টপ লিডশৈলকুপা

৪ মাসের অন্ত:সত্বা শৈলকুপার কিশোরী লুকিয়ে, ধর্ষক ও সহযোগিরা বীরদর্পে এলাকায়

ঝিনাইদহের চোখ-
গর্ভে চার মাসের বাচ্চা নিয়ে এক কিশোরী যখন নিজ ঘরের মধ্যে মূখ লুকিয়ে রেখেছেন, তখন ধর্ষক ও তার সহযোগিরা মামলার আসামী হয়েও বীরদর্পে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। মাঝে মধ্যে ধর্ষিতার পরিবারের উপর চড়াও হয়ে মামলা মিটিয়ে নিতে চাপ দিচ্ছেন। তাদের এই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় দফায় দফায় লাঠিসোটা দিয়ে বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়েছে।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বড়বাড়ি-বগুড়া গ্রামে এ ঘটনাটি ।

অবশ্য ধর্ষিতা কিশোরী তার এই অবস্থার জন্য যাকে দায়ি করছেন ওই গ্রামের সায়ামত মোল্লার পুত্র মিলন মোল্লা মেয়েটিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, ঘটনাটিকে সামাজিক দ্বন্দে রুপ দেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনায় তার সঙ্গে গ্রামের আরো ৪ জনকে আসামী করে মামলা করা হয়েছে। এখন একটি পক্ষ বলছেন, তাদের সামাজিক দলে যোগ দিলে মামলা মিটিয়ে নেওয়া হবে। যেটা আদৌও সম্ভব নয় জানিয়ে বলেন, তাই তিনি মেয়েটিকে বিয়ে করে অন্যদের বাঁচাতে চান। কিন্তু তারা সকলকে ফাঁসাতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

সরেজমিনে বড়বাড়ি-বগুড়া গ্রামের ওই কিশোরীর বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার মা (ছদ্মনাম) আম্বিয়া বেগম (৫৪) এর সঙ্গে। তিনি জানান, এই গ্রামের মেয়ে তিনি। পাশ^বর্তী কুশবাড়িয়া গ্রামে তার বিয়ে হয়। তার দুইটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে (২২) বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে (ছদ্মনাম) রিজিয়া খাতুন (১৩) পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ালেখা করে। তিনি জানান, বড় মেয়ে জন্ম নেওয়ার পর তার স্বামী আরেকটি বিয়ে করেন। এরপর তিনি রাগ করে বাবার বাড়ি চলে আসেন। এখানে আসার পরও স্বামীর সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। এখানে আসতেন এবং খোজ খবর রাখতেন। এখানেই জন্ম হয় রিজিয়া খাতুনের।

মা আম্বিয়া বেগম আরো জানান, তিনি খুবই কষ্ট করে সংসার চালান। গ্রামের এক প্রতিবন্ধী নারী শাহিদা খাতুন (৫৫) এর সেবা করার কাজ করেন। মাসে ৫ শত টাকার চুক্তিতে তিনি এই কাজ করেন। তিনি জানান, অন্যদিনের মতো গত জুলাই মাসের ৫ তারিখ ওই নারীর বাড়ি যান তিনি। তার বাড়িতে মেয়ে রিজিয়া একাই ছিলেন। কাজ শেষে তিনি বাড়ি ফেরেন। বাড়িতে এসে তার মেয়েকে ঘরেই দেখতে পান। তবে তার আচরণ ভালো ছিল না। সবকিছুতে কেন যেন ভয় পাচ্ছিল। এভাবে এক মাস পেরিয়ে যায়। হঠাৎ একদিন দেখতে পান মেয়ে বার বার বমি করছে। এটা দেখে তার সন্দেহ হয়। তখন মেয়েকে প্রশ্ন করলে মেয়ে ভয়ে কিছু বলতে চাননি। পরে চাপাচাপি করলে বলেন, তাদের বাড়ির পাশের সামায়াত মোল্লার ছেলে মিলন মোল্লা (৩৫) জুলাই মাসের ৫ তারিখ ঘরে একা পেয়ে তাকে ধর্ষণ করেছে। এই কথা বলে সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে এবং জানায় একথা যানাজানি হলে তাদের মেরে ফেলবে। যে ভয়ে সে এতোদিন মুখ বন্ধ করে ছিল। তবে সারাক্ষণ চিন্তিত ও ভীত ছিল।

কিশোরী রিজিয়া খাতুন জানান, ঘটনার দিন সে ঘরের মধ্যে একা ঘুমিয়ে ছিল। এমন সময় মিলন মোল্লা তার ঘরের মধ্যে আসে। তাকে দেখে চিৎকার দিতে গেলে মুখ চেপে ধরেন। এরপর জোর করে তার সঙ্গে খারাপ কাজ করে। সে বাঁধা দিলেও নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি। সে আরো জানায়, মিলন মোল্লা যাবার সময় হুমকী দিয়ে যায় এই কথা কাউকে বললে মা-মেয়ে দু’জনকেই জবাই করে ফেলবে। যে ভয়ে সে কাউকে কিছু বলেনি। এখন মিলন মোল্লা বিয়ে করতে চাচ্ছে, কিন্তু এই বিয়েতে সে রাজি নয়। সে এই ধর্ষকের উপযুক্ত বিচার দাবি করেছে।

মা আম্বিয়া বেগম জানান, এই ঘটনা জানার পর তিনি মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখানে পরীক্ষা শেষে তার গর্ভের বাচ্চা নিশ্চিত হন। মেয়ের বয়স মাত্র ১৩ বছর হওয়ায় তিনি মেয়েকে নিয়ে চিন্তিত। গর্ভের বাচ্চাটি নিয়ে আছেন আরো বেশি চিন্তায়। কখন কি ঘটে তা নিয়ে সারাক্ষন আতংকে থাকেন। এই অবস্থায় সেপ্টেম্বর মাসের ১৩ তারিখ তিনি ঝিনাইদহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে একটি মামলা দায়ের করেন। যে মামলায় মিলন মোল্লাকে প্রধান আসামী করে এবং যারা তাকে সহযোগিতা করেছেএমন আরো ৪ জনকে আসামী করেছেন। আদালত তার আরজিটি এজাহার হিসেবে থানায় নথিভুক্ত করতে শৈলকুপা থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। পুলিশ এই নির্দেশ পেয়ে মামলাটি নথিভুক্ত করলেও আজো একজন আসামীও গ্রেপ্তার করতে পারেনি। উল্টো আসামীরা মাঝে মধ্যেই তাদের বাড়িতে এসে নানা ভাবে হুমকী দিয়ে যাচ্ছেন। মামলা মিটিয়ে না নিলে আরো বড় ক্ষতি হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে মিলন মোল্লা জানান, তার স্ত্রী মিতা মোল্লা মারা গেছে আনুমানিক ২ মাস হয়েছে। ১৪ বছর বয়সের একমাত্র ছেলেকে নিয়ে তিনি এখন পথে পথে। তিনি এই ঘটনার একটা সমাধান চান। এই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আরেক আসামী স্থানীয় বড়বাড়ী বগুড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ফরিদ মুন্সি জানান, তাকে সামাজিক ভাবে ক্ষতি করতে এই মামলা দেওয়া হয়েছে। তিনি এই ঘটনার কিছুই জানেন না।

এ বিষয়ে শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, আদালতের নির্দেশ পেয়ে তারা মামলাটি নথিভুক্ত করেন। এরপর আসামী গ্রেপ্তারে জোর চেষ্টা করছেন। আশা করছেন দ্রæত তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button