টপ লিডমহেশপুর

ঝিনাইদহে শতাধিক মানুষের চলাচলের রাস্তাটি প্রাচীর তুলে বন্ধ করলো ১টি পরিবার

#ঝিনাইদহের চোখঃ

৬০ বছরের অধিক পুরাতন মাটির রাস্তা। রাস্তাটি দিয়ে একটি পাড়ার ৪০ পরিবারের ২ শতাধিক মানুষ যাতায়াত করেন। স্থানিয় এক প্রভাবশালী পরিবার সেই রাস্তাটির সামনে সীমানা প্রাচীর তুলেছেন, নির্মান করেছেন ফটক। আটকে দিয়েছেন জনসাধারনের চলাচলের একমাত্র পথটি। পাড়ায় মানুষগুলো গত তিন মাস জঙ্গল আর কবরস্থান পেরিয়ে ঘরে ফিরছেন। এই অবস্থা ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার সুয়াদী গ্রামের।

স্থানিয়রা বলছেন, রাস্তাটি মালিকানা জমির উপর দিয়ে পাড়ার মধ্যে চলে গেছে। ওই পাড়ায় বসবাসকারী সকলেই নিজেদের চলাচলের প্রয়োজনে রাস্তার জন্য জায়গা ছেড়ে বাড়িঘর নির্মান করেছেন। কিন্তু সীমানা প্রাচীর দেওয়া ওই স্থানে এক দাগে ২৮ শতক জমি ছিল। জমির মালিক রাস্তার কারনে ৩ শতক রেখে ২৫ শতক বিক্রি করেন। কিন্তু ক্রেতা প্রভাবশালী নাসির উদ্দিন ও তার ভায়েরা ২৮ শতকই গোপনে রেকর্ড করে নিজেদের জমি দাবি করে এখন জনগনের পথ আটকে দিয়েছেন।

অবশ্য এই পথ উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই আদালত থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালী ওই পরিবারের পক্ষ থেকে সেই নির্দশ মানা হয়নি, তারা এই নির্দেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে মহেশপুর উপজেলার সুয়াদী গ্রামের বিল পাড়ায় ৪০ টির অধিক পরিবার বসবাস করেন। এই পাড়ার পশ্চিম দিয়ে চলে গেছে কোটচাঁদপুর-সরোজগঞ্জ ভায়া সাব্দালপুর সড়ক। এই সড়ক থেকে পূর্ব দিকে বেরিয়েছে একটি মাটির রাস্তা। যে রাস্তাটি পাড়ার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত রয়েছে। মাটির এই রাস্তাটির দুই পাশে ওই পাড়ার পরিবারগুলো বসবাস করেন। ওই পাড়ায় যারা বাস করেন তাদের বেশির ভাগ হতদরিদ্র। ৫ জন আছেন যারা পেশায় ভ্যান চালক। পাড়ার মানুষগুলো আর ভ্যান চালকদের ভ্যানগুলো বাইরে বের করতে পারছেন না। উত্তর পাশের জঙ্গল আর কবরস্থান পেরিয়ে যাতায়াত এবং ৩/৪ জন ধরাধরি করে ভ্যানগুলো আনা-নেওয়া করছেন।

পাড়ার বাসিন্দা মুরাদ আলী জানান, ৬০ বছরের অধিক এই পাড়ার মানুষগুলো এই রাস্তায় চলাচল করেন। তারা নিজেরা চলাচলের প্রয়োজনে রাস্তার জন্য জমি রেখে বাড়িঘর নির্মান করেছেন। পশ্চিম পাশের পিচ রাস্তার সঙ্গের জায়গাটি ছিল ওই গ্রামের সামছুল ইসলামের। তার ২৮ শতক জমির এক পাশ দিয়ে আছে কাঁচা রাস্তাটি। সামছুল ইসলামের জমির দক্ষিনে ছিল নাসির উদ্দিনের পিতা মৃত নবীছ উদ্দিনের বাড়ি। সামছুল ১৯৮৩ সালে নবীছ উদ্দিনের কাছে ২৫ শতক জমি বিক্রি করেন। রাস্তা থাকায় তিনি ৩ শতক জমি বিক্রি করেননি। নবীছ উদ্দিন জীবিত থাকা কালে নিজেও রাস্তা দখল করেনি। কিন্তু সম্প্রতি তার ছেলেরা রাস্তার জায়গা সহ ২৮ শতক জমিই প্রাচীর দিয়েছেন। যে স্থানে রাস্তা ছিল তার একপ্রান্তে প্রাচীর আরেক প্রান্তে গেট নির্মান করেছেন। যার কারনে গোটা রাস্তায় বন্ধ হয়ে গেছে।

আরেক বাসিন্দা জামাত আলী জানান, এ বিষয়ে তারা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ করেছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে একদফা রাস্তা খুলে দেওয়ার জন্য নির্দেশও দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা উল্টো তাদের নামে আদালতে মামলা করেছেন। অভিযোগ করেছেন বাদির দখলে থাকা জমিতে তারা জোর করে রাস্তা তৈরীর চেষ্টা করছেন।
তিনি আরো জানান, পাড়ার বাসিন্দারা আদালতে জবাব দেন এবং রাস্তাটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখতে নির্দেশ চেয়ে আবেদন করেন। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে কোটচাঁদপুর সহকারী জজ আদালতের বিচারক গত ২৯ এপ্রিল বাদি পক্ষকে জনগনের চলাচলের জন্য রাস্তার মুখে স্থাপন করা গেটটি খুলে ফেলার নির্দেশ দেন। কিন্তু আজো তারা গেটটি সরিয়ে নেননি।
বিবাদী পক্ষের আইনজীবী মাসুদ কামাল জানান, তারা এই আদেশ না মেনে এর বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করেছেন। কিন্তু পূর্বের আদেশ এখনও বাতিল হয়নি।
এ বিষয়ে প্রাচীর নির্মাণকারী নাসির উদ্দিন জানান, ২৮ শতক জমিই তাদের। তারা নিজেদের জমির উপর দিয়ে কাউকে যেতে দিতে পারেন না। তাছাড়া প্রাচীরের বাইরে উত্তর পাশ দিয়ে তারা চলাচল করতে পারেন।

অবশ্য স্থানিয়রা বলছেন উত্তর পাশ দিয়ে যেতে হলে জনৈক খোকা মিয়ার জমির উপর দিয়ে যেতে হবে।

জমির মুল মালিক সামছুল ইসলাম জানান, তার বয়স ৭২ বছর। তার জীবনদশায় এখানে রাস্তা দেখছেন। তার নিজের জমির উপর দিয়ে ওই পাড়ার মানুষগুলো যাতাযাত করতো। যে কারনে তিনি ২৫ শতক জমি বিক্রি করেন, ৩ শতক ফেলে রাখেন। কিন্তু নাসির উদ্দিনের বাবা নবীছ উদ্দিন আরএস রেকর্ডে গোপনে ২৮ শতকই রেকর্ড করেছেন। এই রেকর্ডের শক্তিতে তারা রাস্তা বন্ধ করেছেন। এটা অন্যায় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এ বিষয়ে সাব্দালপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস.আই নিরব হোসেন জানান, বিষয়টি বর্তমানে কোন পর্যায়ে আছে তা যানা নেই। তার পূর্বে যে কর্মকর্তা এখানে দায়িত্বে ছিলেন তিনি রাস্তা বন্ধ করা নিয়ে যেন কোনো বিশৃংখলা না হয় তার জন্য উভয় পক্ষকে স্থিতিয়াবস্তা বজায় রাখতে নোটিশ দিয়েছিলেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button