করোনায় বাড়ির ছাদে ছাদে ঘুড়ি উৎসব
ঝিনাইদহের চোখঃ
রাজধানীর যান্ত্রিক জীবনের শৈশব থেকে ঘুড়ি উড়ানোর চল প্রায় বিলীন হয়ে গিয়েছিল। তবে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস যেন নিয়ে এলো সেই চল। করোনার কারণে গৃহবন্দি জীবনে বাড়ির ছাদে ছাদে এখন বিকেল হলেই ঘুড়ি উড়াচ্ছে তরুণরা, সেই সাথে কিছু তরণীদের হাতে দেখা মিলছে নাটাইয়ের।
গত ২৪ মার্চ থেকে দেশব্যাপী ঘোষণা করা সাধারণ ছুটি ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। খুব প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশও আছে সরকারের পক্ষ থেকে। ঘরবন্দি মানুষের অনেকেই ঘরে থাকতে থাকতে হাফসে উঠেছেন। খুঁজে বেড়াচ্ছেন সময় কাটানোর পথ।
আধুনিক সভ্যতার কল্যাণে সিংহভাগ মানুষের হাতেই স্মার্টফোন। বেশির ভাগ মানুষই সময় কাটাচ্ছেন মোবাইল ফোনের নানা অ্যাপ্লিকেশনের সঙ্গে। তবে কিছুটা ভিন্নতাও আছে। কারণ আধুনিকতার ভাইরাস বাঙালিকে এখনও পুরোপুরি গ্রাস করতে পারিনি। যার প্রমাণ মেলে ঢাকার আকাশে।
প্রতিদিন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই ঢাকার আকাশ ছেয়ে যায় নানা রঙের ঘুড়িতে। ঘরে বসে অলস সময় কাটানো মানুষগুলো দৌঁড়ে যান নিজ নিজ বাসার ছাদে। হাতে তুলে নেন নাটাই-ঘুড়ি। সুতো ছাড়তে ছাড়তে অনেকেই আনমনে ঘুড়ি হয়ে আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছেন। খুঁজে বেড়াচ্ছেন বাঙালিয়ানা, কারও কারও চোখে ভেসে উঠছে শৈশবের হাজারো স্মৃতি।
যারা ঘুড়ি উড়াতে পারেন না বা সুযোগ নেই, তারা বাসার ছাদ থেকে দেখছেন অন্যদের ঘুড়ি ওড়ানো। প্রতিদিন কোভিড-১৯ আক্রান্ত ও ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা গুনতে গুনতে অনেকটা ক্লান্ত মানুষগুলোর চোখে-মুখে একটা আনন্দ বয়ে আনে এই ঘুড়িময় বিকেল। রঙিন ঘুড়ি মুগ্ধ করে ইট-পাথরের শহরে বন্দি মানুষগুলোকে।
ঘুুড়ি
ঘুুড়ি
ঢাকার বিভিন্ন এলাকার আকাশে দিকে তাকালে দেখা যায়, নানা রঙ, নানা ঢংয়ের ঘুড়ি উড়ছে। ঘুড়িগুলো যেন বাতাসের সঙ্গে খেলায় মেতেছে। কোনও কোনও ঘুড়ি মেঘ ছুতে চায়, কোনওটাবা সুদূর নীলাকাশ।
ঢাকার আকাশ জুড়ে শোভা পাওয়া এসব ঘুড়ির বেশির ভাগই ঘরে তৈরি। কেউ পলিথিন, কেউবা ঘুড়ি তৈরি করেছেন কাগজ দিয়ে। এখানেও আছে বৈচিত্র্য। পলিথিনের ঘুড়ির ক্ষেত্রে তাতে দেওয়া হচ্ছে নানান আকার। দূর থেকে মনে হতে পারে, কোনও এক অচেনা পাখি আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে।
আবার কাগজের ঘুড়ি তৈরিতে অনেকেই ব্যবহার করছেন রঙিন কাগজ। কেউবা তাতে আবার যুক্ত করছেন বাহারি নকশা।
এসব রঙ ও ঢংয়ের ঘুড়ি যারা উড়াচ্ছেন কেবল তারা আনন্দ পাচ্ছেন বা তাদের সময় কাটছে এমনটি নয়। ঘরবন্দি মানুষগুলো বারান্দা, জানালা, ছাদে দাঁড়িয়ে দেখছেন এসব ঘুড়ি। মনে করিয়ে দিচ্ছে ডানপিটে শৈশবের স্মৃতি।