মাঠে-ময়দানে

ঝিনাইদহের বংকিরার ফুটবলের গৌরবজ্জল ইতিহাসের সন্ধান

আসিফ ইকবাল কাজল, ঝিনাইদহের চোখঃ

৬০ বছর আগে অজ পাড়া গাঁয়ে শক্তিশালী ফুটবল টিমের অস্তিত্ব ছিল কল্পনাতীত। সে সময় গ্রামাঞ্চলে ছিলনা তেমন আধুনিকতার ছাপ। খেলার মাঠ ও খেলায়াড়দের পোষাক খুব কম সংখ্যক গ্রামেই ছিল। কিন্তু এমন একটি গ্রামের সন্ধান মিলেছে যারা খালি পাঁয়ে একটি উপজেলা পর্যায়ের ফুটবল দলের সাথে খেলা করে রানার্সআপ হওয়ার নজীর তৈরী করেছিল। সেই গ্রামটির নাম বংকিরা। ১৯৫৯ সালে এমন একটি ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল “যাদবপুর যুব ফুটবল কমিটি”। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটী ইউনিয়নে যাদবপুর গ্রামটি অবস্থিত।

বাংলা ১৩৬৬ সালে ঝিনাইদহ সদরের বর্তমান সাধুহাটী (সাবেক মধুহাটী) ইউনিয়নের বংকিরা গ্রামের সাথে খেলা হয় ওয়াড়িয়া ফুটবল টিমের। ওয়াড়িয়া গ্রামে সে সময় ভাল মানের খেলোয়াড় না থাকায় তারা কোটচাঁদপুর উপজেলা ফুটবল দলের পুরো খেলোয়াড় নিয়ে আসেন। বংকিরা ফুটবল দলের ১১ জন খেলোয়াড় লুঙ্গি কাছা দিয়ে খালি পায়ে সে দিন মোকাবেলা করে কোটচাঁদপুর থেকে আসা ফুটবল একাদশকে। খেলায় বংকিরা ফুটবল টিম রানার্সআপ হয়েছিল।

সে সময় একটি পিতলের ট্রফি বংকিরা ফুটবল দলকে দেওয়া হয়েছিল। ৬০ বছর পর সেই ট্রফির সন্ধান মিলেছে। ট্রফিটি দেখতে অবিকল বিশ্বকাপ ট্রফির মতো। উপরের ঢাকনাটি খোলা যায়। তাতে ইচ্ছা করলে গরম চা বা পানি পান করা যায়। বংকিরা ফুটবল দলের সে সময়কার কোচ জালাল ডাক্তারসহ ৭ জন খেলোয়াড় মৃত্যুবরণ করেছেনে।

জালাল ডাক্তার পরবর্তীতে চুয়াডাঙ্গার খাড়াগোদা গ্রামে বসবাস শুরু করেন। বংকিরার মৃত ফুটবলাররা হলেন, মরহুম আইয়ুব হোসেন বিশ্বাস, আক্কাচ আলী বিশ্বাস, এরশাদ আলী মন্ডল, নবিছদ্দিন মন্ডল, বাবর আলী, ছাব্দার আলী বিশ্বাস ও গোলকিপার মনু মিয়া। খেলোয়াড়দের মধ্যে বেঁচেন আছে মাত্র ৪ জন। সেদিনের সেই খেলা নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করেছেন বংকিরা গ্রামের ফুটবলার আব্দুল খালেক বিশ্বাস, তোফাজ্জেল হোসেন, হবি বিশ্বস ও মোকাম্মেল হক মুকা। তারা জানান ওয়াড়িয়া গ্রামের পক্ষে সেদিন খেলেছিলেন কোটচাঁদপুর উপজেলা ফুটবল টিমের শামছুল হক ওরফে টাইগার, মশিয়ার রহমান ও মহেশপুরের মিয়া সুন্দরপুর গ্রামের জাফর চৌধুরী। তাদের অনেকেই হয়তো আজ বেঁেচ নেই। খালি পায়ে সেদিন বংকিরা ফুটবল টিম তুমুল প্রতিদ্বন্দি গড়ে তুলেছিলেন।

ট্রফিটি প্রথমে সাবেক ফুটবলার আব্দুল খালেক বিশ্বাস, আবু তালেব ও আমজাদ হোসেনের হাত ঘুরে এখন বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক হায়দার আলীর জোয়ারদারের বাড়িতে সংরক্ষিত আছে। হায়দার আলীর জোয়ারদার জানান, ১৯৪০ সাল থেকে বংকিরা গ্রামে ফুটবল খেলার চর্চা। সে সময় বংকিরা গ্রামের হিন্দু জমিদার ও পরবর্তীতে শামছুল হক মোল্লাসহ তার ভাই বংকিরা ফুটবল টিমকে পৃষ্ঠপোষকতা করতেন।

কোলকাতা থেকে তারা ফুটবলসহ খেলার সামগ্রী কিনে আনতেন। হায়দার আলীর জোয়ারদারে ভাষ্যমতে অর্ধশত বছরের আগে ঝিনাইদহের বংকিরা ছাড়া আর কোন গ্রামে এতো নিখুঁত ও ক্রীড়াশৈলী সমৃদ্ধ ফুটবল টিম ছিল না। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত বংকিরা ফুটবল একাদশ পুর্বসুরিদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে জেলার মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী ফটুবল একাদশে পরিণত হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button