মহেশপুর

ঝিনাইদহের নওদায় অজ্ঞাত রোগে পেঁপে চাষিরা আতংকিত

মনজুর আলম, ষ্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহের চোখ-
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কয়েকটি মাঠে পেঁপে গাছ অজ্ঞাত রোগে আক্রানত হয়ে, শেষ পর্যন্ত ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। আক্রান্ত গাছের পাতাগুলো প্রথম দিকে কুঁকড়ে জড়িয়ে আসছে। আক্রান্ত পাতার শিরাগুলো বের হয়ে আসছে। আক্রানত গাছগুলোর পাতা হলুদ রঙ ধারন করে রোগাক্রান্ত গাছে পরিনত হচ্ছে। তবে, কেন ! বা কি ? কারণে এমন অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে তা নিয়ে কৃষকদের মধ্যে আতংকিত ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। উপেজলার নওদা গ্রামের পেঁপে চাষিদো এমন পরিনতি বেশি সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামের অনেক পেঁপে চাষি তাদের জমির পেঁপে গাছ কেঁটে দিয়ে অন্য আবাদের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নওদা গ্রামের যোদোর বাগান মাঠে গেলে দেখা যায়, মাঠে অন্যান্য ফসলের তুলনায় পেঁপের আবাদ-ই বেশি রয়েছে। এখানকার কৃষকরা জানান, পেঁপে আবাদে খরচ ও পরিশ্রম কম হয়। বিক্রিতে কোন ঝামেলা নেই। ব্যপারীগণ বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যান। একবার গাছ লাগালে ঝড়ে না ভাঙলে বছর তিনেক ফল পাওয়া যায়। পরিশ্রম কম, মজুরী কম লাগে, চাহিদা ভালো, বিক্রিতে ঝামেলা নেই। কীটনাশক তেমন প্রয়োগ করতে হয়না, মাঝে মধ্যে সার প্রয়োগ করলেই ভালো পলন পাওয়া যাই। তবে এবছর পেঁপে বাগানে অজ্ঞাত রোগের আক্রমন দেখা যাচ্ছে। অনেকে পেঁপে বাগানের গাছগুলো কেটে অন্যবাদেও জন্য প্রস্তস্তি নিয়েছে।

নওদা গ্রামের যাদের পেঁপে গাছ কেটে অন্যবাদের জন্য তৈরি হয়েছেন তাদো মধ্যে রুবেল হোসেন, আব্দুর রব, শহিদুল ইসলাম, বজলুর রহমান, আশাদুল ইসলাম, মাহাবুব রহমান অন্যতম। কৃষকরা জানান, তারা ভালো চাষি আবাদ সর্ম্পেকেও বেশ ভালো ধারনা রাখেন। কিন্তু তাদের গাছগুলোতে পেঁপে ধরা শুরু হলে গাছগুলোর পাতা কুঁকড়ে হলুদ হল, এরপর গাছগুলোর পেঁপে পর্যন্ত বড় না হয়ে হলুদ হয়ে যায়। তারা সিন্ধান্ত নিয়ে গাছগুলো কেটে দিয়ে অন্যবাদের জন্য জমি তৈরি করেছেন।

