শৈলকুপা

ঝিনাইদহের ইয়ামিন, বাংলা সংস্কৃতির বাহক

ঝিনাইদহের চোখঃ

শৈলকুপার তারুণ্যের অহংকার, লাঠির যাদুকর মোঃ ইয়ামিন আলী। বয়স ২৮ ।

ইয়ামিন আলী শৈলকুপার হাকিমপুর ইউনিয়নের নাগপাড়া গ্রামের মো আজাহার উদ্দীনের পুত্র। ইয়ামিন পেশায় ছাত্র। তিনি ফরিদপুর রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে বর্তমানে এম এ অধ্যয়ণরত। পাশাপাশি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রন্থাকার বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেছেন। ইয়ামিন আলী একজন লাঠিয়াল। লাঠির কসরত দেখিয়ে তিনি এখন এলাকায় সুপরিচিত।

বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির মধ্যে লাঠিখেলা একটি অন্যতম মাধ্যম। গ্রামের মানুষ অবসর সময়ে বিনোদনের উৎস হিসেবে লাঠিখেলার আয়োজন করতো, বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে লাঠির কসরত দেখিয়ে আবাল বৃদ্ধ বনিতার আনন্দ দেওয়ায় এর মুল উদ্দেশ্য। এতে গ্রামীন জনপদের মানুষ যেমন আনন্দ উপভোগ করে তেমনি এতে সকলের মধ্যে সৌহার্দ্য সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়।

এখনো গ্রামাঞ্চলে লাঠি খেলার প্রচলন থাকলেও সেটা নানা কারণে সংকুচিত হয়ে আসছে। রাজনৈতিক, সামাজিক হাঙ্গামা এর জন্য দায়ী। প্রাচীন এই সংস্কৃতি ঐতিহ্যের সাথে নতুন প্রজন্ম খুব একটা উৎসাহী নন। গ্রামের বয়োবৃদ্ধ মানুষগুলোই এর সাথে কিছুটা সম্পৃক্ত আছে। বর্তমানে নানা কারনে গ্রামে লাঠিখেলার আয়োজন খুব একটা চোখে না পড়লেও শহুরে মেলা, বা বিভিন্ন দিবস কেন্দ্রীক উৎসবে লাঠিখেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে।

ডিজিটাল এই যুগে যখন গ্রামীণ ঐতিহ্য, গ্রামীণ সংস্কৃতি হারিয়ে যেতে বসেছে তখন শিক্ষিত তরুন ইয়ামিন বেছে নিয়েছেন গ্রামীণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এই লাঠিখেলা। শৈলকুপায় তিনি এখন বেশ পরিচিত একজন লাঠিয়াল হিসেবে। বেশ কয়েক বছর ধরে পহেলা বৈশাখে শৈলকুপা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে লাঠিখেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে।

তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহম্মদ আলী প্রিন্স এর সময়ে ইয়ামিন আলী বয়োবৃদ্ধদের সাথে লাঠিখেলা দেখিয়ে নজরে আসেন। মুহম্মদ আলী প্রিন্স তাকে ভূয়সী প্রশংসা করেন এ থেকেই ইয়ামিন লাঠিখেলায় উৎসাহিত হয়ে উঠেন। তিনি এখন হয়ে উঠেছেন পুরোদস্তুর একজন লাঠিয়াল। যোগ দিয়েছেন কুষ্টিয়া লাঠিয়াল বাহিনীতে।

লাঠির যাদুকর ইয়ামিন বিভিন্ন মেলা, উৎসবে লাঠির কসরত দেখাতে নিজ জেলা ঝিনাইদহের গণ্ডি পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া, মাগুরা, ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা জেলায় পরিচিত হয়ে উঠেছেন। অনুষ্ঠান উৎসবে এখন প্রায়ই ডাক পড়ে ইয়ামিনের। তরুন এই লাঠিয়াল এসব মেলা বা উৎসবে লাঠির কসরত দেখিয়ে যেমন দর্শকদের আনন্দ দেন তেমনি গুণীজনদের সান্নিধ্য, বাহবা পেয়ে নিজেও স্বর্গীয় সুখ অনুভব করেন।

জেলা বা জেলার বাইরে আমন্ত্রিত হয়ে সেখানে লাঠির কসরত দেখিয়ে ইয়ামিন যখন নানা ভাবে প্রশংসিত হচ্ছেন এ দেখে গ্রামের অন্যান্য তরুনেরাও উৎসাহিত হচ্ছেন লাঠি খেলায়। ইয়ামিন মনে করেন- শিক্ষিত তরুন সমাজ যদি এ ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত হয় তাহলে সমাজ থেকে অপসংস্কৃতি দূর হবে, তরুন সমাজ মাদক, নেশামুক্ত জাতি হিসেবে গড়ে উঠবে।

তাই এই গ্রামীন সংস্কৃতি রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসা উচিৎ। শৈলকুপার তারুণ্যের অহংকার ইয়ামিন আলীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও তাঁর সুস্বাস্থ্য কামনা করি।

আগামীদিনে শৈলকুপার মুখ উজ্জ্বল করতে ইয়ামিনের মতো তরুনদের খুব প্রয়োজন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button