সাফল্যের আরেক নাম ঝিনাইদহের শামীমা শাম্মী
ঝিনাইদহের চোখ-
শামীমা শাম্মী, ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার পল্লী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকার সরকারি বাঙলা কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার শেষ করেন। অধ্যায়ন অবস্থায় বিয়ে হয়ে যায় শাম্মীর।
অনার্স পড়াকালীন সময়ে শাম্মী এক কন্যা সন্তানের মা হন। সন্তান-সংসার, পড়ালেখা একসঙ্গে চালিয়েছেন তিনি। পড়ালেখা শেষ করে চাকরি করার ইচ্ছা ছিল না তার। তবে সবসময় মনে হতো কিছু একটা করি।
শাম্মী বলেন, ‘‘আমার মা সবসময় চাইতেন আমি কোনো একটা চাকরি করি। মা অনেক কষ্ট করে আমাদের বড় করেছেন। কারণ, ১০ বছর বয়সে আমি আমার বাবাকে হারাই। জীবনটাকে কাছ থেকে দেখেছি। তবে বাবাকে হারানোর পর মাকে দেখে মনে হতো প্রতিটি মেয়েরই কিছু করা দরকার। এজন্যই হয়তো মা বলতেন চাকরি করতে। তবে চাকরির দিকে খুব বেশি ঝোঁক না থাকায় তা হয়তো করা হয়নি। তবে আমি ছোটবেলা থেকেই একটু ফ্যাশন সচেতন ছিলাম। আর সব চেয়ে বেশি পছন্দ করতাম হাতের কাজের পোশাক।
আমার মনে আছে ছোটবেলায় দেখতাম গ্রামে মহিলারা সূচিশিল্পর কাজ করতো। আমিও মাকে না জানিয়ে একটা কাজ হাতে নিয়ে ছিলাম, মা খুব গালমন্দ করেছিল, পড়ালেখার ক্ষতি হবে দেখে। সূচিশিল্পর প্রতি তখন থেকেই একটা ভালো লাগা কাজ করতো। ফেসবুকে ২০২০ সালের জুলাই মাসের ১৮ তারিখে হঠাৎ উইমেন ই-কমার্স ফোরাম গ্রুপ ‘উই’র দেখা মেলে। কিছু দিন পর্যবেক্ষণ করার পর মনে হলো আমি যেন সোনার হরিণ পেলাম। আর এমন একটা প্ল্যাটফর্মের অপেক্ষায় ছিলাম। শুরুতে সবার পোস্ট পড়তাম আর লাইক-কমেন্ট করতাম। এরপর স্বামীকে বলি এই প্ল্যাটফর্মটির কথা। তিনি বলছেন তুমিও চাইলে শুরু করতে পারো।
আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন ওর মুখ থেকে এ কথাটাই শুনতে চাচ্ছিলাম। ওর সাপোর্ট ছিল আমার কাছে সবচেয়ে বড় সাপোর্ট। আমার স্বামীর দেওয়া হাতখরচের টাকা থেকে ১১,৫৫০ টাকা নিয়ে আমি কাজ শুরু করি গত সেপ্টেম্বর থেকে। শুরু করার কিছু দিনের ভেতরই আমার উই থেকে অর্ডার আসা শুরু হয়। বেশ কিছু প্রি-অর্ডারও পেয়ে যাই। সাড়ে চার মাসে আমার লাখ টাকার উপরে পণ্য বিক্রি হয়।
এখন আমার কাজের পরিধিও বেড়েছে। আমি যেহেতু হাতের কাজ মানে সূচিশিল্প নিয়ে কাজ করি, তাই এই কাজগুলো অনেক সময় সাপেক্ষ হয়। নিজের হাতে কাজ করে কাস্টমার যোগান দেওয়াটাও সম্ভব নয়। আমার কাজের ভেতর দিয়ে এখন বেশ কিছু নারীর কর্মসংস্থানও হয়েছে। এইটাও আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া, এতে সব নারী আত্মনির্ভরশীল হতে পারবে। আর একটা কথা না বললেই নয়, আমার ৬ বছরের ছোট মেয়েটাও এখন আমাকে কাজে সাহায্যে করে, মেয়েটাও চায় মা এগিয়ে যাক। ’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘আর যার কথা না বললেই নয়, তিনি হলেন আমার মেন্টর রাজিব আহমেদ স্যার। উনার পোস্ট সবসময় পড়ার চেষ্টা করি। তার অনুপ্রেরণামূলক পোস্টগুলো পড়েই মনে সাহস পেয়েছি। স্যার সবসময় যা বলেন, সবার জন্য সেইটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। উইর মতো প্ল্যাটফর্মটি তৈরি না করলে আজ আমার আমিটাই থাকতো না।
আরেকজন প্রিয় মানুষ, যিনি না থাকলে Shamima’s Boutique নামে ফেসবুক পেজ তৈরি করতে পারতাম না, তিনি হলেন উইর জননী নাসিমা আক্তার নিশা আপু। সত্যি তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো। এই প্ল্যাটফর্মটি হাজারো নারী উদ্যোক্তা তৈরি করেছে। আরো লাখো নারী উদ্যোক্তা তৈরি হবে এই প্ল্যাটফর্মটির হাত ধরে, এই প্রত্যাশা।’’