ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগে-বিভাগে উষ্ণ অভ্যর্থনা নবাগতদের
অনি আতিকুর রহমান, ইবি, ঝিনাইদহের চোখঃ
দীর্ঘ ১২ বছরের নিরবচ্ছিন্ন অধ্যাবসায়। অতঃপর জ্ঞানের কিছ নতুন শাখায় আবারও টানা কয়েকমাস শিক্ষাগ্রহণ। নিজেকে পুরোদস্তুর প্রস্তুত করে এক ঘন্টার ভর্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ। যুদ্ধ জয়ী হয়ে শিক্ষাজীবনের প্রাথমিক স্বীকৃতি হিসেবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আসন অর্জন। এ যেন এক স্বপ্নের অনুভূতি। পাবলিকিয়ান মাত্রই এই স্বপ্নের সাথে পরিচিত। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে এমন প্রায় হাজার দুয়েক স্বপ্নপথিক তাদের স্থান করে নিয়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। রোববার শুরু হলো উচ্চশিক্ষাঙ্গণে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে পথচলা। বিভাগে বিভাগে নবাগত শিক্ষার্থীদের জানানো হলো উষ্ণ অভ্যর্থনা।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি অনুষদভুক্ত ৩৪টি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একযোগে ক্লাস শুরু হয়েছে রোববার। তবে আনুষ্ঠানিক ক্লাস শুরুর পূর্বে পরিবারের কনিষ্ঠ সদসদের বরণ করতে ভুল করেনি বিভাগগুলো। বাড়িতে নতুন অতিথি আগমনের পূর্বাভাসে যেমন সবাই উচ্ছ¡সিত থাকে; তেমনি রোববার সকাল থেকেই ইবি ক্যাম্পাসের অনুষদগুলোতে দেখা গেলো বাড়তি উচ্ছ¡াস। এছাড়া ক্যাম্পাসের প্রতিটি চত্ত¡রেও দেখা গেলো উৎসবের আমেজ। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ভ্রাম্যমান দোকানীদেরও বাড়তি প্রস্তুতি। পরিপাটি করে সাজানো দোকানগুলোতে মালও অন্যদিনের চেয়ে বেশী; পাছে নবীনদের কাছে একটু বেশী বিক্রির আশা।
রোববার সকাল সাড়ে ১১টা। ঘুরতে ঘুরতে ক্যাম্পাসস্থ রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের নিচতলায় বাংলা বিভাগের একটি কক্ষে দেখা মেলে কিছু নতুন মুখ। সামনের সারিতে বসে আছেন শিক্ষকগণ। সিনিয়র শিক্ষার্থীরা রজনীগন্ধার স্টিক হাতে তুলে দিয়ে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন বসে থাকা শিক্ষার্থীদের।
আজ এই একই দৃশ্য প্রায় প্রতিটি বিভাগের। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী ভাষা ও সাহিত্য, ইংরেজি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, আইন, অর্থনীতি, আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, লোকপ্রশাসন, মার্কেটিং, টুরিজম এান্ড হসপিটালিটি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আইসিটি, ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তিসহ প্রায় প্রতিটি বিভাগই বরণ করে নিয়েছে তাদের নবীনদের। সৌন্দর্য্যরে প্রতীক ফুল আর শুভসূচনায় মিষ্টিমুখ করানো হয়েছে তাদের।
এদিকে স্বপ্নের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের নাম লেখাতে পেরে উচ্ছ¡সিত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নবীন শিক্ষার্থীরা। যশোর থেকে আসা বাংলা বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী মাহমুদ জামান নিশান বলেন, আজকের দিনটি আমাদের জন্য খুব আনন্দের। আর বাংলা বিভাগের মত বিভাগে ভর্তি হতে পারাটা বাড়তি ভালোলাগার। এখান থেকে শিল্প-সংস্কৃতি-সাহিত্য ছাড়াও অনেক কিছু শেখার আছে আমাদের। আশা করি ক্যাম্পাস জীবনের পরবর্তী দিনগুলোও আজকের মতই সুন্দর যাবে।
আইন বিভাগে ভর্র্তি হওয়া মাছুরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসটা বেড়ে গেছে। মনে হচ্ছে, যেভাবে প্রতিযোতিগায় সফল হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি; এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবনের বাকি স্বপ্নগুলোও পূরণ করতে পারব।
এদিকে নবাগতদের পেয়ে উচ্ছ¡াস দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষার্থীদের মধ্যেও। হাশিম আমলা নামের মাস্টার্স পড়–য়া এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা একসময় নবীন ছিলাম, আজ প্রবীণ। আজকের নবীনরাও একদিন প্রবীণ হবে। আবারও আসবে নতুন, নবীন। এই চক্রাকারের মধ্যে একটা বিষয় অত্যন্ত মধুর; তা হলোÑ কিছু সম্পর্ক অতঃপর কিছু স্মৃতি। আর এই স্মৃতি থেকেই নতুন কিছু শেখা।
নবীনদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে ১৭৫ একরের সবুজ ক্যাম্পাস। নবীনে-প্রবীনে ক্যাম্পাসের প্রতিটি প্রাঙ্গন যেন হয়ে উঠেছে প্রাণচঞ্চল। আকাশছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে আসা নবাগতদের পদচারণায় উৎসবের আমেজ পুরো ক্যাম্পাসে। ডায়না চত্বর, আ¤্রকানন, মুক্তবাংলা, স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, লেকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ভবন যেন জেগে উঠেছে নতুনভাবে। নতুনদের স্বপ্নপূরণে আগামীর দিনগুলো পাথেয় হিসেবে কাজে লাগবে এমনটাই প্রত্যাশা ক্যাম্পাস সংশ্লিষ্ট সবার।
নবাগত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় ক্যাম্পাসে সকল ধরনের র্যাগিং ও মানসিক নির্যাতন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছেন কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া ক্যাম্পাসকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কর্মসূচিও হাতে নেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী বলেন, সম্পূর্ণ চাপমুক্ত ও ভারমুক্তভাবে মনের আনন্দে পড়াশোনা করার জন্য নবীনদের আমি আহŸান জানাই। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে নবাগতরা ক্যাম্পাসে অবাধে বিচরণ এবং জ্ঞানার্জন করতে পারবে।
প্রসঙ্গত, আগামী ৩ ফেব্রæয়ারী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে কেন্দ্রীয়ভাবে নবীণদের বরণ করার কথা রয়েছে।