শৈলকুপা

২১শে পদক প্রাপ্ত কবি আজিজুর রহমানের শ্বশুরালয় ঝিনাইদহের শৈলকূপায়

#ঝিনাইদহের চোখঃ

একুশে পদক প্রাপ্ত কবি গীতিকার আজিজুর রহমানের (১৮অক্টোবর, ১৯১৪-১২ সেপ্টেম্বর,১৯৭৮) ৪১তম প্রয়াণ দিবস স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল বৃহষ্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর দি ওল্ড কুষ্টিয়া হাই স্কুলের কবি আজিজুর রহমান মিলনায়তনে মানবাধিকার নাট্য পরিষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় সভপতিত্ব করেন বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি এম মুশতাক হোসেন মাসুদ।

এসময় কবি স্মরণে বক্তব্য রাখেন প্রধান শিক্ষক গোলাম আজম, সহকারী প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম, সাংবাদিক হাসান আলী, এম এ কাইয়ুম বজলার রহমান প্রমুখ। শেষে কবির আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। বক্তারা বলেন, কবি আজিজুর রহমান প্রায় ৩ হাজারের অধিক গান লিখেছেন।

তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘ভবের নাট্যশালায় মানুষ চেনা দায় রে’, ‘কারো মনে তুমি দিও না আঘাত, সে আঘাত লাগে কাবার ঘরে’, ‘আকাশের ঐ মিটি মিটি তারার সাথে কইবো কথা, নাই বা তুমি এলে’, ‘পৃথিবীর এই পান্থশালায়, হায় পথ ভোলা কবি’, ‘আমি রূপনগরের রাজকন্যা রূপের জাদু এনেছি’, ‘বুঝি না মন যে দোলে বাঁশিরও সুরে’, ‘ দেখ ভেবে তুই মন, আপন চেয়ে পর ভালো’, ‘পলাশ ঢাকা কোকিল ডাকা আমারই দেশ ভাই রে’ প্রভৃতি।

এজাতীয় অসংখ্য আধুনিক বাংলা গানের গীতিকারের যথার্থ মূল্যায়ন না থাকায় আজ চরমভাবে অবহেলিত। দেশের সর্বোচ্চ সম্মান ‘একুশে পদক’ প্রাপ্ত কবি আজিজুর রহমানের মৃত্যুর ৪১ বছর পার হলেও সরকারিভাবে তার স্মৃতি সংরক্ষণ ও স্মৃতিচারণে নেয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ। অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে তার বাস্তুভিটা ও সমাহিত চত্বর। নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে তার সমাধিস্থলসহ সকল স্মৃতিময় স্থান ও কর্মকান্ড।

অথচ কবির লেখা জনপ্রিয় গানগুলো আজ সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই কবির গানগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়ার জন্য এবং প্রতিবছর সরকারিভাবে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে কবি আজিজুর রহমানের জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালনের জোর দাবি জানান এলাকাবাসী।

একুশে পদকধারী কবি, গীতিকার ও বেতার ব্যক্তিত্ব আজিজুর রহমান ১৯১৪ সালের ১৮ই জানুয়ারি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বশির উদ্দিন প্রামানিক, মাতার নাম সবুরুন নেছা। গড়াই নদীর নৈসর্গিক সৌন্দর্য তাকে সব সময় মোহিত করে রাখত।

১৩ বছর বয়সে, ১৯২৭ সালে তিনি পিতাকে হারান। উচ্চশিক্ষা লাভের ভাগ্য না থাকলেও প্রবল ইচ্ছা ও অনুসন্ধিৎসার ফলে বহু বিষয়ক পুস্তকাদি স্বগৃহে পাঠ করে তিনি একজন স্বশিক্ষিত ব্যক্তিতে পরিণত হন। সাহিত্যচর্চা শুরুর আগে নাটকে অভিনয়ে তার উৎসাহ ছিল বেশি। তিনি গড়ে তোলেন একটি নাট্যদল। নাট্যদলটি নাটক মঞ্চস্থ করত শিলাইদহের ঠাকুর বাড়িতে। এ কাজের জন্য সে সময় কুষ্টিয়ার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার সুনাম ও খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। সে কালের বিশিষ্ট অভিনেতা ধীরেন দত্ত, উপেশ ঠাকুরসহ বিভিন্ন নামিদামি অভিনেতারা অংশগ্রহণ করতেন তার নাট্যদলে। সমাজসেবায় কবি ছিলেন একজন নিবেদিত প্রাণ।

১৯৩১ সালে ১৭ বছর বয়সে কবি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার ফুলহরি গ্রামের এজহার শিকদারের মেয়ে ফজিলাতুন নেছাকে বিয়ে করেন। তিনি ৩ ছেলে ৪ মেয়ের জনক। ১৯৩৪ সালে তিনি তার পিতামহ চাঁদ প্রামানিকের নামে হরিপুর গ্রামে গড়ে তোলেন চাঁদ স্মৃতি পাঠাগার। এটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি পাঠাগার ছিল। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ বইয়ের খোঁজে আসতেন এই পাঠাগারে। তার সাংগঠনিক ক্ষমতা ছিল প্রবল।

তিনি একাধারে কুষ্টিয়া হাটশ হরিপুর ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, কুষ্টিয়া (নদীয়া) ফুড কমিটির সেক্রেটারি, বেঞ্চ অ্যান্ড কোর্ট ডিভিশনের চেয়ারম্যান, কুষ্টিয়া জেলা বোর্ড ও ডিস্ট্রিক্ট অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্যের পদও অলঙ্কৃত করেছিলেন। ছাত্র থাকাবস্থায় মুসলিম ছাত্র আন্দোলনেও ভূমিকা রেখেছেন এবং প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সদস্য মনোনীত হয়েছিলেন।

তিনি প্রায় ৩০০-এর উপরে কবিতা রচনা করেছেন। তার মধ্যে নৈশনগরী, মহানগরী, সান্ধ্যশহর, ফেরিওয়ালা, ফুটপাত, তেরশপঞ্চাশ, সোয়ারীঘাটের সন্ধ্যা, বুড়িগঙ্গার তীরে, পহেলা আষাঢ়, ঢাকাই রজনী, মোয়াজ্জিন, পরানপিয়া, উল্লেখযোগ্য।

এ কবিতাগুলো এক সময় নবযুগ, নবশক্তি, আনন্দবাজার পত্রিকা, শনিবারের চিঠি, সওগাত, মোহাম্মাদী, আজাদ, বুলবুল পত্রিকায় নিয়মিত ছাপা হতো। ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকা বেতারে প্রথমে অনিয়মিত এবং পরে নিয়মিতভাবে যোগ দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ বেতারে চাকরীতে বহাল ছিলেন। ১৯৭৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কবি আজিজুর রহমান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সে সময় তাকে ভর্তি করা হয় তৎকালীন ঢাকার পিজি হাসপাতালে। এর ৩ দিন পর ১২ সেপ্টেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button