টপ লিডমাঠে-ময়দানে

বঙ্গবন্ধু জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপে ঝিনাইদহ-যশোর ফুটবল ম্যাচ গোল শূন্য ড্র

এলিস হক, ঝিনাইদহের চোখঃ

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ব্যবস্থাপনায় এবং ঝিনাইদহ জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের আয়োজনে আজ শনিবার ২৫শে জানুয়ারী ২০২০ বিকেল ৩টায় ঝিনাইদহ বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপ খেলা অনুুষ্ঠিত হয়।

স্বাগতিক ঝিনাইদহ ও প্রতিবেশি যশোর জেলা দলের মধ্যকার খেলাটি গোলশূন্য ড্র হয়েছে।

স্বাগতিক ঝিনাইদহ, যশোর, মাগুরা ও গোপালগঞ্জ জেলা দল নিয়ে বুড়িগঙ্গা অঞ্চল গঠন করেছে বাফুফে। আর সেই সুবাদে ঝিনাইদহ তাদের নিজেদের দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রতিবেশি যশোর জেলার বিপক্ষে মোকাবেলা করে। অনেক সুযোগ বাগে পেয়েও স্বাগতিক ঝিনাইদহ জেলা কাজে লাগাতে পারেনি।

উভয়ার্ধে সারা খেলায় স্বাগতিক ঝিনাইদহ ৬টি ও যশোর ১২টি আক্রমণ পরিকল্পনা করেছে। তার মধ্যে ঝিনাইদহের ৩টি ফুল চান্স, ২টি হাফ চান্স ও ১টি কাউন্টার এ্যাটাক পরিবেশন করেছে। অপরদিকে যশোর ৫টি ফুল চান্স, ৪টি হাফ চান্স ও ৩টি কাউন্টার এ্যাটাক চালিয়েছে। তুলনার বিচারে ঝিনাইদহের চেয়ে যশোর জেলা সারাক্ষণ নিজেদের মধ্যে বল দখলে রেখে খেলেছে।

আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে যশোর এগিয়েছিল। প্রথম আক্রমণ রচনা করে যশোরই। প্রথমার্ধে ২ মিনিটে যশোরের ৯ নম্বর খেলোয়াড় আশরাফুল ঝিনাইদহের বক্সে কিক নিয়েছিলেন। কিন্তু বলটি বল বারের উপর দিয়ে। ৬ মিনিটে যশোরের ১১ নম্বর খেলোয়াড় আওরঙজেবের পাস হতে ১০ নম্বর জার্সি কংকর বল মারেন। ততোক্ষণে ঝিনাইদহের অধিনায়ক টিটোন বল ক্লিয়ার করেন।

৯ মিনিটে পেনাল্টি বক্সের মাঝখান দিয়ে যশোরের কংকর গ্রাউন্ডার শট করেন। পোস্টের সামান্য উপর দিয়ে বল উড়ে যায়। ১৫ মিনিটে যশোরের আওরঙজেব হেড করলে বলটিকে ধরে ফেলেন ঝিনাইদহের গোলকিপার শিবলী আহমেদ সোহান। ঝিনাইদহের ১৬ নম্বর খেলোয়াড় লেফট ব্যাক শাকিল হোসেন বার বার বাঁ প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ রচনা করতে দেখা যায়।

১৮ মিনিটে ঝিনাইদহ জেলা দলের প্রথম আক্রমণ পরিকল্পনা করে। এই সময় বাঁদিকে উইং দিয়ে ঝিনাইদহের ১১ নম্বর খেলোয়াড় সাইফুল ইসলাম রিজনের মাইনাস করেন। আর সেখান হতে ১০ নম্বর ফরোয়ার্ড শাকিল আলী ক্রসবারের উপর দিয়ে বল চলে যায়।

২৪ মিনিটে ঝিনাইদহের শিবিরে পেনাল্টি বক্সের খুব কাছ দিয়ে ফাউল হলে যশোর দল ফ্রি কিক করার সুযোগ পায়। ১০ নম্বর কংকর ফ্রি কিক করেন। ফ্রি কিকের বলটিকে প্রতিহত করেন ঝিনাইদহের গোলকিপার সোহান।

২৮ মিনিটে ঝিনাইদহ দল পেনাল্টি বক্সের বাইরে হতে যশোরের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়েরা হ্যান্ডবল করেন। তাতে ফ্রি কিক লাভ করে ঝিনাইদহ। ৭ নম্বর খেলোয়াড় আবু সাঈদ কবিরের দেয়া ফ্রি কিক পোস্টের উপর বল উড়ে যায়।

