জানা-অজানাটপ লিডদেখা-অদেখা

ঝিনাইদহে হারিয়ে যাচ্ছে জাতীয় ফুল শাপলা

মনজুর আলম, ঝিনাইদহের চোখঃ

ঝিনাইদহের খাল বিল, বাওড় নদী নালা থেকে জাতীয় ফুল শাপলা আজ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

জলাশয় গুলোর চিরচেনা রূপ হারিয়ে ওষুধি ও পুষ্ঠিগুনে সমৃদ্ধ ফুলটি এখন আর আগের মত চোখে পড়ে না। সৌন্দর্য প্রেমী ও ক্যালেন্ডারের পাতায় স্থান করে নিয়েছে জাতীয় ফুল শাপলা।

খোঁজ নিয়েজানা গেছে, ঝিনাইদহে ১২ টি নদী রয়েছে যার আয়তন ১৬৪১.৭৫ হেক্টর, এছাড়া বিল ১০৪টি আয়তন ১৫৩৫ হেক্টর, ৩৫টি বাওড়ের আয়তন ১৮৮৯ হেক্টর, ৪৩টি খালের আয়তন ৩৫৯.৪০ হেক্টর এবং ২৭’হাজার ৬৪৯ টি পুকুরের আয়তন ৩৪৭৩.৪৩ হেক্টর। আর এই বিশাল জলাশয়ের কোন স্থানেই বর্তমানে জাতীয় শাপলা চোখে দেখা পড়ে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্ষা এলেই জলাশায় গুলোতে প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নেয় শাপলা ফুল। কিন্তু এখন আগের মত খাল বিল, বাওড়, নদী নালায় পানি থাকে না। এছাড়া বিল বাওড় গুলোতে বানিজ্যিক ভাবে লাভোবান হবার জন্য মাছ চাষ করা হচ্ছে। নানা প্রকার প্রযুক্তি, কিছু প্রকার রাক্ষুসে মাছ চাষ করার জন্য গুল্ম লতার সাথে ফুলের লতাপাতা কচি অবস্থাতেই খেয়ে ফেলছে। ফলে কোন জলাশয়ে জন্মলেও অঙ্কুরের তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

জেলার মহেশপুরের যাদবপুরের বয়োবৃদ্ধ মুত্তালিব হোসেন জানান, বিলাঞ্চলের কম আয়ের অভাবি মানুষগুলো বিলের শাপলা তুলে ও মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করতো। যা আয় হত তা দিয়ে কোন রকম খেয়ে না খেয়ে জীবন চলতো। এছাড়া আমরা দেখেছি শাপলা মানুষের খাদ্যের তালিকায় সবজি হিসাবে চলতো।
একই গ্রামের শিক্ষিত যুবক সাইফুল ইসলাম বলেন, আজ ধ্বংস হয়ে গেছে খাল বিল নদী নালার জীবন চক্র। শুকনো মৌসুমে অধিকাংশ খাল বিল শুকিয়ে আবাদি জমিতে পরিনত হচ্ছে। ফলে শুধু জাতীয় ফুল শাপলা-ই নয়, দেশি প্রজারি মাছ ও নানা প্রকার জলজ প্রানী হারিয়ে যাচ্ছে। বর্ষা শেষ হলে হেমন্তের শিশির ভেজা রোদমাখা সকালে নানা প্রকার বাহারি রূপে, রঙের শাপলা ফুল জলুলি, জাগুসা, যাদবপুর ও আশপাশের বিল গুলোতে দেখা মিলতো। এমন দৃশ্য দেখতে প্রকৃতি প্রেমিরা ছুটে আসতো।

তিনি আরও বলেন, শুনেছি সাদা রঙের শাপলা সবজি এবং লাল রঙের শাপলা ওষুধি গুনে সমৃদ্ধ। আর ছোটদের কাছে শাপলা ফুল খুবই প্রিয়। অতিরিক্ত মাত্রায় রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার, জলবায়ু পুরবর্তন, অবৈধ দখলদার প্রভাবে সরকারি খাল বিল নদী নালা দখলে সংকীর্ণ এখন জলাশয়। কয়েক বছর আগেও অনেকে সৌন্দর্য বৃদ্ধিও জন্য পুকুরে শাপলা ফুল তৈরি করতো। এখন পুকুরে বিদেশি কার্প জাতিয় মাছ চাষের কারনে তার আর সম্ভব হচ্ছেনা। শাপলা চুলকানি, রক্ত আমশায়ের জন্য বেশ উপকারি। ডায়াবেটিস, বুক জ¦ালাপুড়া, লিভার, ইউরিনের সমস্যা এবং নারিদেহে লাল শাপলা খুবই উপকারি।

এবিষয়ে ঝিনাইদহ সদর বাজার গোপালপুরের মৎস চাষি জিয়াউর রহমান বলেন, এখন বানিজ্যিক ভাবে মাছ চাষের কারনে পুকুর বা বিল লিজ নিয়ে ভালো ভাবে পরিষ্কার করছে। তাছাড়া কোন কোন জায়গায় বিদেশি কার্প জাতীয় মাছ চাষের কারনে শাপলা জন্ম নিলেও তা ছোট থাকতেই নষ্ট হচ্ছে বা মাছে খেয়ে ফেলছে।
একই উপজেলার ডাকবাংলার আলামিন হোসেন বলেন, তিনি সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বাড়ির নিকট ছোট জলাশয়ে শাপলা, এক প্রকার সংরক্ষন করেছি। যা মহাসড়কের পাশে পথচারিরা দেখে কিছুটা হলেও তৃপ্তি অনুভব করেন। তাছাড়া নিজের তো আলাদা অনুভুতি রয়েছেই।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহের কৃষি বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জিএম আব্দুর রউফ বলেন, জেলায় নদী, খাল-বিল কম। যেগুলো আছে সেখানেও আবার সারা বছর পানি থাকেনা। তাছাড়া অনেক জায়গা ভরাট হচ্ছে, কিছু জায়গায় বানিজ্যিক ভাবে মাছ করছে। ফলে শাপলা জন্মানোর উপযুক্ত পরিবেশ বড়ই অভাব দেখা যাচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button