নির্বাচন ও রাজনীতিপাঠকের কথা

জামাতে ইসলামী নতুন মোড়কে রাজনৈতিক মঞ্চে আসার চেষ্টা করছে—সাইদুল করিম মিন্টু

ঝিনাইদহের চোখঃ

করোনাভাইরাসের প্রকোপে যখন সারাবিশ্ব স্থবির হয়ে পড়েছে। যার কবোল থেকে বাদ যায়নি প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে দেশে স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামী থেকে বেরিয়ে আসা ও বহিষ্কৃতদের সমন্বয়ে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) নামের একটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। কিন্তু পাকিস্তানের দোসর, একাত্তরের মানবতা বিরোধী শক্তি আবার নতুন রূপে এদেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। যা এদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্য মোটেও স্বস্তিদায়ক সংবাদ নয়। কারণ তারা এদেশের স্বাধীনতা চাই নি। তারা এদেশের কল্যাণ চাই না।কৌশলগত কারণে নতুন মোড়কে রাজনৈতিক মঞ্চে আসার চেষ্টা করছে জামাতের ইসলামীর সাবেক নেতারা। এ যেন পুরান বোতলের মদ নতুন বোতলে স্থানান্তরের কারসাজি। তাই জামাত ইসলামী আর এবি পার্টি দুটি দলই জাতভাই। অর্থাৎ যেই লাউ সেই কদু।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য, সাবেক সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনিবআর) সাবেক চেয়ারম্যান এএফএম সোলাইমান চৌধুরীকে আহ্বায়ক এবং দল থেকে বহিষ্কৃত ছাত্রশবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জুকে সদস্যসচিব করে “আমার বাংলাদেশ পার্টি” নামের একটি নতুন দলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, অকার্যকর রাষ্ট্রের পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে “নতুন রাজনীতির” প্রয়োজনে এর আত্মপ্রকাশ ঘটানো হয়েছে।

গত শনিবার দুপুরে বিজয়নগরে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ঘোষনা করা হয়। ‘জন আকাঙ্খার বাংলাদেশ’ নামের রাজনৈতিক প্লাটফরম থেকেই এই নতুন দলের ঘোষনা আসলো।

জামায়াতে ইসলামী থেকে বহিস্কৃত দলটির মজলিসে শুরার সাবেক সদস্য ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি মজিুবর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে ‘জন আকাঙ্খার বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ হয় গতবছর ২৭ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে কয়েকমাসের মধ্যেই নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার ঘোষনা দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, কোনো তত্ব বা আদর্শের চর্চা করা হবে না। কোনো ধর্মভিত্তিক দল করা হবে না। মানুষের প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে রাজনীতি করা হবে। এ প্রেক্ষাপটে গত একবছর ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় সেমিনার, মতবিনিময়সভার মাধ্যমে দল গোছানার কাজটি করেন জন আকাঙ্খা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতারা।

সোলাইমান চৌধুরী চাকরি জীবনে রাষ্ট্রপতির সচিব, এনবিআরের চেয়ারম্যানসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। চাকরি থেকে অবসরের পর তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। তিনি দলটির কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য নির্বাচিত হন। এই দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় গতবছর ৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে ‘জন আকাঙ্খার বাংলাদেশ’-এর একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। এরপর জামায়াতের শীর্ষ পর্যায় থেকে তার সমালোচনা করা হয়। এ অবস্থায় গতবছর ১০ ডিসেম্বর তিনি জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেন এবং জন আকাঙ্খার বাংলাদেশের সঙ্গে পুরোপুরি সম্পৃক্ত হন।

এরআগে একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জামায়াতের ভূমিকার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে দলটির কেন্দ্রীয় সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক গতবছর ১৫ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করেন। তিনি বিদেশে থেকেই পদত্যাগ করেন। ঠিক একই সময়ে দলটির আরেক কেন্দ্রীয় নেতা মজলিসে শুরা সদস্য ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি মুজিবুর রহমান মঞ্জুকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। এছাড়াও মাঠ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা এরইমধ্যে জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেন। মাঠ পর্যায়ে কিছু কিছু নেতাকে দল থেকে বহিস্কারও করা হয়। পদত্যাগী ও বহিস্কৃতরা ‘জন আকাঙ্খার বাংলাদেশ’ সঙ্গে যুক্ত হন। তাদের সমন্বয়েই নতুন রাজনৈদিক দল গঠন করা হয়েছে। তবে এদের মধ্যে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আপাতত দলটির উপদেষ্টা পরিষদে থেকে কাজ করবেন বলে জানা গেছে।