৩৪ মিনিটে যশোরের ২ নম্বর জার্সি দলনায়ক খোকাবাবু ফ্রি কিক করেন। ক্রসবারের উপর বল চলে যায়। এর ৪ মিনিট পর ঝিনাইদহের ৪ নম্বর খেলোয়াড় উজ্জল হোসেন বক্সের বাইরে হতে বাম পায়ে চলন্ত বলে কিক নেন। আর তাতেই গোলকিপার সাইদুর যথেষ্ট আস্থার সাথে প্রতিহত করেন।

বিরতির পর উভয় দল বল নিয়ন্ত্রণে সমানে সমান দখল করে। দ্বিতীয়ার্ধে ৫৬ মিনিটে ঝিনাইদহের ৯ নম্বর খেলোয়াড় শিমন আহমেদ টিটো গোলের সুবর্ণ নষ্ট করেন। বল পেয়ে বাইরে মারেন। ৬১ মিনিটে যশোরের ৯ নম্বর আশরাফুল ডান প্রান্ত দিয়ে সরাসরি গোলে লব করেন। সেই বলটি ঝিনাইদহের ক্রসবারে বল লেগে ফেরত আসে। পরে আর গোল হয়নি।

দ্বিতীয়ার্ধে ৬২ মিনিটে কর্ণার কিক হতে জটলার সৃষ্টি হলে ঝিনাইদহের টিটো হাফভলি কিক করেন। গোললাইনে দাঁড়িয়ে যশোরের গোলকিপার সাইদুর রহমান বল রুখে দিয়ে দলকে বাঁচান।

৭৬ মিনিটে কর্ণার কিক হতে বল উড়ে আসে যশোর দলের রক্ষণভাগের ৩ নম্বর খেলোয়াড় আক্তার বাবুর কাছে। তার হাফভলি শট সেকেন্ড বার দিয়ে বাইরে বল চলে যায়।

৮১ মিনিটে যশোর ডানপ্রান্ত দিয়ে কাউন্টার এ্যাটাক করার সুযোগ পায়। যশোরের জাহিদ হাসান জনির পাস হতে কংকর বল যান। পেনাল্টি বক্সের মাঝখান দিয়ে অর্থাৎ বিপদজনক এলাকায় বল নিয়ে তিনি ভেতরে ঢোকেন। কিন্তু তাড়াহুড়ো করতে বল মেরে বাইরে পাঠান। ৮২ মিনিটে যশোরের খোকা বাবুর জোরালো হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

দ্বিতীয়ার্ধের শেষ ১০ মিনিটে উভয় দলের কাউন্টার এ্যাটাকের হিড়িক পড়ে যায়। তবে বেশির ভাগ আক্রমণ শানিয়েছে যশোর জেলা দল।

৮৬ মিনিটের সময় ঝিনাইদহের টিটো গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট করেন। তিনি কাউকে বল দিয়ে একাই বল কিক করেন। গোলপোস্টের সামান্য কয়েক ইঞ্চির উপর দিয়ে বল উড়ে যায়।

৮৮ মিনিটে শেষবারের মতো কাউন্টার এ্যাটাক করে যশোর দল। অন্তিম মুহূর্তে যশোরের বদলী খেলোয়াড় ১৭ নম্বর জার্সি কৌনিক আহমেদের কড়া শটটি ঝিনাইদহের গোলকিপার সোহান বাঁম দিকে ড্রাইভ দিয়ে বল সেভ করে নেন। এরপর আর গোলের মুখ দেখতে পারেনি উভয় দল।

শেষ পর্যন্ত নিষ্প্রাণ ও নিরুত্তাপ পরিবেশে স্বাগতিক ঝিনাইদহ ও প্রতিবেশি যশোর জেলা দল গোলশূন্য ড্র করে ১ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে।

প্রথম রাউন্ডে খেলা শুরু হয় গত ১৮ই জানুয়ারী ২০২০ তারিখে। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে প্রথম রাউন্ডের প্রথম লেগে মোকাবেল করেছিল স্বাগতিক ঝিনাইদহ ও প্রতিবেশি মাগুরার বিপক্ষে। সেখানে ঝিনাইদহের অধিনায়ক টিটোন ও টিটোর দেয়া ২-০ গোলে মাগুরাকে পরাজিত করে। আর ফিরতি ম্যাচে দ্বিতীয় লেগে গত ২২শে জানুয়ারী ২০২০ তারিখে মাগুরা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক মাগুরা ও ঝিনাইদহ ২-২ গোলে ড্র করেছিল। সেই সুবাদে দুই লেগের ফলাফল মিলিয়ে ঝিনাইদহ ৪-২ গোলে জয়লাভ করলো।

