ধর্ম ও জীবন

নারীর যে অনন্য মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম

ঝিনাইদহের চোখঃ

আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে নারীদের অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের মর্যাদায় অনেক নসিহত করেছেন। নারীদের পরিপূর্ণ আত্মমর্যাদা দিয়ে ইসলাম যে বিশেষ দিক-নির্দেশনা তুলে ধরেছে, তার কিছু তুলে ধরা হলো-

বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে নারী দুনিয়াতে ৪টি কাজ যথাযথভাবে আদায় করবে, সে নারীর জন্য জান্নাতের ৮টি দরজাই খোলা থাকবে। কাজ ৪টি হলো-

– পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে।
– রমজানের রোজা রাখবে।
– স্বামীর আনুগত্য করবে। এবং
– লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে।

নারীর জন্য সতর্কবাণী

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের জন্য বিশেষ সর্তকর্তা বর্ণনা করেছেন-
– যেসব নারী সুগন্ধি ব্যবহার করে রাস্তায় বের হবে, কেয়ামতের দিন তাদেরকে জেনাকারীর কাতারে দাঁড় করানো হবে।

– আবার নারীদের পরচুলা (আলগা চুল) ব্যবহার এবং ব্রু প্ল্যাক করতেও নিষেধ করেছেন । ব্রু প্ল্যাক করলে নারীদের দৃষ্টি শক্তি লোপ পায়। পুরুষের জন্যও পরচুলা ও ব্রু প্ল্যাক করা নিষেধ।

নারীর পোশাক যেমন হবে

ইসলাম নারীদের জন্য শালীন ও মার্জিত রুচির পোশাক পরার দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। এমন কোনো পোশাক পরা যাবে না, যা পরলে কার্যত উলঙ্গই মনে হয়। পোশাকের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো মেনে চলা জরুরি। তাহলো-

– পুরো শরীর ঢেকে রাখা

নারীর সারা শরীর কাপড়ে ঢেকে রাখতে হবে। যদি কোনো নারী চেহারা খুলে রাখে তবে পর্দা হয়নি এ কথা বলা যাবে না। কেননা চেহারা ও দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত খোলা রাখার বিধান রয়েছে ইসলামে। তবে চেহারাও ঢেকে রাখা উত্তম। কেননা চেহারা হচ্ছে সৌন্দর্যের রাজধানী। চেহারা দেখলেই নারী সুন্দরী কিনা তা বুঝা যায়।

তবে বাইরে বের হলে কখনো পা উন্মুক্ত রাখা যাবে না। কেননা পা পর্দার অন্তর্ভূক্ত। নারীদের পা যেন দেখা না যায় স জন্য প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পায়ের নিচের দিকে এক হাত প্রয়োজন দুই হাত পর্যন্ত কাপড় ঝুলিয়ে রাখতে বলেছেন।

তবে ঘরে অবস্থানকালে নারী যে শালিন ও মার্জিত পোশাক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে সে পোশাকই পরবেন।

– নারীদের পোশাক হবে ঢিলেঢালা

পোশাক এমন ঢিলেঢালা হবে, যাতে নারীদের শরীরের কোনো আকৃতি প্রকাশ হয়ে না যায়। পোশাক হতে হবে শালীন ও নিরাপদ।

– পোশাক হবে মোটা কাপড়ের

এমন মোটা কাপড় পরা উচিত, যাতে কোনোভাবেই শরীর স্পষ্ট না হয়। অর্থাৎ কাপড়ের ভেতর দিয়ে শরীর, পশম কিংবা কোনো গোপনাঙ্গ বা আকৃতি প্রকাশ হয়ে না যায়।

– পুরুষের পোশাক হতে পারবে না

নারীরা তাদের জন্য নির্ধারিত পোশাক (ঢিলেঢালা সালোয়ার-কামিজ) পরবে। কোনোভাবেই শাড়ি কাপড় পরবে না। কারণ শাড়ি কাপড় পরলে তাতে সালোয়ার-কামিজের ন্যায় পর্দা রক্ষা হয় না।

বিশেষ করে পুরুষের অনুকরণে পুরুষের পোশাক পরা যাবে না। আবার পুরুষরাও নারীদের অনুকরণে পোশাক পরতে পারবে না।