পেঁপে আবাদে নিয়ে জানাজায়, পেঁপে ফল এবং সবজি হিসাবে অতিবলাভজনক অর্থকরী ফসল। পেঁপে একটি অতিপরিচিত সুসাধু ফল ও সবজি। পেঁপে গাছ লম্বা বোটাঁযুক্ত ছত্রাকার পাতা বেশ বড় হয়। লম্বা আকারে কান্ডের উপরি অংশে সজ্জিত থাকে। পেঁপে গাছ লম্বায় প্রায় তিন থেকে সাত ফুট হয়। কম বেশি সারা বছরই ফুল এবয় ফল পাওয়া যায়। পেঁপের কাচাঁ ফল দেখতে সবুজ, পাকা ফল হলুদ বা পীত রঙের। পেঁপে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ ফল। কাঁচা পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে পেপেইন নামক হজমকারী দ্রব্য থাকে। যা অজীর্ণ, কৃমি সংক্রমণ, আলসার, ত্বকে ঘা, কিডনি ও ক্যান্সার নিরাময়ে কাজ করে। এটি পথ্য হিসেবে ও ব্যবহার হয়। পেঁপে কাঁচা-পাকা দু ভাবেই খাওয়া যায়। তবে কাঁচা অবস্থায় সজি¦ এবং পাকলে ফল। পেঁপে চাষাবাদের জন্য গ্রীষ্মকালই ভালো সময়। এছাড়া সারা বছরই পেঁপে আবাদ করা যায়।

পেঁপের বিভিন্ন জাতের মধ্যে ঝিনাইদহে- যশোরি, কাশিপুরি, ছোট পেঁপে, শাহী পেঁপেসহ বিভিন্ন জাতের আবাদ করা হয়। তবে মাটির প্রকার ভেদে দোঁআশ ও বেলে দোঁআশ মাটি বেশি উপযোগি। পেঁপে আবাদের জন্য মাদা তৈরি করতে হয়। প্রতিটি মাদায় ৩ থেকে ৪টি করে চারা লাগাতে হয়। শীতকালে ১২-১৫ এবং গ্রীষ্মকালে ৬-৭ দিন পরপর সেচ দেওয়া ভালো। চারা রোপানের ২ মাসের মধ্যে গাছে ফুল আসতে শুরু করে। এসময় ১০-১৫টি গাছের জন্য একটি পুরুষ গাছ রখে দিতে হয়। পুরুষ গাছগুলো স্ত্রী গাছের তুলনায় উঁ”ু মাদায় রাখতে হয়। বীজ রোগে আক্রান্ত হলে চারা গজানোর পর পঁচে যায়। আর চারা আক্রান্ত হলে গাছের গোড়ায় বাদামি রঙের জলভেজা দাগের মত দেখায়। তখন বাতাস হলে সহজেই ঢলে পড়ে এবং গাছ মারা যায়। আর মোজাইক ভাইরাস হলে পাতায় সবুজ ও হলুদ রঙের দাগ দেখা যায়। পাতা খর্বাকৃত হয়। অনেক সময় পাতা সম্পূর্ণ কুঁকড়ে যায়। পাতার শিরাগুলো অপেক্ষাকৃত মোট হয়। গাছ আকারে ছোট হয় এবং ফলন কুমে যায়। এ রোগের ভাইরাস সাদা মাছি দ্বারা ঘাছ থেকে গাছে চড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও বিভিন্ন ভাবে আক্রান্ত হতে পারে।

উপজেলার নওদা গ্রামের অহিদুল ইসলাম জানান, তিনি দীর্ঘদিন যাবত পেঁপে আবাদ করে আসছেন। এবছর মাঠে অনেকের পেঁপেখেত অজানা রোগে আক্রান্ত হওয়ায় কেটে দিয়েছে। তারা অন্যবাদের দিকে গেছে। তার নিজেরও প্রায় চার বিঘা জমিতে পেঁপে আবাদ রয়েছে। তারও বেশ কিছু গাছ নষ্ট হয়েছে। তিনি ধারনা করছেন, বীজ বা জাতের সমস্যা অথবা ভাইরাসের কারনে এমনটা হতে পারে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান আলী জানান, উপজেলায় বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। তার মধ্যে পেঁপে আবাদ হয়েছে প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে। গাছের পাতা কুকড়ে বা জড়িয়ে গেলে ইমীটাফ এবং বোরন ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। অনেক সময় ভাইরাসের কারনে এমনটা হতে পারে। আগামীকাল সরেজমিন আক্রান্ত ক্ষেত দেখবেন বলে তিনি জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button