ঝিনাইদহ সদরটপ লিড

কাদায়ভরা রাস্তায় জনবিচ্ছিন্ন ঝিনাইদহের একটি গ্রাম

#মাজেদ রেজা বাঁধন, ঝিনাইদহের চোখঃ

তিন কিলো মিটার রাস্তা পাকা না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে রয়েছে ঝিনাইদহ সদরের ঘোড়শাল গ্রামের অধিবাসিরা। কাচা রাস্তার কারনে বর্ষা মৌসমে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় অন্তসত্তা মা ও স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীসহ এই অঞ্চলের জনসাধারনের। ২৬, ৬২ এবং হাল রেকর্ডের ২৪ ফুট প্রশস্ত এই রাস্তাটি হ্যারিংবোন বা পাকাকরন তো দুরের কথা মাটি দ্বারা প্রয়োজনীয় সং¯কার করার অভাবে বর্ষা মৌসুমে চলাচলের একেবারেই অযোগ্য থাকে প্রত্যেক বছরের ৩/৪ মাস। শুষ্ক মৌসুমেও রাস্তাটির কাদা শুকিয়ে থাকার কারনে চলাচল সহজতর হয়না তাই এই রাস্তাটির কারনে অভিসপ্ত জীবন যাপন করতে হচ্ছে এই জনপদের বাসিন্দাদেরকে।

মাত্র ৩ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরনের অভাবে বর্ষার মৌসুমে জনজীবন প্রায় স্থবির হয়ে যায় ঝিনাইদহ সদরের ১৪নং ঘোড়শাল ইউনিয়নের খোদ ঘোড়শাল গ্রামের বাসিন্দাদেরসহ প্রতিবেশি গ্রামগুলোর জনগনের। দীর্ঘদিন কোন সংস্কার না করায় এই কাচা রাস্তাটি বর্ষা মৌসুমে একেবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে যায়। রাস্তার মাটি এঁটেল হওয়ায় এবং ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার চলাচল করায় পায়ে হেঁটে চলাচল প্রায় সম্ভব হয়ে ওঠেছে এই রাস্তা দিয়ে। বর্তমানে এই রাস্তায় স্থান ভেদে তিন থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত কাদার গভিরতা আছে। একটি দাখিল মাদ্রাসা ব্যতিত এই গ্রামে কোন মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই সেটাও কাচা রাস্তা সংলগ্ন। শুধু কাদার কারনে ইচ্ছা থাকলেও পার্শবর্তী স্কুলে বা কলেজে যেতে পারছে না এই গ্রামের ছাত্র ছাত্রীরা তাই বাধ্য হয়েই গ্রামের মাদ্রাসাতে ভর্তি হতে হয়। এই মাদ্রাসার সামনেও হাঁটু সমান কাদা থাকার কারনে কাদা মাড়িয়ে জুতা হাতে করে মাদ্রাসায় আসতে হয় তাই বর্ষার মৌসুমে ছাত্রীরা একেবারেই ক্লাসে আসে না বলে জানায় মাদ্রাসার সহ সুপার। এই গ্রাম থেকে সবচেয়ে নিকটবর্তী তিন কিলোমিটার দুরে পাকা রাস্তা সংলগ্ন ঐতিহ্যবাহি বানিয়াবহু মাধ্যমিক বিদ্যালয়। সেখানে এই গ্রামের দুই একজন ছাত্র ভর্তি হয় বর্ষার মৌসুমে তাদের ক্লাস করা সম্ভব হয়না। ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানায় রাস্তায় অতিরিক্ত কাদার কারনে ছাত্র ছাত্রীরা আসতে পারে না দুই একজন যা আসে তারা লুঙ্গি পরে আসে তবে ছাত্রীরা একেবারেই আসতে পারে না।

বর্ষার মৌসুমে মাত্রাতিরিক্ত কাদার কারনে কোন ধরনের যানবাহনে এই রাস্তায় চলাচল সম্ভব নয়। তাই কোন আত্মীয় স্বজন এই গ্রামে আসতে চায় না। শুধু কাদার কারনে অনেকে এই গ্রামে ছেলেমেয়ে বিয়ে দিতে চায় না। গত মাসে মাগুরার আত্মীয়র বাড়িতে বাচ্চু মন্ডলের কন্যা খাদিজাকে দেখে বিয়ের প্রস্তাব দেয় মাগুরার এক প্রবাসী ছেলে। সেখান থেকেই ঠিক হয় বিয়ের দিন তারিখ। ২৬ জুলাই বাড়িতে চলে বিয়ের আয়োজন। মাগুরা থেকে বরসহ ৩০ জন বরযাত্রী আসে এই গ্রামে। বিয়ের গাড়ি এবং মটর সাইকেল গ্রাম থেকে তিন কিলোমিটার দুরে রেখে কাদা মাড়িয়ে মহিলা বরযত্রীদের বিয়ের বাড়িতে আসা সম্ভব হয়না বলে বিয়ে ভেঙ্গে যায় খাদিজার ।

গভীর রাতে প্রসব বেদনা ওঠলে রাস্তায় কাদার কারণে যানবাহন না থাকায় কাধে করে কাদা পার করে নিয়ে যেতে অন্তসত্তা মা ও গর্ভের শিশুর মৃত্যু হয় এই গ্রামের আরেক বাসিন্দা আরব আলী মন্ডলের প্রথম স্ত্রীর। তার দ্বিতীয় স্ত্রী বর্তমানে সন্তান স¤া¢বা। আরব আলী মন্ডলের অন্তসত্তা ২য় স্ত্রীর বলে রাস্তায় তো অনেক কাদা চলাচল করা যায় না,আমার সব সময় ভয় হয় আমার আবার কি হয়।

একজন কৃষক জানায় এই রাস্তার উভয় পাশে “কুড়ির বিল” এবং “ভোতনের” বিল নামে দুইটি বহু ফসলী মাঠ রয়েছে কিন্তু আমরা পাট চাষ করতে পারি না এই রাস্তার কাদার কারনে। এই রাস্তা দিয়ে কোন অবস্থাতেই পাট বহন করা সম্ভব নয় তাই আমাদের গ্রামের কোন চাষী পাট চাষ করতে পারে না, পাটের মৌসুমে বিশাল এই মাঠ দুইটির শত শত বিঘা জমি পতিত পরে থাকে।

এই রাস্তা সংস্কার এবং পাকাকরনের ব্যাপারে ঘোড়শাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদ পারভেজ নিলটন বলে যে কোন কারনেই হোক রাস্তাটি করা সম্ভব হয়নি তবে আশা করি এই অর্থ বছরের মধ্যে মাননীয় এমপি’র সহযোগীতার রাস্তাটি পাকা করা সম্ভব হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button