পক্ষান্তরে, যশোর জেলা দল গত ১৭ই জানুয়ারী ২০২০ তারিখে গোপালগঞ্জ স্টেডিয়ামে স্বাগতিক গোপালগঞ্জ ২-১ গোলে যশোরকে এবং গত ২৩শে জানুয়ারী তারিখে যশোর ২-০ গোলে গোপালগঞ্জকে হারিয়েছিল। দুিই লেগের ফলাফল মিলিয়ে যশোর ৩-২ গোলে জিতেছে গোপালগঞ্জের বিপক্ষে।

ঝিনাইদহ দলের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় দারুণ কৃতিত্বের পরিচয় দিলেও দলীয় ফরোয়ার্ড খেলোয়াড়েরা গোল করতে গিয়ে অর্থাৎ ফিনিশিং টাচে খেই হারিয়ে ফেলেন। দলীয় খেলার ক্ষেত্রে বলের আদান প্রদানে যথেষ্ট কৃতিত্বের ছাপ দেখান। মাঝমাঠে দলনায়ক টিটোন চমৎকার খেলেন। রাইট ব্যাক হৃদয় বার বার যশোরের আওরঙজেবকে সজাগ দৃষ্টি রাখেন এবং যার কারণে আওরঙজেব স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারেননি।

যশোর জেলা বার বার ডান প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ রচনা করতে সক্ষম হয় ঝিনাইদহের রক্ষণভাগের লেফটব্যাক শাকিল আলীকে ফাঁকি দিয়ে। এক্ষেত্রে লেফট ব্যাক শাকিল বল প্রতিহত করার কাছে সম্পূর্ণ নিষ্প্রভ ছিলেন। তবে যশোরের আশরাফুল ও জাহিদ পুরোদমে পরিশ্রম করে খেলেছেন।

হলুদ কার্ড : সরোয়ার তালুকদার (যশোর) ও শাকিল আলী (ঝিনাইদহ)

ঝিনাইদহ : গোলকিপার সোহান ১, টিটোন (অধিনায়ক) ৪, রিয়াজ কাজী ৩, হৃদয়, উজ্জল ৮, কবির ৭ (সহঅধিনায়ক), টিটো ৯ (নয়ন ১৪), শাকিল আলী ১০, রিজন ১১ (মঈন ১২), শাকিল ১৬ ও শুভ সর্দার ১৩।

কোচ : রেজাউল হাকিম (পিকুল)। ম্যানেজার : নাজমুল আলম (বাকী)।

যশোর : গোলকিপার সাইদুর ১, খোকাবাবু ২ (অধিনায়ক), রানা বিশ্বাস ৫, জাহিদ ৭, আশরাফুল ৯ (কৌনিক ১৭), কংকর ১০, আওরঙজেব ১১ (লিটন কুমার ৮) , পলাশ ১২, সরোয়ার ১৩, মেহেদী ২২ ও জাহিদ হোসেন ৪।

কোচ : সাব্বির আহমেদ পলাশ। ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম।

রেফারি : বদরুজ্জামান চুন্নু (মানিকগঞ্জ)। সহকারী রেফারি : আবদুর রহিম (মানিকগঞ্জ) ও আবু বাশার (মানিকগঞ্জ)। চতুর্থ সহকারী রেফারি : ফারুক হোসেন স্বপন (সাতক্ষীরা)।

ম্যাচ কমিশনার : আতিকউল্লাহ রাজু (ঝিনাইদহ)।

মাঠে উপস্থিত ছিলেন ঝিনাইদহ জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুজ্জামান ঝন্টু, ঝিনাইদহ জেলা রেফারি এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, ঝিনাইদহ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সিনিয়র নির্বাহী সদস্য জয়নাল আবেদীনসহ ঝিনাইদহ ডিএফএ’র অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ এবং অসংখ্য ক্রীড়ামোদীবৃন্দ।

আগামী ২৮শে জানুয়ারী ২০২০ তারিখে যশোর স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় লেগে খেলবে স্বাগতিক যশোর ও প্রতিবেশি ঝিনাইদহ জেলা ফুটবল দল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button