টপ লিডদেখা-অদেখাহরিনাকুন্ডু

ঝিনাইদহে ইট ভাটায় কাঠ পোড়াতে ভাটার সঙ্গেই করাতকল

ঝিনাইদহের চোখঃ

ইটের ভাটায় কাঠ পোড়ানো যাবে না, সরকারের এমন কঠোর আইন থাকলেও ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার দখলপুর গ্রামে পাশাপাশি তিনটি ইট ভাটার সঙ্গেই রয়েছে তিনটি করাতকল। এই করাত কল থেকে কাঠ কেটে ভাটাই ব্যবহার করা হচ্ছে।

ভাটার মালিকরা অবশ্য দাবি করেছেন, এই করাত কলগুলো কাঠ ব্যবসায়ীদের, তারা কাঠ ভাটাই বিক্রি করছেন। সেই কাঠ ভাটাই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এই অবস্থা দীর্ঘ কয়েক বছর চললেও কারো কোনো পদক্ষেপ নেই।

ইট ভাটাগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সুত্রের মতে বিজলী ব্রিকস্ ও স্টোন ব্রিকস বছরে ৪৫ থেকে ৫০ লাখ ইট তৈরী করেন। দুইটি ভাটায় ৯০ থেকে ১ কোটি ইট তৈরী হয়। আর এই পরিমান ইট পোড়াতে তাদের কাঠের ব্যবহার করতে হয় আনুমানিক ১ লাখ মন কাঠ। এছাড়া এ বছর নতুন করে তৈরী হয়েছে রয়েল ব্রিকস্।

ব্যারেল চিমনীর এই ভাটায় পোড়ানো হবে আরো কমপক্ষে ৩০ লাখ মন ইট। এতেও কমপক্ষে ৩০ হাজার মন কাঠ পুড়বে। আর এই বিপুল পরিমান কাঠের সবই কাঠুরে দিয়ে দুর থেকে ফাঁড়াই করে আনতে হয়। যা ভাটা মালিকদের পক্ষে কষ্টকর হয়ে যায়। এই কারনে তারা ভাটার সঙ্গেই করাতকল স্থাপন করে নিয়েছেন। এই করাতকলে কাঠ কাটা হচ্ছে আর ভাটাই ব্যবহার হচ্ছে।

সরেজমিনে ভাটায় গিয়ে দেখা গেছে, হরিনাকুন্ডু-সাধুহাটি সড়কের পাশে দখলপুর গ্রামের মাঠে বিশাল জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত বিজলী ব্রিকস, স্টোন ব্রিকস্ ও রয়েল ব্রিকস্। এই তিনটি ভাটাই গোটা এলাকা জুড়েই রাখা হয়েছে কাঠ আর কাঠ। নানা প্রজাতির বড়-ছোট গাছ কেটে ফেলে রাখা হয়েছে। তিনটি ভাটার মাঝ দিয়ে জেলা সড়ক চলে গেছে। এই সড়কের দুই পাশে তিনটি ভাটা। যে ভাটাটি সড়কের পূর্বে সেই ভাটায় সড়কের পশ্চিম পাশের করাতকলে কাটা কাঠ ব্যবহার হচ্ছে। একই ভাবে পশ্চিমের ভাটাটিতে পূর্ব পাশের করাতকলের কাঠ ব্যবহার হচ্ছে। আর নতুন করে আরেকটি করাতকল বসানোর কাজ চলছে। করাতকল দু’টির চারিপাশে কাঠের স্তুপ। এই করাতকলে কাঠ ফাঁড়াই করা হচ্ছে আর তা ফেলা হচ্ছে ভাটায় চুলায়। জ্বালানি হিসেবে কাঠই তাদের ভরসা।

দখলপুর গ্রামের এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে জানান, বেশ কয়েক বছর এরা এভাবে ভাটার সঙ্গে করাতকল রেখে সেটাতে কাঠ কেটে ভাটায় ব্যবহার করছেন। প্রতি বছরই হাজার হাজার মন কাঠ ব্যবহার করা হয়। তিনি আরো জানান, বছর দুই পূর্বে স্টোন ব্রিকস্ এর ভেতরে থাকা করাতকল প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছিল। এবার তারা সড়কের অন্য পাশের করাতকল ব্যবহার করছেন। তিনি আরো জানান, যারা এই ভাটাগুলোর মালিক তারা স্থানিয় ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করতে পারেন না। যে কারনে তারা বড় বড় গাছ কেটে নিজেদের প্রয়োজন মতো ফাঁড়াই করে চুলায় ব্যবহার করছেন।

ভাটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পাশাপাশি এই তিনটি ব্রিকস কাঠের উপর নির্ভর করেই চলছে। এখানে কয়লার ব্যবহার হয় না। একটি ভাটায় বছরে আনুমানিক ৫০ হাজার মন কাঠের প্রয়োজন হয়। যা বিভিন্ন মাধ্যমে সংগ্রহ করেন। তিনি আরো জানান, এই গাছ ইচ্ছামতো ফাঁড়াই করে ভাটায় ব্যবহারের সুবিধার জন্য ভাটার সঙ্গেই করাতকল বসিয়ে নিয়েছেন।

এ ব্যাপারে স্টোন ব্রিকস্ এর মালিক মকবুল হোসেন জানান, করাতকল তারা স্থাপন করেননি। এগুলো কাঠ ব্যবসায়ীরা তাদের ভাটার কাছে স্থাপন করেছেন। তারা চুক্তিতে কাঠ নেন। যা ভাটাই ব্যবহার হয় বলে স্বীকার করেন। তিনি এটাও স্বীকার করেন ইতিপূর্বে তার ভাটায় করাতকল ছিল, যা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য তিনি নিজে স্থাপন না করে কাঠ ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে চুক্তিতে কাঠ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, কাঠের ব্যবহার ছাড়া ইট পোড়ানো কষ্টকর, তাই ব্যবহার করছেন। তবে ব্যবসাটি আর বেশি দিন করবেন না বলে জানান।

একই ভাবে রয়েল ব্রিকস্ এর মালিক ফারুক হোসেন জানান, তিনি ছোট ভাটা নতুন করে করেছেন। ভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে স্বীকার করে জানান, এছাড়া ব্যারেল চিমনীর ভাটা কিভাবে চালাবেন।

পরিবেশ ও জীবোবৈচিত্র সংরক্ষন কমিটির ঝিনাইদহ জেলা শাখার সভাপতি মাসুদ আহম্মদ জানান, ওই ভাটাগুলোর মালিকরা যে দুঃসাধ্য দেখিয়েছেন তা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। বিশেষ করে আইনের প্রতি তার বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখানোর বিষয়টি। তাদের এই ক্ষমতার উৎস্য কোথায় তা খুজে বের করা জরুরী। তিনি অবিলম্বে ভাটাগুলো বন্ধসহ মালিক পক্ষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। তিনি আরো বলেন, জেলার অন্য ভাটাগুলোতেও কয়লা ব্যবহারের কথা বলে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। সেগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের প্রতি তিনি দাবি জানান।

হরিনাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নাফিস সুলতানা জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রæত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button