে সরকারীভাবে মাছ চাষ করা হয়। এখান থেকে সরকার প্রচুর পরিমান রাজস্ব পেয়ে থাকে। বর্তমানে শুকিয়ে মরা খালে পরিনত হয়েছে। কিছু অংশ ডাঙ্গা হওয়ায় গো-চরন ভূমিতে পরিনত হয়েছে। লক্ষমাত্রা অর্জনে সংশয় দেখা দিয়েছে। এটি দীর্ঘদিন খনন না করায় মাছ চাষের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে।

ফতেপুর গ্রামে ব-দ্বীপ আকারে তৈরী হয়েছে ফতেপুর বাওড়, মধ্যে খানে গ্রামের নামহয়েছে বেড়ের মাঠ। এটি ফতেপুর গ্রামের অংশ ১৭৯৪ সালের যশোর জেলার কালেক্টরের এক প্রতিবেদনে এই নদের মধ্যে চর সৃষ্টির উল্লেখ করা হয়েছে। চর সৃিিষ্টর কারনে ¯্রােত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নদের দুইমুখ বন্ধ করে দেওয়ায় বাওড় সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহত্তর যশোর ও কুষ্টিয়া জেলায় বাওড়ের আধিক্ষ্য দেখা যায়। বাওড়ের বৈশিষ্ট হচ্ছে সারা বছর অধিকাংশ সময় পানি থাকে এবং সে কারনে মৎস্য চাষ হয়।
জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলায় ছোটবড় ৩৬টি বাওড় আছে তন্মধ্যে মহেশপুর উপজেলায় ১৩টি এর একটি ফতেপুর বাওড়। যার আয়াতন ৪৭ হেক্টর বা ১১৬একর। ১৯৫২ সালের জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের আগ পর্যন্ত এটি সুন্দরপুর জমিদারদের নিয়ন্ত্রনে ছিল। এই বংশের শেষ জমিদার খান সাহেব ফজলুর রহমান চৌধুরী ১৯৫৮ সালে মারা যাওয়ার পর এই বাওড়টি একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ব্যাক্তিরা মাছ চাষ করতো।

এরা হলেন একতারপুর গ্রামের ইজ্জত আলী কারীকার, খাইরুল্লাহ বিশ্বাস, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তবিবর রহমান খান, ফতেপুর গ্রামের এরশাদ আলী ধাবক , কানাইডাঙ্গা গ্রামের খালেক মন্ডল। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের দিকে সরকারী ভাবে মাছ চাষ হতে থাকে। বাওড় ম্যানেজার হিসাবে যারা দায়িত্ব পালন করেন এদের মধ্যে সহিদ সাহেব, মোশারেফ হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, নুরুন্নবী, জুড়োন সরকার, আবু সাইদ উদ্দিন সরকার , সিরাজুল ইসলাম, মাহবুব রহমান, আব্দুর রউফ, এটিএম আলী হাসান খসরু ,আঃ খালেক , বশিউর জামান, আশরাফ উদ্দিন ইকবাল হোসেন, নাজিম উদ্দিন, আব্দুল মজিদ, রবিউল ইসলাম, হরিদাস কুমার দেবনাথ, বর্তমান ম্যাজেনার রিপন হোসেনের নাম উল্লেখ্য যোগ্য । এই বাওড়ের কোল ঘেষে বিখ্যাত নামকরা লোকজনের বাড়ী ছিল এরা হলেন শ্রী গোপাল চট্র্যেপাধ্যায়(জজ), শ্রী অমুল্যে গোপাল চট্রোপাধ্যায় (জজ),শ্রী বিহারী লাল মুখাজী (উকিল) শ্রী নগেন্দ্রনাথ (কলকাতা কলেজের গনিতের শিক্ষক )এক সময় এখান থেকে ২টি জাহাজ কলকাতা যাতায়াত করতো জাহাজ দুটি হলো কলকাতা মার্টিন কোম্পানীর যোগেশ ও হুগলী জেলার জমিদারদের জ্ঞানেশ নামে ২টি জাহাজ চলাচল করত।

বাওড়ের অফিস হিসাবে অমুল্য জজের বাড়ীটি ব্যবহার করা হত এখানে প্রায় ৮৮শতক জমি রয়েছে। ১৯৮৩ সালে বিশ্বব্যাংক ২০ বছরের জন্য চুক্তি করলে এর উন্নয়ন ঘটে। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ বলুহর ও ফতেপুর বাওড় উদ্ধোধন করেন । তাদের মেয়াদ শেষ হলে মৎস্য অধিদপ্তর ও ভুমি মন্ত্রনালয় স্থানীয় মৎস্য জীবীদের মাধ্যমে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এই বাওড়ে বিভিন্ন সরকারের আমলে মৎস্য মন্ত্রীর আগমন ঘটেছে। বর্তমান মৎস্য জীবীরা হতাশা গ্রস্থ হয়ে পড়েছে। বাওড়টি এই অবস্থায় থাকলে লক্ষমাত্রা অর্জন করা সম্ভব নয় বলে মৎস্যজীবিদের নেতা শ্রী সুশান্ত হালদার জানিয়েছেন।

বাওড় ম্যানেজার রিপন হোসেন বলেন, বাওড়ে অধিকাংশ জায়গা ডাঙ্গা হয়ে গেছে লক্ষমাত্রা অর্জন করা দূরহ ব্যাপার। তবে খনন কাজ করা হলে লক্ষমাত্রা বাড়ানো সম্ভব। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে একাধিকবার মৎস্য অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button