আহারে প্রবাস জীবনের ঈদ!–মাহবুব হাসান, কুয়ালালামপুর
#মাহবুব হাসান, কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া, ঝিনাইদহের চোখঃ
এপার্টমেন্টের সামনের মালয় রেস্টুরেন্টটা আজ সন্ধ্যায় বড্ড ফাকা-ফাকা লাগছে। অন্যান্য দিন স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্নজাতি ও বয়সীদের ভিড় থাকে। ক্ষুধা পেটে সাত-পাঁচ বেশি ভাবার সময় পেলাম না!
খাবার শেষে যখন বাসায় ফিরছি তখন লম্বা পার্কিং এরিয়াটা ও বেশফাকা, চারিদিকের পরিবেশটা ও কেমন জানি জনমানবশূন্য!
কয়েকপা এগুতেই মুরুব্বী গোছের ভদ্রলোক সালামের উত্তর দিয়েই জিজ্ঞাসা করলো-“ কি খবর , ঈদতো চলে আসলো দেশে যাবেনা?”
সত্যি বলতে কি মাথায়ই ছিল না মাত্র একদিন বাদেই মুসলিমদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব, ঈদুল আযহা। সম্পূর্ন অপ্রস্তুত অবস্থায় উত্তর দিলাম -ঃ না, এবার যাচ্ছি না!
উত্তর দেয়ার সাথে সাথেই চোখ দু’টো যেন বাঁধ মান ছেনা! কি যেন অজানা হাহাকার বুকের ভিতর তোলপাড় শুরু করে দিয়েছে, যা পরিনত হয়েছে অশ্রুতে! আহারে জীবন ,প্রবাস জীবন ! সব থেকেও কিছুই যেন নেই!
২০১৬ সালের শেষ দিক থেকে প্রবাসী হিসেবে মালয়েশিয়ায় বসবাস করছি।
গত বছর দেশে যাওয়া হলেও দেশের বাইরে পা রাখার পর সবগুলা ঈদই এই বিভূঁইয়ে করা হয়েছে।
প্রবাসে ঈদ বা ঈদের আনন্দ তারাই বোঝে যারা মায়ার বাঁধন থেকে যোজন-যোজন দূরে বসবাস করছে। প্রবাসে ঈদ মানে স্রেফ একটা কর্মহীন দিন( অনেকেরই ঈদের দিনটাতেও কাজ করতে হয়)!
নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হওয়ায় ছোটবেলা থেকে নিজে আয় করা পর্যন্ত ঈদ আমার মাঝে তেমন কোনো উন্মাদনা কখনোই সৃষ্টি করতে পারেনি। বিদ্যা-বুদ্ধিতে কিংবা সারা বছরের কাপড়-চোপড়ে তালমিলিয়ে চলতে পারলেও বছরে দুইটা ঈদে পাড়ার অন্য ছেলেদের সাথে আমার বা আমার পরিবারের পার্থক্য স্পষ্ট প্রতীয়মান হতো!
কারন, ঈদের পর ঈদ চলে যেত তবে প্রয়োজন ছাড়া কখনো উৎসব বা বিলাসিতার জন্য কাপড়-চোপড় কেনা হয়ে ওঠেনি! অবশ্য, একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবার কথা চিন্তা করে কখনো এটা নিয়ে রাগ অথবা আফসোস করিনি কিংবা পাড়া-প্রতিবেশি কাউকে বুঝতেও দিইনি!
এভাবেই বছরের পর বছর আমার কৈশরের ঈদ গেছে!
আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ভর্তির পর প্রথম ঈদের ছুটিতে (ঈদুল ফিতর) গ্রামে গেলাম। আহা!
পাড়া গ্রামের সবাই আমাকে কত সমাদর করে, ভালোবেসে কাছে আসে!
কি যে ভালোলাগছিল তখন! আমার এই ভালোলাগা বেশি দিন থাকেনি! সেবার ঈদে পরিবারের কারোর জন্যই কিছু কেনা হয়নি ।না হোক!
এই বিষয় টা আমার জন্য নতুন কিছুনা, তাই অত্যান্ত স্বাভাবিক ভাবে নিয়েই ঈদের দিন ঘরের কোনেই কেঁদে কাটিয়ে দিলাম! এমন অনেক ঈদ গেছে!
ভাবনাতে শুধু এটাই কাজ করতো- ‘’উপার্জন ক্ষম হলে নিশ্চয়ই সামনের দিন গুলোতে অনেক ভালো ভাবে ঈদ কাটাবো!
আর এখন? টাকা থাকলেও প্রয়োজনের বাইরে ঈদে নিজের জন্য কিছুই কিনিনা! অনেক হাহাকার ও অতৃপ্তি নিয়ে বাবা পরপারে চলে গেছেন। দোয়া ছাড়া তার জন্য কিছুই করার নেই। আর প্রত্যেক প্রবাসীর মত আমারও চেষ্টা নিরন্তর- যেন, পরিবারের লোকজন ভালো ভাবে ঈদ করতে পারে, কোনো অপূর্নতা বা আক্ষেপ যেন তাদেরকে স্পর্শ না করতে পারে!
অনেক ইচ্ছা ছিল এবার দেশে গিয়ে ঈদ করবো, সেই অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিয়েছিলাম কিন্তু সব পরিকল্পনা কারীরবড় পরিকল্পনা কারীতো ঐ সৃষ্টিকর্তা!
তিনিতো প্রবাসীদের প্রবাসে রেখেছেন- না খেয়েও বলতে যে খেয়েছি, কিছুনা কিনেও বলতে যে, কিনেছি!
বাসায় খাবার না থাকলেও বাহারি রকমের মনগড়া রেসিপি অবলীলায় বলতে! আহারে প্রবাসী, আহারে প্রবাস জীবনের ঈদ!