ঝিনাইদহ সদর

ঝিনাইদহে শীতে বাড়ছে শিশুদের রোগ-বালাই

ঝিনাইদহের চোখ-
নয় মাস বয়সী আয়ানের সর্দি-কাশির সঙ্গে ডায়রিয়া।গত কয়েকদিন ধরে ডায়রিয়া ভালো হচ্ছে না। তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন মা রুপালি খাতুন। তিনি বললেন, ‘বাচ্চাকে তো সাবধানেই রাখি। এরপরও শীত এলে একটু অসুখ-বিসুখ হয়ই।’ একই অবস্থা সিয়ামের। তিন বছর বয়সী এই শিশুও সর্দি-কাশিতে ভুগছে।

পৌষের হিমেল হাওয়ার সঙ্গে তীব্র শীতে কাবু হয়ে পড়েছে শিশুরা। এ কারণে তারা আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন রোগে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, শীতকালে কনকনে ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে বড়দের মতো শিশুরাও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে তাদের সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ার প্রকোপ রয়েছে।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) ডা. লিমন পারভেজ বলেন, শিশুদের শ্বাসকষ্টের সমস্যার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের জন্য এই চিকিৎসকের পরামর্শ হলো, দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। এর মাধ্যমে ডায়াগনোসিস করে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় তাকে। তিনি বললেন, শীতকালে সাধারণত শিশুদের সর্দি-কাশি ও ব্রংকিওলাইটিস রোগ বেশি হয়। এক্ষেত্রে শিশুর চিকিৎসা না হলে নিউমোনিয়া বেশি হয়। আমরা অভিভাবকদের এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার জন্য বলি। সর্দি-কাশি হলে তারা যেন খেয়াল রাখে,এর সঙ্গে জ্বর ও শিশুর পেট ওঠানামা বেড়ে যাচ্ছে কিনা।’

তিনি আরও বলেন, ‘শীতকালে নবজাতক শিশুর জন্য সবচেয়ে আরামের জায়গা হলো মায়ের কোল। মায়ের বুকেই শিশু সবচেয়ে বেশি নিরাপদ থাকে। এক্ষেত্রে যেসব মায়েরা গৃহিণী তাদের সন্তানরা বেশি সুবিধা পায়। তবে যারা কর্মজীবী তাদেরকে শিশুদের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হয় সবসময়।

ঝিনাইদহ শিশু হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডা. হাসান ফরিদ জামিল জানান, শীতকালে শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত রোগ বেশি হয়। সর্দি-কাশির সংক্রমণের কারণে ইনফ্লুয়েঞ্জা হতে পারে। আবার এগুলো বেড়ে গিয়ে ব্রংকিওলাইটিস থেকে নিউমোনিয়াও হয়। এ সময় শিশুদের অ্যাজমা বেড়ে যায়। ত্বকের সমস্যা ও অ্যালার্জি দেখা দেয়। একইসঙ্গে এই সময় শিশুদের প্রচুর ডায়রিয়া হয়।

ডা. হাসান ফরিদ জামিল আরো জানান, ‘হাসপাতালগুলোতে এখন প্রচুর ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হচ্ছে। এই শীতে শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি থাকে। কারও মলমূত্রের সঙ্গে রক্তও দেখা যায়। অনেক শিশু বমি করে। যেসব শিশুর ডায়রিয়া হালকা তাদের স্যালাইন দিচ্ছি আমরা। আবার জরুরি চিকিৎসার দরকার হলে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

তীব্র শীতে শিশুদের অসুস্থতার ক্ষেত্রে ডা. হাসান ফরিদ জামিলের পরামর্শ, বেশি বমি হলে স্যালাইন না খাইয়ে তাদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। তার কথায়, ‘সবচেয়ে বেশি অসুবিধা হয় এখনও অনেকে ওরস্যালাইন বানাতে শেখেননি। এ কারণে বেশি পানি দিয়ে কেউ বানিয়ে শিশুকে খাওয়ায়। অনেক সময় অর্ধেক প্যাকেট করে স্যালাইন বানায়। বাসায় তো প্যাকেটের অর্ধেক মাপ ঠিকমতো হয় না। তখন শিশুর জন্য এটা বেশি ঘন হয়ে যায়। তখন বিপদ হয়। এটা হলে হাইপারনেট্রিয়া হয়ে শিশুর মৃত্যুও হতে পারে। আমরা অভিভাবকদের পরামর্শ দেই, শিশুর জন্য যেন স্যালাইন ঠিকমতো বানানো হয়। প্যাকেটের নির্দেশিত পরিমাণ যেন ঠিক থাকে।’

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন,”নিউমোনিয়া রোগ তেমন একটা বাড়েনি কিন্তু ডায়রিয়ার প্রকোপ মোটামুটি বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৮/৯ জন করে রোগী ভর্তি হচ্ছে।আমরা ডায়রিয়া ওয়ার্ড আলাদ করে সেবা প্রদান করছি,আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ঔষধ মজুদ আছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button