শৈলকুপা

ঝিনাইদহের সুমনের রাতে পড়াশোনার গল্প

ঝিনাইদহের চোখঃ

নাম সুমন। পড়ে সপ্তম শ্রেণীতে। বয়স হবে তেরো কিংবা চৌদ্দ। যে সময়ে ছেলেটির খেলার মাঠে থাকার কথা, সে বয়সে জীবিকার তাগিদে তাকে ঝুরি ভাজা বিক্রি করতে হয়। অন্য দশটি ছেলে-মেয়ে যখন মা-বাবার হাত ধরে ঘুরতে বের হয়, সে সময়টিতে তারই সমবয়সীদের কাছে তাকে বিক্রেতা সাজতে হয়। এই দৃশ্য হরহামেশাই দেখতে পাওয়া যায় কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।

ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছে সে। কারণ বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত তাকে ক্যাম্পাসেই পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীদের কাছে ঝুরি বিক্রি করে সে পরিবারকে সহযোগিতা করে থাকে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সুমন সবার ছোট। বড় ভাই ও মেজো বোনও পড়ালেখা করে। তবে দারিদ্র্যের কশাঘাতে তাদের নিয়তিও সুমনের মতো। ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা থানায় সুমনের বাড়ি। সুমনের পড়ালেখা করতে খুব ভালো লাগে। সে নিয়মিত স্কুলে যাওয়ার চেষ্টা করে। দিনের বেলা ঝুড়ি বিক্রি শেষে রাতে গিয়ে ক্লান্ত শরীরে পড়াশোনার টেবিলে বসে। কিছুটা পড়াশোনা করে ঘুমিয়ে পড়ে সে। সুমন বড় হয়ে পুলিশ হতে চায়। তার এই প্রত্যাশার কতটুকু পূরণ হবে সময় বলে দিবে। তবে ইচ্ছাশক্তির কাছে সুমন জিতে যাক এটাই কামনা করে অনেক শিক্ষার্থী।

আজ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দিনব্যাপী বইমেলা শুরু হয়েছে। যেখানে বিভিন্ন বিভাগ ও প্রকাশনী মিলে একুশটি স্টল স্থান পেয়েছে। বইমেলা উপলক্ষে ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পাশাপাশি বইপ্রেমীদের ভিড় বেড়ে গেছে। এই বিশেষ দিনগুলোতে সুমনের মুখে হাসির ঝলকানি দেখা যায়। কারণ বিশেষ দিনে ঝুরি ভাজা বিক্রি হয় বেশি। তবে এ হাসির মাঝে লুকিয়ে থাকে মর্মবেদনার কতকাহিনি। বইমেলায় সবাই খুব আগ্রহ সহকারে বই দেখছে ও ক্রয় করছে। সুমনের চোখও মাঝে মাঝে আটকে যাচ্ছে নতুন প্রচ্ছদে মোড়ানো বইয়ের দিকে। কিন্তু তা দেখতে পারছে না। কারণ সে মাথায় দারিদ্র্যের ঝুড়িটি বহন করছে। যে ঝুড়ির মূল্য দিয়ে সে তার পরিবারকে সহযোগিতা করে থাকে।

এরকম হাজারো সুমন দেশের মধ্যে ছড়িয়ে আছে। যাদের খবর নেওয়ার মানুষ হয়তো নেই। তবে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা সুমনকে খুব আদর ও স্নেহ করে। তাকে দেখলেই কাছে নিয়ে বেশি করে ঝুরি ভাজা নেয়। কারণ লোভনীয় শ্যামলা মুখটি অনেকের নজর কাড়ে। তার বিষয়ে বাংলা বিভাগের জি. কে সাদিক নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ছেলেটির শ্যামলা মুখটি দেখলেই মায়ায় পড়ে যাই। তবে আর্থিকভাবে আমি তাকে সহযোগিতা করতে পারিনা। তবে সবার সদিচ্ছাই পারে দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে তাকে মুক্তি দিয়ে অন্য দশটি ছেলে-মেয়ের মতো খেলার মাঠে ফেরাতে। ছোট্ট সুমনের মাথা থেকে দারিদ্র্যের ঝুড়িটি নামিয়ে জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত হোক এটাই প্রত্যাশা ও কামনা সকলের।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button