নির্বাচন ও রাজনীতি

৩১ বছর পর ঝিনাইদহ বিএনপির সম্মলন হতে যাচ্ছে

ঝিনাইদহের চোখ-
আগামী ২৮ মে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। দীর্ঘ ৩১ বছর পর সম্মেলন ঘিরে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে। এবারের সম্মেলনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন অ্যাডভোকেট এম এ মজিদ।

তবে সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদের জন্য লড়ছেন একাধিক নেতা।

১৯৯১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২৮ বছর জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন মসিউর রহমান। ২০১৯ সালের ২০ আগস্ট পুরোনো কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। গঠন করা হয় আহ্বায়ক কমিটি। আহ্বায়ক করা হয় এস এম মশিউরকে, আর সদস্য সচিব পদ পান এম এ মজিদ।

এতদিন স্থানীয় রাজনীতিতে মসিউর রহমানের যে কর্তৃত্ব ছিল, নতুন কমিটি গঠনের সঙ্গে সঙ্গে সেটা খোয়াতে পারেন বলে ধারণা স্থানীয় নেতাকর্মীদের। এই অবস্থায় সাবেক সভাপতি মসিউর ও তাঁর চাচাতো ভাই মজিদের মধ্যে দ্বন্দ্বের অবসান ঘটবে, নাকি নতুন মাত্রা যোগ হবে, সেই প্রশ্ন নেতাকর্মীদের।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২৩ মে রাত ৮টা পর্যন্ত জেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য দলীয় মনোনায়ন সংগ্রহের সময় ছিল। এই সময়ের মধ্যে সভাপতি পদে কেবল এমএ মজিদ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। ১৫ বছর পর সাধারণ সম্পাদক পদেও পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। ২০০৭ ও ২০১৬ সালে নির্বাচিত জেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মালেক ওই পদে ফিরছেন না। সেখানে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও পৌর কমিটির সাবেক সভাপতি জাহিদুজ্জামান মনা, থানা বিএনপির সভাপতি কামাল আজাদ পান্নু, পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুল মজিদ এবং আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও থানা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম।

সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন সাবেক জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আসিফ ইকবাল মাখন, পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাজান আলী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সাজেদুর রহমান পাপ্পু, জেলা জিয়া পরিষদের সভাপতি প্রভাষক কামাল উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক জাহাঙ্গীর হোসেন।

ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি প্রতিষ্ঠার সময় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে হাল ধরেন ছনু মাজমাদার ও অ্যাডভোকেট হাফিজউদ্দিন। এরপর আশির দশকের গোড়ার দিকে সাবেক সংসদ সদস্য এবাদত হোসেন মণ্ডল সভাপতি ও মসিউর রহমান সাধারণ সম্পাদক হন। নব্বইয়ের এরশাদবিরোধী আন্দোলনের শেষ দিকে এবাদত মণ্ডল জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনের পর দলের সভাপতি হন মসিউর ও সাধারণ সম্পাদক হন সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম শহিদুল ইসলাম মাস্টার। এরপর ২০০৭ ও ২০১৬ সালে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মসিউর ও আব্দুল মালেক। ২০১৯ সালে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের আগ পর্যন্ত বহাল ছিলেন তাঁরা।

২০১৮ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় ১০ বছরের দণ্ডাদেশ মাথা নিয়ে কারাগারে যান চারবারের সংসদ সদস্য মসিউর। পরে জামিন পান। তবে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেননি। ওই নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হন তাঁর চাচাতো ভাই এমএ মজিদ। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান থাকায় আইনি জটিলতায় এমএ মজিদের মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। এর আগে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মসিউরের ছেলে ডা. ঈব্রাহীম রহমান মনোনয়ন জমা দেন। আর তখন থেকেই দুই ভাইয়ের মধ্যে আধিপত্যের লড়াই শুরু।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর রবিউল ইসলাম লাবলুর দাবি, পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি গঠন হলে দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্বের অবসান হবে।

বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট এমএ মজিদ বলেন, ‘আমি বিএনপি করি এবং দলের সিদ্ধান্তে কাজ করি। সেই ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত রেষারেষির সুযোগ নেই।’

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, ‘গাছের পুরোনো পাতা ঝরে গিয়ে যেমন নতুন পাতা গজায়, তেমনি দলের প্রয়োজনে প্রবীণদের সরে গিয়ে তরুণদের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হবে, এটাই নিয়ম।’ তাঁর ভাষ্য, জিয়াউর রহমানের আদর্শের সৈনিক হিসেবে বিএনপি করেন তিনি। যতদিন বিএনপি আছে, ততদিন তিনিও আছেন। তাঁর সঙ্গে কারও বিরোধ নেই।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button