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেকোনো দল ও মতের মানুষ নির্বিঘ্নে তাদের রাজনীতিচর্চা করার অধিকার রাখে। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধীর জামায়াতে ইসলামীর মতো মুক্তিযুদ্ধ ও সমাজ প্রগতি বিরুদ্ধ একটি দলের সাবেক নেতাকর্মীদের হাতে ভয়াবহ মহামারির সময়ে একটি দলের আত্মপ্রকাশ কখনোই সন্দেহের ঊর্ধ্বে যেতে পারে না। বিশেষত এই দলের প্রকাশ্য নেতাদের অনেকেই যেখানে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় শীর্ষ অভিযুক্তদের পক্ষে আইনি সহায়তার কাজে যুক্ত ছিলেন।

জামাতে ইসলামীর সাবেক এই নেতৃবৃন্দ কৌশলগত কারণে নতুন মোড়কে রাজনৈতিক মঞ্চে আসার চেষ্টা করছে। তারা গোপনে কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে আমার মনে হচ্ছে। সে ব্যাপারে সকল সচেতন মহলকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার মাধ্যমে এদেশকে আবার পাকিস্তান করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি দেশের মাটি থেকে বিলীন হয়ে যায় নি। তারা এদেশের স্বাধীনতার পতাকা পাকিস্তানের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য নতুন মোড়কে রাজনীতির মাঠে হাজির হয়েছে । কারণ তারা সুযোগের সন্ধানে আছে। তারা যতই মুখে এদেশের কল্যাণে কাজ করার কথা বলুক। তাদের বিশ্বাস নেয়। তারা সুযোগ পেলেই আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।

বিশ্বাস করি, জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদেশের মাটিতে স্বাধীনতা বিরোধী কোন পরাজিত শক্তিকে রাজনীতি করার সুযোগ দিবে না। পাকিস্তানের ভাবধারার রাজনৈতিক দলকে এদেশে রাজনীতি করার কোন সুযোগ নেই। কারণ তারা দেশের শত্রু, মানবতার শত্রু।

জামাত ইসলামী যতই মোড়ক পরিবর্তন করে রাজনীতির মাঠে আসার চেষ্টা করুক না কেন। তাদের বিষয়ে সরকার ও জনগনকে সজাগ থাকতে হবে। কোন ভাবেই তাদেরকে সু্যোগ দেওয়া দেওয়া যাবেনা। কারণ তাদেরকে সুযোগ দিলের ৭৫’এর ১৫ আগস্টের মতো নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটাতে পারে। তাই স্বাধীন দেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের কোন ভাবেই রাজনীতি করতে দেওয়া যেতে পারেনা।

জামাতে ইসলামীকে কখনো ইতিহাস ক্ষমা করবে না। তারা এখনো পাকিস্তানের আদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। তারা এদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। তাই যতই মোড়ক পরিবর্তন করে রাজনীতির মাঠে আসুক। তারা এদেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি হিসেবেই বিবেচিত হবে।

কথায় আছে, কুকুর লেজ ঘি দিয়ে টানলেও সোজা হয় না। তার লেজ বাঁকা হবেই। তাই জামাতে ইসলামীর থেকে পদত্যাগ করে এসে নতুন রাজনৈতিক দল করুক। ওই কুকুরের মতো তাদের পাকিস্তানের ভাবাদর্শ থেকেই যাবে। আর সুযোগ পেলেই নিজেদের সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের চেষ্টা করবে। বাংলাদেশকে বিষ বাষ্পে পরিণত করবে। তাই যতই মোড়ক পরিবর্তন করে রাজনীতির মাঠে আসুক তাদেরকে কোন ভাবেই বিশ্বাস করা যাবেনা।

লেখক
সাইদুল করিম মিন্টু
সাধারণ সম্পাদক
ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button