প্রাথমিক শিক্ষকদের নিয়ে মন্ত্রণালয়ের কঠোর সিদ্ধান্ত

ঝিনাইদহের চোখঃ
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক উপস্থিতি বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। শিক্ষক উপস্থিতি না থাকার কারণে বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে দিনের পর দিন। যার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দেশে-বিদেশে। এ বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়েই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন বসানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল-হোসেন এ বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, প্রাথমিকের মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে শিক্ষকদের বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু করার বিষয়টিও অন্যতম।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এটি বাস্তবায়ন করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই)। শিক্ষকদের উপস্থিতির জন্য এটি কার্যকর হলে পর্যায়ক্রমে এটিকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হতেপারে। দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান নিয়ে বিশ্বের সর্ব বৃহৎ এনজিও ব্র্যাক ২০১৬ সালের প্রাথমিক শিক্ষা জরিপ প্রতিবেদন বলেছে, দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাংলা অঙ্ক ইংরেজিতে দুর্বল। মানসম্পন্ন শিক্ষক না থাকার কারণে ক্লাসরুমে পাঠদান হচ্ছে না। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন তারই প্রতিধ্বনি করে বলেছে, প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের যা শেখানো হচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয় এবং গুণগত মান ভালো নয়। দেশের প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলা পড়তে পারে। তা-ও তাদের পড়ার মান খুব খারাপ।
এ দু’টি প্রতিবেদন সম্পর্কে মন্ত্রণালয় ও ডিপিইর শীর্ষ কর্তা ব্যক্তিরা নয়া দিগন্তের সাথে আলাপকালে বলছেন, ক্লাসরুমে শিক্ষকদের অনুপস্থিতিই এর প্রধানতম কারণ। এ ছাড়া মানসম্পন্ন ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক সঙ্কটকেও দায়ী করছেন তারা।
মন্ত্রণালয় ও ডিপিইর কর্মকর্তারা বলছেন, এসব কারণে নতুন মন্ত্রী এবং নতুন সচিব দায়িত্ব গ্রহণের পরই বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার ব্যাপারে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছেন। সম্প্রতি নতুন মন্ত্রী ও সচিব নিজেরাই ঝটিকা পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষকদের উপস্থিতির বিষয়টিকে খতিয়ে দেখছেন। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পরিদর্শনের সময় শিক্ষকদের হাজির না পাওয়া কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত ডিসেম্বর মাসে মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত মাসিক সমন্বয় সভায় শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বায়োমেট্রিক হাজিরা যন্ত্র বসানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নিয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হলেও তার অগ্রগতি খুবই সামান্য বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এর কারণ সম্পর্কে মন্ত্রণালয় সূত্র বলছেন, ‘জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৯’ নিয়ে মন্ত্রণালয় ও ডিপিইর ব্যস্ততার কারণে এ উদ্যোগটি বেশির ভাগই থেমে গেছে।
জানা গেছে, সারা দেশে বর্তমানে ৬৫ হাজারের অধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ক’টি প্রতিষ্ঠানেই বায়োমেট্রিক হাজিরা যন্ত্র বসানো হবে। এ ব্যাপারে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার একাধিক দফায় বৈঠক হয়েছে। তাদের কাছ থেকে কোটেশন নেয়া হয়েছে এবং কোন যন্ত্রটি কেনা হচ্ছে বা হবে, তা-ও নির্ধারণ করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, প্রত্যেক প্রাথমিক বিদ্যালয় নিজেদের জন্য বরাদ্দকৃত স্লিপের অর্থ দিয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরার মেশিন ক্রয় করতে হবে। স্লিপের অর্থ দিয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরার মেশিন ক্রয় করার জন্য নীতিমালা পর্যালোচনা করে মাঠপর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হবে বলে ডিপিই থেকে জানানো হয়েছে।