মাত্র ৪ লাখ টাকার অভাবে দৃষ্টিশক্তি হারাতে বসেছে ঝিনাইদহের তানভির
ঝিনাইদহের চোখ-
শিশু তানভির রহমানের মাথার টিউমার অপসারণ করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিউমারটি অপসারণ করেছেন। আর এই অস্ত্রোপচারের ব্যয় মেটাতে শিশুটির বাবা বসতভিটাটুকুও বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন শিশুটির দুই চোখের আলো ফেরাতে আরেকটি অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। কিন্তু টাকার অভাবে ছেলের চোখের আলো ফেরাতে পারছেন না বাবা।
তানভির রহমান (৯) ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের হাসিবুল হাসানের ছেলে। হাসিবুল হাসান জানান, ইয়াসমিন আক্তার নামের ১৪ বছরের একটা মেয়ে আছে তাঁর। তানভির জন্ম নেওয়ার দুই বছর পর তার মা শরিফা খাতুন সংসার ছেড়ে চলে যান। এরপর আরেকটি বিয়ে করেছেন হাসিবুল। কিন্তু তানভিরের জন্য সবকিছু বিক্রি করে দেওয়ায় সেই স্ত্রীও তাঁকে ছেড়ে চলে গেছেন।
হাসিবুল হাসান বলেন, প্রায় তিন বছর আগে তাঁর ছেলের হঠাৎ মাথায় যন্ত্রণা শুরু হয়। ক্রমেই তা বেড়ে শরীরের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। তিনি ঝিনাইদহ হাসপাতালে নিয়ে ডাক্তার দেখান। এরপর অবস্থা আরও খারাপ হলে ঢাকায় নেন। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হসপিটালে নিলে সেখানকার চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে তার মাথায় টিউমার শনাক্ত করেন। একসময় ছেলের চোখের আলো নিভে যায়। ২০১৯ সালের ১ আগস্ট শিশুটির মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়।
অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকেরা জানান, টিউমার অপসারণ করা হয়েছে, তবে চোখের দৃষ্টি ফেরাতে উন্নত চিকিৎসা করাতে হবে। আর এ জন্য ৪ লাখ টাকার প্রয়োজন। জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের দেখানো হয়েছে। সেখানকার চিকিৎসকেরা বলেছেন, তার চোখের চিকিৎসা করালেই আবার দেখতে পাবে।
বাবা হাসিবুল হাসান জানান, তিনি অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করে সংসার চালাতেন। ছেলের এ অবস্থায় গ্রামে থাকা টিনের চালার দুটি ঘরসহ ভিটাবাড়ির ৯ শতক জমি বিক্রি করেছেন। যেখানে আকমল হোসেন নামের একজন বসবাস করছেন। এই জমি বিক্রি থেকে পাওয়া ৩ লাখ আর মানুষের কাছে সাহায্য ও আত্মীয়স্বজনের দেওয়া মোট ৮ লাখ টাকা ব্যয় করে চিকিৎসা করিয়েছেন। এখন তিনি ঝিনাইদহ পৌর এলাকার ভুটিয়ারগাতি গ্রামে অন্যের জায়গায় একটি টিনের চালা করে সেখানে বসবাস করছেন। নিজে রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করে দিনে যা পান, তা দিয়ে সংসার চলে। বিক্রি করার মতো আর কিছু নেই। তাই টাকার অভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারছেন না।
ছবি তুলতে গেলে শিশু তানভির রহমান ঝিনাইদহের চোখ’কে বলে, ‘এখন আর আমার মাথায় ব্যথা নেই। কিন্তু দেখতে পারছি না।’ তার জিজ্ঞাসা, ‘আমি কি আর দেখতে পাব?’