কালীগঞ্জজানা-অজানাটপ লিড

শখ থেকে সফল ছাদ কৃষক সাংবাদিক সাবজাল

আরিফ মোল্ল্যা, ঝিনাইদহের চোখঃ

বসত বাড়িতে ঢুকতেই বড় বড় প্লাষ্টিকের পাত্রে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফলজ গাছ। আর ছাদে পায়রার খামার ঘিরে তৈরী করা হয়েছে বিষমুক্ত সবজি ও ঔষধী বাগানে। এ যেন শহুরে জীবনে গ্রামীণ স্বাদ লাভ। এমন কৃষিঘেরা বাড়িতে রুপান্তরিত করে আলোচনায় এসেছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক সাবজাল হোসেন। শহরের পৌর এলাকার ফয়লা মাষ্টারপাড়ার তার নিজের বাসাবাড়ির ছাদ ও বাসার চারপাশে সবজি আর নানা ধরনের ফলজ গাছ দেখে অনেকে ঝুঁকছেন ছাদ বাগানে। ফলে তিনি সারাজীবন কৃষি নির্ভর সাংবাদিকতায় ২ বার সন্মাননা লাভকারী তিনি এখন নিজেই পত্রিকার সংবাদে পরিণত হয়েছেন।

শনিবার বিকালে তার বাড়িতে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, বাসায় প্রবেশের পথের প্রথমেই নজরে আসে কয়েক জাতের আম, লেবু, মালটা, পেয়ারা, পেপে, কমলা, বিদেশী আমড়া, মেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ। এরই পাশে লাগানো লাউ, পুইশাক, করলা,আর সিমের টাল বা বান। আর ছাদে উঠতেই নজরে পড়ে প্রায় শতাধিক প্লাষ্টিক আর মাটির পাত্র যেখানে লাগানো হয়েছে লাউ,টমেটো,মরিচ, দেশি বিদেশী ধনিয়া, বেগুনসহ বিভিন্ন সবজির সতেজ গাছ। আর বেয়ে বেড়ানো লাউ গাছ ছাদের উপরের টালেই শোভা পাচ্ছে। শুধু তাই নয় একপাশে রয়েছে পুদিনা, কয়েক জাতের তুলসি, কালমেঘীসহ বেশ কিছু ঔষধী গাছ। তবে সবচেয়ে বেশি নজরে এসেছে অনেকগুলো দেশী বিদেশী জাতের পায়রা। এ পাখিগুলো ছাদের একপাশের একটি চাটাইয়ের ঘরের মধ্যে পায়রার ঘর বসিয়ে ছেড়ে পালন করছেন। পায়রার বিষ্টা শুকিয়ে গাছে প্রয়োগ করেন এতে কোন ধরনের রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না। আবার অনেকের নিকট থেকে জৈব সার এনে তার গাছগুলোতে দিয়ে থাকেন। তিনি জানান, পায়রাগুলো এমন পোশ মেনেছে ছাদে উঠতেই চারপাশ থেকে যে যার মত করে উড়ে এসে আশপাশে ঘুরছে। অবস্থাটা এমন পায়রাগুলো যেন সাংবাদিকের ঘেরাও করে খাবারের আাবেদন জানাচ্ছে। পায়রাগুলোর মায়ায় যেন বন্দি হয়েছেন সংবাদকর্মী সাবজাল হোসেন।

সহকর্মি সাংবাদিক সাবজাল হোসেন জানান, তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি সাংবাদিকতা করেন। পেশাগত কারনে তাকে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে ঘাটে যেতে হয়। তাড়াও তিনি মনে করেন কৃষক যখন হাসে তখন বাংলাদেশ হাসে । তাই সাংবাদিকতায় কৃষিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে কৃষকদেরকে উৎপাদনে উৎসাহিত করতে পত্রিকার পাতায় তুলে ধরার চেষ্টা করেন। তাছাড়াও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে গ্রামাঞ্চালের যে সকল কৃষক কৃষাণী কাজ করেন তাদের খবরটা অগ্রাধিকার দিয়ে কলম ধরার চেষ্টা করেন। তাদের সাথে সখ্যতা সৃষ্টির এক পর্যায়ে তিনি ছাদ কৃষিতে ঝুঁকেছেন। তাছাড়াও নিজের উদ্যোগে বিষমুক্ত নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করে খাওয়ার মজাটাই আলাদা। তিনি বলেন, এখন তাকে আর বাজার থেকে সবজি কিনতে হয় না। তিনি বিক্রিও করেন না। উল্টো আত্মীয় স্বজন ও শুভাকাঙ্খিদের তার উৎপাদিত নিরাপদ সবজি পাঠাচ্ছেন। পায়রার বিষয়ে তিনি জানান, ছাদে উঠলে যখন পায়রাগুলো উড়ে এসে হাত বা ঘাড়ের ওপর বসে তখন তাদের প্রতি ভালোবাসাটা অনেকগুণ বেড়ে যায়। তিনি আরও বলেন, কর্মব্যস্ততায় তিনি বেশি সময় পান না। ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে ঘন্টা দুয়েক তার ছাদ কৃষি আর পায়রাগুলোর জন্য সময় দেন। আর বাকি সময়ে পরিবারের অন্য সদস্যরা দেখে শুনে রাখে পাশাপাশি পরিচর্যাও করে থাকে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত কৃষক হেলাল উদ্দীনও তাকে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করে থাকেন।

কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি জামির হোসেন জানান, কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক সাবজাল হোসেন নিউজের কারনে এই উপজেলায় কৃষি সাংবাদিক হিসেবে বেশি পরিচিত। তিনি উপজেলার অনেক কৃষক,কৃষাণীদের উৎপাদন ও কৃষকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে দীর্ঘ সময় ধরে সংবাদপত্রে নিউজ করে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। এলাকার জৈব কৃষি যতদুর এগিয়েছে তার লেখনি বেশ কাজে লেগেছে। তিনি আরও বলেন,কৃষিতে ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে তার লেখনির জন্য ইতোমধ্যে জাপান ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হাঙ্গার ফ্রি প্রাইজ ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য নেটওয়ার্ক তাকে ২ বার সম্মাননা প্রদান করেছেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার জাহিদুল করিম জানান,কৃষি ও উন্নয়ন সাংবাদিকতার জন্য সাংবাদিক সাবজাল হোসেন বেশ আলোচিত। তিনি বলেন,কালীগঞ্জ উপজেলায় এখন ছাদ কৃষি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই উপজেলা শহরে কয়েকশ ব্যক্তি তাদের ছাদকে বাগানে রুপান্তর করে জৈব ও নিরাপদ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছে। যদি ছাদ কৃষিতে কারো সহযোগিতা লাগে তাহলে কৃষি অফিসকে জানালে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য আন্দোলনের নেতা ও জাপানভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হাঙ্গার ফ্রি ওয়াল্ডের কান্ট্রি ডিরেক্টর আতাউর রহমান মিটন জানান, অনেকে কৃষি নির্ভর সাংবাদিকতা করেন কিন্ত সাবজাল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে লেগে আছেন। জাপানভিত্তিক সংগঠন থেকে তিনি ২ বার বিশেষ সন্মাননা পেয়েছেন। সারাজীবন কৃষি রিপোর্ট করেছেন আর এখন নিজের বাসায় নিরাপদ খাদ্যের বিপ্লব ঘটিয়েছেন শুনতেই ভালো লাগছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button