কবর জিয়ারতে উপকার বেশি কার : মৃতব্যক্তির না জিয়ারতকারীর?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে প্রথমে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে আমি নির্দেশ দিচ্ছি। কারণ এ কবর জিয়ারত করলে তোমার মৃত্যুর কথা স্মরণ হবে।
প্রিয়নবির এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত কবর জিয়ারত করা জায়েয বা বৈধ। কবর জিয়ারত করার মধ্যে মৃতব্যক্তির চেয়ে জিয়ারতকারীরই লাভ বেশি। প্রথমত যার কবর জিয়ারত করা হয় তার লাভ।
জিয়ারতকারীর লাভ এ কারণে বেশি যে, একদিন কবর জিয়ারতকারীও এ কবরের অধিবাসী হবে। যখন সে কবর জিয়ারত করবে তখন তার কবর জিয়ারতের কথা স্মরণ হবে। যদি সে কোনো অন্যায় করে তবে তার দ্বারা সে অন্যায় সংঘটিত হবে না। আবার কবর জিয়ারতে দোয়ায় মৃতব্যক্তির পাশাপাশি নিজের জন্য দোয়া করা হয়।
জিয়ারতে পদ্ধতি
যখন তোমরা কবর জিয়ারত করতে যাবে, কিংবা কবরের পাশ দিয়ে হেঁটে বা যানবাহনে অতিক্রম করবে অথবা কোথাও কোনো কবর দেখবে, তখন কবরবাসীদের ওপর সালাম দাও।
আর কিভাবে সালাম দিতে হবে হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা শিখিয়েছেন। এ সালাম বা দোয়ায় শব্দের ভিন্নতা থাকতে পারে তবে উদ্দেশ্য ও অর্থ একই। যেমন-
– হজরত বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে এ দোয়া শিক্ষা দিতেন, যখন তারা কবর জিয়ারতে বের হতেন। আর তাহলো-
اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَ الْمُسْلِمِيْنَ وَ اِنَّا اِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَلَاحِقُوْنَ – نَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَ لَكُمُ الْعَافِيْة
উচ্চারণ : আসসালামু আলাইকুম আহলাদ দিয়ারি মিনাল মুমিনিনা ওয়াল মুসলিমিনা ওয়া ইন্না ইংশাআল্লাহু বিকুম লালাহিকুনা – নাসআলুল্লাহা লানা ও লাকুমুল আফিয়াহ।’
অর্থ : ‘হে কবরবাসী মুমিন মুসলমান! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আর যখন আল্লাহ চাইবেন, আমরাও অবশ্যই তোমাদের সঙ্গে মিলিত হবো। আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য শান্তি প্রার্থনা করছি।
– অন্য হাদিসে এসেছে-
اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ المُّؤْمِنِيْن اَنْتُمُ السَّابِقُوْنَ وَ نَحْنُ لَلَاحِقُوْنَ بِكُمْ اِنْ شَاءَ اللهُ – نَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَ لَكُمُ الْعَافِيْة
উচ্চারণ : আসসালামু আলাইকুম দারা ক্বাউমিম মুমিনিনা আংতুমুস সাবিকুনা ওয়া নাহনু লালাহিকুনা বিকুম ইংশাআল্লাহ – নাসআলুল্লাহা লানা ও লাকুমুল আফিয়াহ।’
অর্থ : ‘হে মুমিন কবরবাসী! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমরা এখানে (কবরে) আগে এসেছ। আর যখন আল্লাহ চাইবেন, আমরাও অবশ্যই তোমাদের সঙ্গে মিলিত হবো। আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য শান্তি প্রার্থনা করছি।
– এছাড়াও বহুল প্রচলিত কবর জিয়ারতের দোয়াটি এমন-
اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُوْرِاَنْتُمُ السَّابِقُوْنَ وَ نَحْنُ لَلَاحِقُوْنَ بِكُمْ اِنْ شَاءَ اللهُ – نَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَ لَكُمُ الْعَافِيْة
উচ্চারণ : আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুরি আংতুমুস সাবিকুনা ওয়া নাহনু লালাহিকুনা বিকুম ইংশাআল্লাহ – নাসআলুল্লাহা লানা ও লাকুমুল আফিয়াহ।’
অর্থ : ‘হে কবরবাসীরা তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমরা এখানে (কবরে) আগে এসেছ। আর যখন আল্লাহ চাইবেন, আমরাও অবশ্যই তোমাদের সঙ্গে মিলিত হবো। আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য শান্তি প্রার্থনা করছি।’
কবর জিয়ারতের এ কথাগুলোতে রয়েছে শান্তির কথা। মৃত ব্যক্তির শান্তির পাশাপাশি নিজের জন্য শান্তির দোয়াও রয়েছে এতে। এ দোয়া থেকে কবরবাসী যেমন উপকারিতা লাভ করবে, ঠিক তেমনি জিয়ারতকারী আরো বেশি উপকারিতা লাভ করবে।
মনে রাখতে হবে
এ দোয়া বা জিয়ারত যে শুধু কবরের পাশে দাঁড়িয়েই করতে হবে এমন নয়, বরং হেঁটে কিংবা যানবাহনে চলাফেরা করার সময় কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে এ দোয়ার মাধ্যমে জিয়ারত করা যায়। কবরের পাশে দাঁড়িয়েই এ দোয়া করতে হবে বা দাঁড়িয়ে থেকেই জিয়ারতে অংশগ্রহণ করতে হবে এমনটি নয়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রিয়নবির শেখানো পদ্ধতিতে কবর জিয়ারত করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণে নিজের ও মৃতব্যক্তির জন্য উল্লেখিত দোয়া পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।