জানা-অজানাটপ লিডদেখা-অদেখামহেশপুর

মহেশপুরে ৩ কোটিরও বেশি বাজেটে নির্মিতি হচ্ছে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুরের বাড়ী

ঝিনাইদহের চোখ-

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার খর্দ্দ খালিশপুর গ্রামে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের বাড়ি। সম্প্রতি শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, চারতলা বিল্ডিং এর ফাউন্ডেশনের কাজ চলছে। বিশাল বাজেটের এই বাড়িটি পেয়ে খুশি বীরশ্রেষ্ঠের পরিবার। বাড়ির প্রতিটি ফ্লোরে থাকবে দুইটি ইউনিট।

৩ কোটিরও বেশি বাজেটে বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারের জন্য এই বাড়িটি নির্মিত হচ্ছে। ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগ নিয়ন্ত্রাধীন গত ২৬ অক্টোবর এই বাড়িটি তৈরির কাজ শুরু করেন স্থানীয় এক ঠিকাদার।

শহীদ সিপাহী বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ছিলেন চার ভাই ও দুই বোনের সবার বড়। গত ১৬ অক্টোবর মারা যান তার সেজো ভাই শুকুর আলী। এর দু’বছর আগে স্ট্রোক করে মারা যান ছোট ভাই ফজলুর রহমান। ২০০৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী মারা যান মা কায়দাছুন্নেছা। এখন জীবিত আছেন একমাত্র ভাই হামজুর রহমান ও দুই বোন। প্রতিমাসে সরকারের পক্ষ থেকে এই পরিবারকে ৩৫ হাজার টাকা ভাতা হিসাবে পাঁচটি হিসাব নম্বরে প্রদান করা হয়।

বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের মেজো ভাই হামজুর রহমান জানান, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন। অন্য কোন সরকারের আমলে আমরা এত সুযোগ-সুবিধা পাইনি।

বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারের দাবি, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান কলেজ ও স্মৃতি যাদুঘরের পাশে সরকারের পতিত ৩৭ বিঘা খাস জমি রয়েছে। এই জমিতে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ইকো পার্ক তৈরির দাবি জানান তারা। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশাফুর রহমান এই পার্কের কাজে শুরু করেন। ইতোমধ্যে বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারের পক্ষ থেকে তার মেজো ভাই হামজুর রহমান কমিউনিটি হাসপাতাল করার জন্য ক্রয়কৃত আট শতক জমি দান করেছেন।

মুক্তিযোদ্ধা হামিদুর রহমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগোনা জেলার চাপড়া থানার ডুমুরিয়া গ্রামে ১৯৫৩ সালে জন্ম গ্রহন করেন। বাবার নাম আক্কাছ আলী মন্ডল, মাতার নাম কায়ছুন্নেছা। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর তাদের পরিবার যশোরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার খোর্দ্দ খালিশপুর গ্রামে স্থানীয়ভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারী তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন। পরে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের দক্ষিণ পূর্বে কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই নামক স্থানে মুক্তি বাহিনীতে যোগ দেন। ২৮ অক্টোবর রাতে ধলইয়ের যুদ্ধে অসীম সাহসিকতা প্রদর্শণ করে এলএমজি চালনারত অবস্থায় শত্রুপক্ষের দুইজনকে ঘায়েল করেন। তিনি নিজেও শত্রুর গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন। পরে এই বীর সৈনিকের লাশ ধলই থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিলে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অন্তর্গত আমবাসা নামক স্থানে একটি মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকার আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরুপ তাকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করা হয়। সুদীর্ঘ ৩৬ বছর পর ২০০৭ সালের ১১ ডিসেম্বর হামিদুরের দেহাবশেষ বাংলাদেশে নিয়ে এসে ঢাকার শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করে বাংলাদেশ সরকার।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button