নারীরা যেভাবে পরিবারের জন্য বরকতময়

ইসলাম নারীদের যে অধিকার ও মর্যাদা দিয়েছে দুনিয়ার অন্য কোনো ধর্ম এ অধিকার দেয়নি। ইসলামে কন্যা সন্তানের জন্মকে সবচেয়ে বড় বরকতের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
– কোনো ব্যক্তির যদি প্রথম সন্তান কন্যা হয় তবে বুঝতে হবে এ মেয়ে পরিবারের জন্য বরকতওয়ালা মেয়ে।
– কন্যা সন্তান যখন বড় হতে শুরু করে তখন এ কন্যা সন্তান তার ভাইয়ের জন্য বরকতময়।
– কন্যা যখন বিয়ের উপযুক্ত হয় তখন সে বাবার জন্য বরকতময়। কেননা বিশ্বনবি বলেছেন, দুই মেয়ের বাবা মানেই ২ জান্নাতের অধিকারী। আবার যদি তিন মেয়ে সন্তান জন্ম নেয় তবে সে ৩ জান্নাতের অধিকারী।

– বিয়ের পরে নারী যখন স্বামী কাছে যায় তখন সে স্বামীর জন্য বরকতময়। ওই স্বামী মহান আল্লাহর কাছে সেরা যে স্বামী তার স্ত্রীর কাছে সেরা। স্ত্রী যদি স্বামীকে ভালো বলে তবে স্বামী আল্লাহর কাছে ভালো হিসেবে পরিগণিত হয়। আর স্ত্রী যদি খারাপ বলে তবে সে ব্যক্তি আল্লাহর কাছেও খারাপ হিসেবে পরিগণিত হবে।

– স্বামী যদি স্ত্রীর হাতে হাত রাখে তবে তাদের উভয়ের হাতে সগিরা গোনাহ মাফ হয়ে যায়। আবার তারা যদি এক অপরের প্রতি ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকায় তবে তাদের চোখের সগিরা গোনাহ মাফ হয়ে যায়।

– স্বামী তার স্ত্রীর জন্য যেসব খরচ তার সবই আল্লাহর দরবারে তা সাদকা হিসেবে গণ্য হয়ে যায়।

– আবার কেনো নারী যখন গর্ভধারণ করে আর সুস্থভাবে সন্তান প্রসব করে তবে তার পায়ের নিচে তৈরি হয় সন্তানের জন্য বেহেশত। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা সন্তানের কাছে মায়ের মর্যাদা অনেক বাড়িয়ে দেন।

– আবার কোনো নারী যখন গর্ভধারণ করে। অতঃপর সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মারা যান, তখন সে নারী মৃত্যু আল্লাহর দরবারে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করে।

– আর নারী যখন মা হয়ে যায় তখন তার মর্যাদাও অনেক গুণে বেড়ে যায়। কেননা ইসলাম মায়ের মর্যাদা বাবার চেয়ে অনেক বেশি বাড়িয়ে দিয়েছেন। প্রমাণ হলো-

হাদিসে পাকে প্রিয় নবি মায়ের খেদমতের কথা তিন বার বলেছেন আর ৪র্থ বার বলেছেন বাবার খেদমতের কথা। তাইতো গীতিকার আপন মনে গেয়ে ওঠেন-

‘ওগো মা, তুমি এ ধরণীর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত
তোমারই পদতলে রয়েছে জান্নাত।’

এ সব কারণেই নারী জাতির সঙ্গে উত্তম আচরণ করতে হবে। আবার নারী জাতিকে উত্তম আচরণ শিক্ষা দিতে হবে। কেননা দুনিয়ার প্রতিটি নারীই তার সন্তানের জন্য প্রথম ও সার্বক্ষনিক বিশ্ববিদ্যালয়। নারী কাছেই সন্তান শিখে উত্তম আচরণ।

ইসলামের বিরুদ্ধে এ কথা ঠিক নয় যে-

ইসলাম নারীকে সঠিক মর্যাদা দেয়নি বরং ঠকিয়েছে। ইসলামের বিরুদ্ধে এ অপবাদের জবাব তাদের মাঝেই রয়েছে যারা এ অপবাদ দেয়।

ইসলাম নারীকে যে মর্যাদা দিয়েছে তা অনুধাব করতে হলে অতিতের ইউনানী সমাজে, রুমান সমাজে, ইয়াহুদি সমাজে, খ্রিস্টান সমাজে, বৌদ্ধ সমাজ, আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে তথা হিন্দু সমাজে নারী অবস্থানের দিকে তাকাতে হবে।

আর তখনই নারীর অধিকারের বিষয়ে ইসলাম যে পরিপূর্ণ মর্যাদা দিয়েছে তা ফুটে ওঠবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব নারীকে কুরআন-সুন্নাহর বিধান মেনে নিজেদের জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button