উদ্যোক্তা ঝিনাইদহের খোশনুর ইসলাম বনি’র এগিয়ে যাওয়ার গল্প
#ঝিনাইদহের চোখঃ
ঝিনাইদহের শৈলকূপার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা খোশনূর ইসলাম বনি, ঢাকার মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এবং কলেজ অফ হোম ইকোনমিক্সের শিল্পকলা ও সৃজনশীল শিক্ষা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন সফলতার সাথে। পড়াশোনায় বেশ মেধাবী এই শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি অভিনয় ও মার্শাল আর্টেও ছিলেন বেশ দক্ষ। রেড ক্রিসেন্ট, বি এন সি সি ও স্কাউটেউ বেশ সক্রিয় ছিলেন এই মেধাবী তরুণ শিক্ষার্থী ।
বর্তমানে বি’ইয়াহ, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, বিসিক, আহসানিয়া মিশন, এসএমই ফাউন্ডেশন, মহিলা সংস্থা, ই-ক্যাব, বেসিস, উইবিডি সহ নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা বেশকিছু সংস্থার সাথেও কাজ করছেন বহু গুণে গুণান্বিতা এই তরুণ উদ্যোক্তা।
নতুন কিছু করার আগ্রহ নিয়ে সামনে যা আসতো তাই করতেন বনি। রাত দিন সৃষ্টির উল্লাস, সবাইকে নিয়ে ভাল থাকার আকুল আকাঙ্ক্ষা, নতুন কিছু করার তীব্র তাড়না এবং উদ্যোক্তা হবার দৃঢ় প্রত্যয় ও প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান “বী ল্যান্ড হানি (BeeLand Honey)”।
বনি বিশ্বাস করেন, মেয়েরা জন্মগত ভাবেই উদ্যোক্তা। সেই ধারাবাহিকতায় গুণটা ছোট বেলা থেকেই পেয়েছেন তিনি। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় গয়াল গাছের ফল তুলে মালা বানিয়ে দুই টাকা মূল্যে বাকিতে বিক্রি করেন প্রতিবেশী একটি মেয়ের কাছে। আমেরিকা প্রবাসী সেই মেয়ের কাছ থেকে দুই টাকা নেওয়া হয়নি আজও। নতুন কিছুর সৃষ্টি, নতুন কিছু করার আগ্রহ ও উদ্যোক্তা হবার তীব্র বাসনা জন্ম নেয় তখন থেকেই ।
মেয়ে মানেই শুধু জামা-কাপড়, জুয়েলারি বা কসমেটিক্স এর ব্যবসা, এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতেই ভিন্ন কিছু করার প্রচেষ্টায় গড়ে তোলেন “বী ল্যান্ড হানি (BeeLand Honey)”।
“বী ল্যান্ড হানি (BeeLand Honey)”র প্রতিষ্ঠা লগ্নে অনেকেই মন্তব্য করেছিল, তুমি মেয়ে মানুষ মধুর কি বুঝবা, অন্য কিছু করো। সেই কথায় কর্ণপাত না করে নিজের সিদ্ধান্তকে সম্মান করে দৃঢ় মনোবল ও সাহস নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করলেন কাজ। এখন বনির নিজস্ব চাক রয়েছে তিনশ’টিরও বেশী। আরো প্রায় দুই হাজার চাক বিভিন্ন প্রান্তে পরিচালনা করেন বনি।
জীবিত প্রাণি নিয়ে নাড়াচাড়া করার মধ্যে এক ধরনের আনন্দ অনুভব করেন বনি। বনি বলেন, আমি মৌমাছিকে অনুভব করি। মাঝে মাঝেই ওদের বাক্সের পাশে বসে থাকি। ওরা দূর থেকে মধু নিয়ে আসে। ওদের নিরন্তন কাজ করার প্রচেষ্টা দেখি। একটা যায় একটা আসে । রাতে যখন অনেক শব্দ করে ওরা গুণগুণ করে, ভাল লাগে আমার, আনন্দ হয় ভীষণ। বী ল্যান্ড নিয়ে কাজ করার প্রেরণা আরও বেড়ে যায়। মৌমাছিকে আরও ভালবাসতে ইচ্ছা করে।
আর এসব কিছু করতে যিনি সবথেকে বেশি উৎসাহ, উদ্দীপনা, অনুপ্রেরণা ও সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যান প্রতিনিয়ত তিনি খাইরুল ইসলাম (বাকুল), বনির বাবা। বনি বলেন, সারাজীবনে আমার সব কাজের হাতিয়ার বাবা। আমি কোন কাজ বুঝছি না, করতে পারছি না, করতে হবে মুখ দিয়ে উচ্চারণ করতে দেরি হয়েছে কিন্তু উৎসাহ নিয়ে কাজটা করতে দেরি হয়নি বাবার ।
বর্তমানে “বী ল্যান্ড হানি (BeeLand Honey)” কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা এবং “ন্যাট্টার হানি Nettare Honey)”র প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বনি।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় প্রতিটি প্রান্তে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ক্রেতার হাতে পৌঁছে যাচ্ছে বনির উৎপাদিত সুস্বাদু স্বাস্থ্যসম্মত মধু। অনলাইনের মাধ্যমেও বিক্রির ব্যবস্থা রেখেছেন। কোন একদিন হয়তো দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হবে বনির এই মধু।
কঠিনতা অর্জনেরই অংশ তাই কোন অর্জনই সহজে আসে না। থাকে নানান চড়াই উতরাই, নানান রকম বাঁধা। বনি মনে করেন, যে কাজে ভালোবাসা থাকে সে কাজের বাঁধা গুলো কখনোই বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না বেশিক্ষণ।
বাঁধার প্রাচীর তৈরি হয় ধ্বংস হওয়ার জন্যই। যারা এই প্রাচীর পেরিয়ে এগিয়ে যেতে পারেন তারাই হয়ে ওঠেন কালজয়ী। তারা মানব হৃদয়ে বেঁচে থাকেন অনন্তকাল।
কাজের প্রতি বনির যে ভালোবাসা তা অটুট থাকুক সর্বক্ষণ। সকল বাঁধাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্বপ্নের সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে যাক বনি। এগিয়ে যাক বনির “বী ল্যান্ড (BeeLand) ”। বনিদের হাত ধরে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ।